সোমালিয়ার জলদস্যু

Preparation BD
By -
0


লোহিত সাগর ও আরব সাগরের তীরে অবস্থিত সোমালিয়া। হর্ন অব আফ্রিকার এ দেশের নামটি শোনামাত্র মানসপটে ভেসে ওঠে পণ্যপরিবাহী জাহাজ লুটপাট, নাবিকদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সব দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের ভয়ংকর চিত্রপট। সর্বশেষ ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামে একটি বাংলাদেশি জাহাজ অপহরণের মধ্য দিয়ে আবার আলোচনায় উঠে আসে এ দেশটি।

জলদস্যুতার পটভূমি

আফ্রিকার সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল সোমালিয়া। প্রাচীনকালে সোমালিয়া ছিল জরুরি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মধ্যযুগে বেশ কয়েকটি সোমালি সাম্রাজ্য আঞ্চলিক বাণিজ্যের নেতৃত্ব দেয়। ২১ অক্টোবর ১৯৬৯ জেনারেল সিয়াদ বারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এক সামরিক অভ্যুত্থান। ১৬ জানুয়ারি ১৯৯১ দেশটির স্বৈরশাসক মোহাম্মদ সিয়াদ বারের পতনের পর অরাজকতায় ভেঙে পড়ে সোমালিয়া।

লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় নেয় উদ্বাস্তু শিবির অথবা প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে। এরপর থেকেই উত্থান হয় সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুতার। সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতা মূলত এ উপকূলে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে সৃষ্টি হয়। বিদেশি জাহাজ থেকে সোমালি উপকূলে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার ফলে স্থানীয়দের পরিবেশ বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।

এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে এ অঞ্চলে বিদেশি জাহাজ প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে। এরপর বিকল্প আয় হিসেবে তারা বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ মুক্তিপণের জন্য ছিনতাই শুরু করে। অন্যদিকে, বৃহৎ নুগাল পর্বত-ইয়েল (Eyl) শহরটি সোমালিয়ার জলদস্যুদের রাজধানী হিসেবে পরিচিত।

আধুনিক জলদস্যুতার উত্থান

১৬৫০-১৭৩০ পর্যন্ত জলদস্যুদের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। আওরঙ্গজেবের আমলেও দলবল সমেত মুঘল সেনাপতি শায়েস্তা খাঁর হাতে ধরা পড়েন জলদস্যু সেবাস্তিয়ান গঞ্জালেস। ইতিহাসের সেই কাহিনির পুনরাবৃত্তি দেখা যায় আজকের এ দিনে। তৎকালীন জলদস্যুতার জন্য ব্যবহার হতো নৌকা, তীর-ধনুক, তলোয়ার। তবে আজকের আধুনিক বিশ্বে এসব জলদস্যুদের হাতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজ-সরঞ্জাম।

১৯৯৫ সাল থেকে সোমালিয়া উপকূলে অবৈধ জাহাজের অনুপ্রবেশ রোধে চলে নজরদারি। তবে ছোট নৌকা করে এসব গতিদানবের কাছাকাছি যেতেও বেশ বেগ পেতে হয়। এরপর স্টিলের পাতের ছোট নৌকাগুলোর সঙ্গে এঁটে দেয় শক্তিশালী ইঞ্জিন, পাল্টে দেয় ক্ষিপ্রগতির আক্রমণাত্মক যুদ্ধযানে। জলদস্যুতায় গড়ে ওঠে তিনটি শক্তিশালী ইউনিট। এসব ইউনিটে যোগদানে এগিয়ে আসে জেলেদের ছোট ছোট দল, সরকারের সাবেক সেনাসদস্য ও প্রযুক্তিবিদরা।

ছিনতাই পদ্ধতি

সোমালিয়ার জলদস্যুরা সাধারণত পণ্যবোঝাই জাহাজকে টার্গেট করে থাকে। বেশি পণ্যবোঝাই থাকায় বেশিরভাগ জাহাজের গতি থাকে ১৮-২০ নটিক্যাল মাইল। জলদস্যুরা যখন কোনো জাহাজকে টার্গেট করে তখন তারা ছোট ছোট বোট বা নৌকায় অস্ত্র নিয়ে তিন থেকে চারদিক ঘিরে ফেলে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে জাহাজে উঠে তারা নাবিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। তারপর সাগর থেকে অপহৃতদের জাহাজকে সোমালিয়ার জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পরই মূলত অপহৃতদের স্বজন বা জাহাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জলদস্যুরা যোগাযোগের মাধ্যমে বিশাল মুক্তিপণ দাবি করে থাকে।

দস্যুদের পেছনে যারা

সোমালিয়াতে জলদস্যুতা এখন বিশাল বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা, এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ লুটের টাকার ভাগ পেয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, জলদস্যুদের মুক্তিপণের অর্থায়নে সেখানে উন্নয়নের পাশাপাশি ঘটছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার।

জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশ

১২ মার্চ ২০২৪ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজটি | চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড এ জাহাজ পরিচালনা করে। জাহাজে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিক এখন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। বাংলাদেশি কোনো জাহাজের সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়।

৫ ডিসেম্বর ২০১০ আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। এক মাসেরও বেশি সময় ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন মানুষ সমুদ্রে ছিলেন। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৪ মার্চ ২০১১ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ ২০১১ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।


আরো পড়ুন :


অনুচ্ছেদ রচনা

বিস্তারিত

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

বিস্তারিত

ইংরেজি ভাষা  সাহিত্য

বিস্তারিত

ইসলাম ধর্ম

বিস্তারিত

ইসলামের ইতিহাস  সংস্কৃতি

বিস্তারিত

এইচএসসি

বিস্তারিত

এসএসসি

বিস্তারিত

ওয়েব ডিজাইন

বিস্তারিত

কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি

বিস্তারিত

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বিস্তারিত

গ্রন্থ-সমালোচনা

বিস্তারিত

চাকরি-বাকরি

বিস্তারিত

জীবনযাপন

বিস্তারিত

জীববিজ্ঞান

বিস্তারিত

জেলা পরিচিতি

বিস্তারিত

টিপস

বিস্তারিত

দেশ পরিচিতি

বিস্তারিত

তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি

বিস্তারিত

নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন

বিস্তারিত

পদার্থ বিজ্ঞান

বিস্তারিত

পিডিএফ ডাউনলোড

বিস্তারিত

পৌরনীতি ও নাগরিকতা

বিস্তারিত

প্রতিষ্ঠান পরিচিতি

বিস্তারিত

প্রবন্ধ আলোচনা

বিস্তারিত

প্রশ্ন সমাধান

বিস্তারিত

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং

বিস্তারিত

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

বিস্তারিত

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি

বিস্তারিত

বাংলা রচনা সম্ভার

বিস্তারিত

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

বিস্তারিত

বাংলাদেশ বিষয়াবলী

বিস্তারিত

বিসিএস প্রস্তুতি

বিস্তারিত

ভাইভা প্রস্তুতি

বিস্তারিত

ভাবসম্প্রসারণ

বিস্তারিত

ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

বিস্তারিত

লেখক পরিচিতি

বিস্তারিত

সাধারণ জ্ঞান

বিস্তারিত

সাধারন বিজ্ঞান

বিস্তারিত

সামাজিক বিজ্ঞান

বিস্তারিত

স্বাস্থ্য টিপস

বিস্তারিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !