বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে গত কয়েকটি বছর ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। ২০২০ সালে ‘কোভিড ১৯’ নামের মহামারীর কবলে পর্যুদস্ত হয় বিশ্ব। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতি শতাব্দীতে একটি করে বড় মহামারীর আবির্ভাবের ধারা মেনেই কোভিড তার থাবা বসায়। প্রায় দু’বছর পর মহামারি থেকে সৃষ্ট সংকট শিগগিরই কাটিয়ে উঠতে চায় বিশ্ব। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ সেই আশাবাদকে অনেকটা ম্লান করে দেয়।
২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার কথিত সামরিক অভিযান শুরুর পর ভূরাজনীতির সব হিসাব কষতে হয় নতুন করে। আর ২০২৩ সালের শেষদিকে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার প্রেক্ষিতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরত হামলায় প্রতিদিন কয়েকশ’ মানুষ মারা যাচ্ছেন। পাশাপাশি, বিশ্বের নানা অঞ্চলের আকস্মিক যুদ্ধ-উন্মাদনা গভীর শঙ্কার আবহ তৈরি করেছে। সেই কৃষ্ণগহ্বরের রেখাপাতের মধ্যেই নতুন বছরের আবাহন গেয়েছেন বিশ্ববাসী
যুদ্ধের ডামাডোলে নতুন বছর
২০২৩ সালেও আমরা প্রবেশ করেছিলাম ইউক্রেন- রাশিয়ার তুমুল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সঙ্গে নিয়ে। বছরের প্রথমভাগে বিশ্ব রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে এই সংকট ঘিরে। বিশেষত বিশ্বের প্রধান দুটি গম রপ্তানিকারক দেশের মধ্যেকার যুদ্ধ কেন্দ্র করে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তাড়া করেছে বিশ্বকে। কিন্তু আফ্রিকার দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোতে কোটি মানুষের দুর্ভোগের কথা না ভেবে বরং পশ্চিম গোলার্ধ্বের কিছু দেশ যুদ্ধের দামামা জিইয়ে রেখেছে। তারা ইউক্রেনকে উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়াও ইউক্রেন যুদ্ধের আড়ালে পশ্চিমের সঙ্গে তার ছায়া-যুদ্ধ সাড়ম্বরে চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস বাহিনীর হামলা বিশ্বে আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্ম দেয়। গত বছরের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে চমক সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে চলছিল । মার্চ মাসেই চীনের মধ্যস্থতায় চিরবৈরী ইরান ও সৌদি আরব কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কয়েক মাসের মধ্যে উদ্যোগটি বাস্তবে রূপান্তরিতও হয়।
আরো পড়ুন : জাতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অন্যদিকে, গত কয়েক বছরের বৈরিতা ভুলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ সাগ্রহে সিরিয়াকে আরব লিগে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণে বিশ্ববাসীর মনে একটি প্রতীতি জন্মে যে, বিশ্ব রাজনীতির অগ্নিগর্ভ স্থান মধ্যপ্রাচ্য নিঃসন্দেহে নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে। কিন্তু হামাসের আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে ইসরায়েল গাজায় ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর একটি হামলা পরিচালনা করছে। ফলে আগামী দিনের বিশ্ব নিয়ে সম্ভাবনার চেয়ে আশঙ্কাই যেন বেশি গাঢ় ।
নতুন সংকটে মধ্যপ্রাচ্য
৭ অক্টোবরের ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রনায়কেরা ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলে উড়ে গিয়ে নেতানিয়াহুকে সহানুভূতির নামে মদদ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের মারণাস্ত্র দিয়েছে। একই পরিমাণ অর্থসহায়তাও দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও ঠেকিয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেন-সংলগ্ন লোহিত সাগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌপথ। ২০২৩ সালের শেষ থেকে এ পথে বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালায় হুতি বিদ্রোহীরা । এরপর হুতি দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গত ১১ জানুয়ারি থেকে একাধিক দফায় যৌথ হামলা চালায় ইয়েমেনে । এমনিতেই ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের সমর্থক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করায় এই দীর্ঘ লড়াই শুরু হয়। যার জেরে ইয়েমেনে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের করুণতম মানবিক সংকট।
সেখানে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা এই মানবিক সংকটকে আরও সঙ্গীন করবে। তবু এটুকু সান্ত্বনা যে, গাজা ইস্যুতে গোটা বিশ্বে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে ভিন্নভাবে ভাবছেন। দেশে দেশে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। ২৯ ডিসেম্বর গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ নিয়ে ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’দিনের শুনানি ।
তবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের শিগগির অবসানের সম্ভাবনা অনেক বিশ্লেষকই দেখতে পাচ্ছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দাবি করেছিলেন যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ ধারণার বিরোধী নন। কিন্তু নেতানিয়াহু তা দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দেন। তিনি বরং জানিয়ে দেন যে, ইসরায়েলকে জর্ডান নদীর পশ্চিমের গোটা অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। উল্লেখ্য, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরও অন্তর্ভুক্ত।
গুরুত্বপূর্ণ জোটের বৈঠক ঘিরে আশাবাদ
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব রাজনীতির সর্বাধিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের একটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন। গ্লোবাল সাউথ অর্থাৎ বিশ্বের দক্ষিণের শক্তিশালী দেশগুলো— ভারত, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত এই গ্রুপ। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ব্রিকসের গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের সম্মেলনে ব্রিকসের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
ফলে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এতে যুক্ত হয়েছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অক্টোবরে রাশিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত এলাকা তাতারিস্তানের রাজধানী কাজানে পরবর্তী ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পশ্চিমা ব্লকের বাইরে গ্লোবাল সাউথের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে ব্রিকসের অগ্রগতি এবারও আগ্রহ জাগাবে নিঃসন্দেহে। আরেকটি বহুপাক্ষিক গ্রুপ হচ্ছে জি-২০।
ব্রিকস এবং জি-সেভেনের দেশগুলোও এর সদস্যভুক্ত। ২০২৩ সালে জি-২০-এর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতে । এ বৈঠকের প্রতিপাদ্যটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি ছিল— ‘এক পরিবার, এক বিশ্ব, এক ভবিষ্যৎ’। বৈঠকে চীন ও রাশিয়ার উপস্থিতিতেই একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করা হয়, যা একটি অনন্য ঘটনা। এ বছরের নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উনিশতম আয়োজন ।
এবারও একইভাবে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে এই গ্রুপের বৈঠকটি অন্যদিকে, জি-৭-এর ৫০তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী জুনে, ইতালিতে। আর জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত হবে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন ।
জি-৭ হলো একান্তভাবেই পশ্চিমা ব্লকের শীর্ষ রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব ফোরাম। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়টি থাকবে গোটা বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রে ।
ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীদের উত্থান
২০২২ সালে ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনি ক্ষমতায় এলে ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীদের পুনর্জাগরণ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। একই সময়ে সুইডেনের কট্টর ডানপন্থী দল ‘সুইডেন ডেমোক্রেটস’ ক্ষমতাসীন ডানপন্থী রাজনৈতিক জোটের শরিক হয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখছে। পরের মাসগুলোয় ফিনল্যান্ড এবং গ্রিসেও রক্ষণশীলদের বিজয় দেখা যায় । তবে জুলাইয়ে স্পেনের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী ভক্স ও রক্ষণশীল পপুলার পার্টির জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
পেদ্রো সানচেজের নেতৃত্বে প্রগতিশীল জোটের প্রত্যাবর্তন ঘটে । এর ঠিক তিন মাস পর একই চিত্র দেখা যায় পোল্যান্ডে। দেশটির ভোটাররা ডানপন্থী দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বে ক্ষমতায় বসে উদারপন্থী সরকার । তবে নেদারল্যান্ডসে গত নভেম্বরের নির্বাচনে কট্টরপন্থী ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) বিজয় আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ইউরোপে আরও ডানপন্থী রাজনৈতিক দৃশ্যপট কল্পনা করলে তার নীতিগত তাৎপর্য কেমন হবে?
প্রথমত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে । দ্বিতীয়টি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত। বন ধ্বংস এবং কৃষির মতো বৃহত্তর টেকসই বিষয়গুলোতে ডানপন্থীদের প্রতিরোধ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তিন নম্বর তাৎপর্যটি অভিবাসন প্রসঙ্গে। ডানপন্থী দলগুলো অনিয়মিত অভিবাসী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের চায় না। ফলে আরও বেশি ডানপন্থী দলের বিজয় মানে কঠোর অভিবাসন নীতি ।
বাড়বে সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি
আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আইআরসি (ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি) বলছে, ২০২৪ সালে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটে পড়বে অন্তত ২০টি দেশ। এই দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের আবাস। জাতিসংঘ গত অক্টোবরে জানায়, সারাবিশ্বে যুদ্ধ-সংঘাতে ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আইআরসি বলছে, সুদানে এপ্রিলে শুরু হওয়া সেনা সংঘাতের ফলে দেশটি ছেড়ে দক্ষিণ সুদান ও ইথিওপিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন মানুষ ।
শান্তি আলোচনা নিয়ে উদ্যোগ না থাকায় ২০২৪ সালে ঘনীভূত হবে এ সংকট। মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জাতিগত সশস্ত্র বিভিন্ন গোষ্ঠী বিদ্রোহ ঘোষণার পর থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। উত্তরাঞ্চলে অনেক শহর ও সেনাবাহিনীর ঘাঁটি দখল করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাহিনীগুলো।
২০২৪ সালে বাড়তে পারে সংঘাত। সাহেল অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলো গত কয়েক বছর ধরেই সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিদের মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কায় এই অঞ্চলের সরকারগুলোকে পরিস্থিতি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, শাদ, গাম্বিয়া, মৌরিতানিয়া, মালি, নাইজার, নাইজেরিয়া ও সেনেগাল।
অস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে সাহেল অঞ্চল ২০২৪ সালেও থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ হিসেবে পরিচিত ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও জিবুতিতে নেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কিংবা সুশাসন। সংঘাত বাড়তে পারে হাইতি, গুয়াতেমালা, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায় ।
কেমন যাবে বিশ্ব অর্থনীতি
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে, ফলে অনেক দরিদ্র দেশ ফাঁদে পড়ে যাবে। উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে পণ্যমূল্য কমে যাওয়া। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে, বিশেষ করে চীনের বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর জন্য । ২০২৪ সালে প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হতে যাচ্ছে এআই মডেলের ঢেউ, অগমেন্টেড রিয়ালিটির জগতে অ্যাপলের প্রবেশ ও অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন দেশের আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা ও গুজব মোকাবিলায় সামাজিক মাধ্যমের সক্ষমতার বিষয়টিও সামনে চলে আসবে ।
২০২৩ সালে চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডের মতো জেনারেটিভ এআই মডেল দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। পরবর্তী প্রজন্মের মডেলগুলো আরও শক্তিশালী হবে। যার অর্থ নতুন এসব মডেল জটিল কাজগুলো করে দিতে পারবে। ফলে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে এসব মডেলের প্রভাব ঘিরে সৃষ্ট উদ্বেগও বাড়বে ।
চলমান সাইবার নিরাপত্তা উদ্বেগ
যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে এরই মধ্যে সাইবার স্পেসে রাষ্ট্র-সমর্থিত হ্যাকারদের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী অস্থিশীলতা এ আগুনে ঘি ঢালবে । ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার’ তাদের ২০২৩ সালের বার্ষিক পর্যালোচনায় র্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।
পাশাপাশি, সাইবার স্পেসের ওপর এআইয়ের প্রভাব, বিশেষ করে অপরাধীদের আরও বিশ্বাসযোগ্য স্ক্যাম বা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরিতে সহায়তা করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের ‘ডিপফেইক’ অনলাইনে প্রচারিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং দাতব্য সংস্থা ‘ফুল ফ্যাক্ট’ সতর্ক করেছে, এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের ফলে অনলাইনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা কমে যাচ্ছে।
৪০ দেশে ৭০ নির্বাচন
২০২৪ সালে সর্বাধিক দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৪০টি দেশে অনুষ্ঠিতব্য ৭০টি নির্বাচন বিশ্ব ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে। আফ্রিকা মহাদেশের ১৫টি দেশ, আমেরিকার ৯টি, এশিয়ার ১১টি, ইউরোপের ২২টি ও ওশেনিয়া মহাদেশের চারটি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশ্বের ৪২ শতাংশ জনগণ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এসব দেশের দখলে বিশ্বের মোট জিডিপির ৪২ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটও এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ।
চারটি নির্বাচন সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখবে বৈশ্বিক ব্যবস্থায়— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব এলাকায় ২৩০ কোটি মানুষের বসবাস এবং সম্মিলিত জিডিপি ৪২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৪২ লাখ কোটি ডলার। তবে তাইওয়ানের ভোটাভুটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । কারণ এই নির্বাচন চীনকে প্রভাবিত করবে, যা বৈশ্বিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ ভোটার নির্বাচিত করবেন হোয়াইট হাউজের পরবর্তী উত্তরসূরিকে। ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার ক্ষমতায় আছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে ১৫ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ ভোটাভুটি হবে। বিভিন্ন জরিপ বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর পুতিনের জনপ্রিয়তা বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। তাই নির্বাচনে তাঁর জয় শুধুই সময়ের অপেক্ষা ৷
এপ্রিল-মে মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেবেন ভারতীয়রা। বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন করলেও সাম্প্রতিক পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে তিনটিতেই বিজেপি জয় পেয়েছে। দেশটি ব্রিটেনকে টপকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়েছে। গত আগস্টে ভারত চাঁদে মনুষ্যবিহীন যান প্রেরণ করে। এসব কারণে ব্যক্তি মোদির জনপ্রিয়তা এখনও তুমুল ।
অন্যদিকে, জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ থেকে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ভোটার ৭২০ জন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য বাছাই করবেন। এই নির্বাচন ডানপন্থী পপুলিস্ট সমর্থকদের জন্য একটি পরীক্ষা। পাশাপাশি, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও একটি নতুন সম্ভাবনা বা আশঙ্কার ক্ষেত্র। সব মিলিয়ে ২০২৪ একটি ভিন্ন প্রেক্ষিতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। যুদ্ধ, মহামারি, আর্থিক সংকট ও প্রযুক্তির বিপুল প্রসার মানবজাতির জন্য কোনো চিত্রটি হাজির করবে তা সময়ই বলে দেবে।
আরো পড়ুন :
অনুচ্ছেদ রচনা | |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য | |
ইসলাম ধর্ম | |
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | |
এইচএসসি | |
এসএসসি | |
ওয়েব ডিজাইন | |
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি | |
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স | |
গ্রন্থ-সমালোচনা | |
চাকরি-বাকরি | |
জীবনযাপন | |
জীববিজ্ঞান | |
জেলা পরিচিতি | |
টিপস | |
দেশ পরিচিতি | |
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি | |
নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন | |
পদার্থ বিজ্ঞান | |
পিডিএফ ডাউনলোড | |
পৌরনীতি ও নাগরিকতা | |
প্রতিষ্ঠান পরিচিতি | |
প্রবন্ধ আলোচনা | |
প্রশ্ন সমাধান | |
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য | |
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি | |
বাংলা রচনা সম্ভার | |
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় | |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | |
বিসিএস প্রস্তুতি | |
ভাইভা প্রস্তুতি | |
ভাবসম্প্রসারণ | |
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা | |
লেখক পরিচিতি | |
সাধারণ জ্ঞান | |
সাধারন বিজ্ঞান | |
সামাজিক বিজ্ঞান | |
স্বাস্থ্য টিপস |