ভোলার আদি নাম দক্ষিণ শাহবাজপুর। ব্রিটিশ আমলে দক্ষিণ শাহবাজপুরের একাংশ ছিল সুন্দরবনের অংশ। তখন বাকেরগঞ্জ জেলার দুই তৃতীয়াংশ ছিল সুন্দরবনে আবৃত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় সুন্দরবন চন্দ্রদ্বীপ ও বুজুর্গ উমেদপুর পরগনা হতে পৃথক করা হয় এবং সুন্দরবন নামে একটি নতুন পরগনা সৃষ্টি করা হয়। মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, খেপুপাড়া, লালমোহন, চরফ্যাশন, বরগুনা ও আমতলীর একাংশ নিয়ে পরগনা গঠিত হয়।
১৭৮১ সালে মনপুরা দক্ষিণ শাহবাজপুর জমিদারের সম্পত্তি ছিল। জনৈক মনগাজি দক্ষিণ শাহবাজপুর জমিদারের নিকট হতে মনপুরা ইজারা নেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৭৯০ সালে জমিদারের দশসালা ভূমি বন্দোবস্ত দেন। ২২ মার্চ ১৭৯৩ তিনি এ বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করেন।
উনিশ শতকের প্রথমভাগে মেঘনার শাখা ইলিশা ও তেঁতুলিয়া বৃহত্তর আকার লাভ করে। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বাকেরগঞ্জ হতে দক্ষিণ শাহবাজপুর ও হাতিয়াকে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করার। ২২ এপ্রিল ১৮২২ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দক্ষিণ শাহবাজপুরকে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। ১৮৪৫ সালে নোয়াখালী জেলার অধীনে ভোলা মহকুমা গঠিত হয়। দৌলতখানের আমানিয়া ছিল তখন এর প্রশাসনিক কেন্দ্র।
১৮৬৯ সালে মহকুমাটি বরিশালের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন হাট নামক দুটি থানা এবং তালতলি, গাজীপুর ও তজুমদ্দিন নামক তিনটি আউটপোস্ট নিয়ে এই মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৬ সালে দৌলতখান থেকে ভোলা মহকুমা সদর স্থানান্তরিত হয়। ১৯২০ সালে ভোলা পৌরসভা গঠিত হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ এটিকে জেলায় রূপান্তর করা হয়।
সাধারণ তথ্যাবলি
জেলা প্রতিষ্ঠা : ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সীমানা : উত্তরে লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী, মেঘনা নদী এবং শাহবাজপুর চ্যানেল; পশ্চিমে পটুয়াখালী ও বরিশাল এবং তেঁতুলিয়া নদী। আয়তন : ৩,৪০৩.৪৮ বর্গ কি.মি. জনসংখ্যা : ১৯,৩২,৫১৮ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী : ৭৭৩ জন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ০.৭৫% সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৬৭.৩০% • ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ৫৬৮ জন। প্রধান নদনদী > মেঘনা, শাহবাজপুর চ্যানেল, তেঁতুলিয়া ও গণেশপুরা নদী এবং দারোগার খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসনিক কাঠামো
উপজেলা : ৭টি ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, মনপুরা, চরফ্যাশন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন থানা : ১০টি— ৭টি উপজেলাসহ দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট ও শশীভূষণ। পৌরসভা : ৫টি ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন ইউনিয়ন : ৭০টি জাতীয় সংসদের আসন : ৪টি
নামকরণ
ভোলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ভোলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া
নামক খালটি পূর্বে তেমন প্রশস্ত ছিল না। একসময় এটা পরিচিত ছিল বেতুয়া নদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার চলত। খুব বয়স্ক একজন মাঝি খেয়া নৌকার সাহায্যে লোকজনকে পারাপারের কাজ করতো। তার নাম ছিল ভোলা গাজি পাটনি। আজকের যোগীর ঘোলের কাছেই তার আস্তানা ছিল। এ ভোলা গাজির নামানুসারেই একসময় নামকরণ হয় ভোলা।
আদি নাম
ভোলা জেলার আদি নাম দক্ষিণ শাহবাজপুর। এ অঞ্চল একসময় সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় সম্রাট আকবরের সাবেক সেনাপতি শাহবাজ খান মগ পর্তুগিজদের দমন করার জন্য দৌলতখানে দুর্গ স্থাপন করে যুদ্ধ করেন। সুবেদারী আমলে তার নামে এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় শাহবাজপুর।
জানেন কি : ভোলা
আয়তনে : দেশের ১৪তম বরিশাল বিভাগের : প্ৰথম
জনসংখ্যায় : দেশের ৩৮তম বরিশাল বিভাগের : দ্বিতীয়
মুক্তিযুদ্ধে ভোলা
সেক্টর > ৯
হানাদার বা শত্রুমুক্ত দিবস
- ২২ অক্টোবর : লালমোহন
- ২১ নভেম্বর : তজুমদ্দিন
- ২৬ নভেম্বর : দৌলতখান
- ২৭ নভেম্বর : বোরহানউদ্দিন
- ২ ডিসেম্বর : চরফ্যাশন
- ১০ ডিসেম্বর : ভোলা সদর
- মুক্তাঞ্চল : মনপুরা
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- শাহে আলম, বীর উত্তম
- মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, বীর বিক্রম
- রফিকুল ইসলাম, বীর বিক্রম
- নাজিউর রহমান মঞ্জুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ
- তোফায়েল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ
- মোশারেফ হোসেন শাজাহান, সাবেক মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ
- সিদ্দিকুর রহমান, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা যিনি বাঘা সিদ্দিক নামেও পরিচিত
- নলিনী দাস, ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী
- সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম সচিব
- কবি মোজাম্মেল হক, কবি নাসির আহমেদ
- আমিনুল হক, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক।
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল
- জন্ম : ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭; মৌটুপি, আলীনগর, ভোলা
- সেক্টর : ২নং
- কর্মস্থল : বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
- শহীদ হন : ১৮ এপ্রিল ১৯৭১; দরুইন আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তিযুদ্ধের
- খেতাব : বীরশ্রেষ্ঠ
- সমাহিত : মোগড়া, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ভোলা দ্বীপ
ভোলা দ্বীপ মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। গাঙ্গেয় অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। আনুমানিক ১২৩৫ সালের দিকে দ্বীপটি গড়ে ওঠতে শুরু করে। ১২৩৫ সালে শুরুতে এখানে প্রথম চর পড়া শুরু হয় এবং ১৩০০ সালের দিকে চাষাবাদ শুরু হয় ! ১৫০০ সালের দিকে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের নজর পড়ে এ দ্বীপটির ওপর। তারা দ্বীপটিকে ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে লুটপাট চালিয়ে যেতে থাকে। ১৫১৭ সালে জন ডি সিলনেরা নামক জনৈক পর্তুগিজ জলদস্যু দ্বীপটি দখল করে। পর্তুগিজদের রেখে যাওয়া ভীম দর্শন কিছু রোমশ কুকুর আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে সেসব লোমহর্ষক অত্যাচারের কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য মনপুরা ছিল এদের দস্যুবৃত্তির লীলাক্ষেত্র।
উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
- সদর : স্বাধীনতা জাদুঘর, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, নিজাম-হাসিনা জামে মসজিদ, ইলিশা ঘাট, ফাতেমা খানম জামে মসজিদ, ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র, চর শিবপুর, চর সামাইয়া, চর ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া চর।
- দৌলতখান : চর খলিফা, চর পাতা, নেয়ামতপুর চর, চর মুন্সি, মদনপুর চর।
- বোরহানউদ্দিন : তেঁতুলিয়া নদী ইকোপার্ক, শাহবাজপুর চ্যানেল, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র, প্রাচীন জনপদ ‘দেউলি’।
- লালমোহন : সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্ক, চর কচুয়াখালী, চর ভূতা, দেবীর চর ও চর উমেদ।
- মনপুরা : মনপুরা দ্বীপ, চর মজুমদার, চর মামুন, চর বদনা, চরপাতালিয়া, চর পিয়াল, উরির চর, চর মান্নান, সোনার চর, চর কলাতলী, চর মনপুরা, চর তাজাম্মুল।
- চরফ্যাশন : চর কুকরি মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, চর কুকরি মুকরি ইকো পার্ক, তারুয়া সৈকত, জ্যাকব টাওয়ার, হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, চর মনিকা, চর মাদ্রাজ, চর কলমি, চর আইচা, চর পাতিলা, চর রুস্তম, ভাষান চর, চর নিউটন, চর কুকরি মুকরি ও ঢাল চর।
- তজুমদ্দিন : চর মোজাম্মেল, চর জহিরুদ্দিন, চর নাসরিন, চর লক্ষ্মী, তেলিয়ার চর, চর কাঞ্চনপুর ও চর জহির উদ্দিন।
দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র
ভোলা সদর উপজেলায় দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (BAPEX)। ২২ মে ২০২৩ এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয় ৷ এর আগে ৮ মার্চ ২০২৩ ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে মালেরহাট সংলগ্ন এলাকায় ইলিশা-১ কূপের খনন কাজ শুরু হয়। ১৪ এপ্রিল ২০২৩ Drill Stem Test (DST)-এর মাধ্যমে সফলভাবে কূপ খনন শেষ হয়। ২৮ এপ্রিল ২০২৩ কূপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। নতুন গ্যাসক্ষেত্রের তিন স্তরে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। ইলিশা-১ ভোলা জেলার তৃতীয় গ্যাসক্ষেত্র। ১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে BAPEX। একই প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র-ভোলা নর্থ।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
- ইলিশ আহরণে শীর্ষ জেলা- ভোলা
- ভোলার আদি নাম ছিল- দক্ষিণ শাহবাজপুর ভোলা দ্বীপ
- মহিষের দইয়ের জন্য পরিচিত- বাংলাদেশের দ্বীপের রানি ভোলা
- বাংলার আইফেল টাওয়ারখ্যাত ভোলার- জ্যাকব টাওয়ার।
- বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা- ভোলা
- দেশের একমাত্র চরফ্যাশন উপজেলায় ৪টি থানা রয়েছে- চরফ্যাশন, দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট ও শশীভূষণ
আরো পড়ুন :
অনুচ্ছেদ রচনা | |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য | |
ইসলাম ধর্ম | |
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | |
এইচএসসি | |
এসএসসি | |
ওয়েব ডিজাইন | |
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি | |
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স | |
গ্রন্থ-সমালোচনা | |
চাকরি-বাকরি | |
জীবনযাপন | |
জীববিজ্ঞান | |
জেলা পরিচিতি | |
টিপস | |
দেশ পরিচিতি | |
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি | |
নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন | |
পদার্থ বিজ্ঞান | |
পিডিএফ ডাউনলোড | |
পৌরনীতি ও নাগরিকতা | |
প্রতিষ্ঠান পরিচিতি | |
প্রবন্ধ আলোচনা | |
প্রশ্ন সমাধান | |
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য | |
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি | |
বাংলা রচনা সম্ভার | |
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় | |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | |
বিসিএস প্রস্তুতি | |
ভাইভা প্রস্তুতি | |
ভাবসম্প্রসারণ | |
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা | |
লেখক পরিচিতি | |
সাধারণ জ্ঞান | |
সাধারন বিজ্ঞান | |
সামাজিক বিজ্ঞান | |
স্বাস্থ্য টিপস |