আপনি কি জানেন, হাজারো ফ্রিল্যান্সার যারা কেবল তাদের দক্ষতা বিক্রি করে ফাইভার থেকে প্রতিমাসে $1000 এরও বেশি অর্থ উপার্জন করছেন? ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় জেনে বিভিন্ন কিওয়ার্ডের ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের গিগগুলো র্যাঙ্ক করে। আর এভাবেই প্রতিদিন প্রচুর সেল পায় এই সকর টপ লেভেল সেলাররা।
ফাইভার আপনার দক্ষতার মাধ্যমে অনলাইনে উপার্জনের জন্য আজ একটি সেরা প্ল্যাটফর্ম। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অনেকেই প্ল্যাটফর্মটি সঠিকভাবে ব্যবহার করে কীভাবে আরও অর্ডার পেতে হয় তা জানেন না। ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি যদি ফাইভারের প্রাথমিক কৌশলগুলি জানেন এবং সেগুলি অনুসরণ করেন তবে আপনি জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজেই প্রচুর উপার্জন করতে পারবেন।
ফাইভারে রয়েছে ২.৩ মিলিয়ন সক্রিয় সেলার যারা নিজের ক্রিয়েটিভিটির প্রমাণ করে এখান থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু নতুন যারা ফাইভারে একাউন্ট খোলেন, তাদের পর্যাপ্ত গাইডলানের অভাবে নিজেদের গিগ র্যাঙ্ক করাতে পারেন না। ফলে ভালো কাজ জানা সত্বেও তাদের সেল হয় না। এতে করে নতুন একজন ফ্রিল্যান্সার খুব অল্প সময়েই হতাশ হয়ে পড়েন।
ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় কী?
বিশেষ কিছু কৌশলা জানা থাকলে ফাইভারে কাজ পাওয়া কঠিন কিছুই নয়। এখানে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট স্পীড মনিটাইজেশন এবং এসইও, ওয়েবসাইট ট্রাফিক, এনিমেশন তৈরি এবং লোগো বা বিজনেস কার্ড ডিজাইন ইত্যাদি সার্ভিসগুলোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সকল ধরনের সৃজনশীল কাজের জন্য ফাইভার একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম।
এখানে যেহেতু অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজ করে, তাই আপনাকে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা নিয়েই মার্কেটপ্লেসে নামতে হবে। আজ আমরা এই আর্টিকেলে ফাইভারে কাজ পাওয়ার ৭ টি দুর্দান্ত উপায় সম্পর্কে জানবো। যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে আরো বেশি উন্নত করতে পারেন। তাহলে চলুন, শুরু করি।
প্রোফাইলটি সুন্দর করে তৈরি করুন
আপনি যদি ইতোমধ্যেই Fiverr এ একটি একাউন্ট খুলে থাকেন, থাকেন, তাহলে কোন Gig তৈরির পূর্বে আপনার প্রোফাইলটি আকর্ষণীয় এবং প্রফেনাল মানের সাজিয়ে তুলুন। এখানে আপনার সত্যিকারের একটি ছবি এবং About সেকশনে নিজের সম্পর্কে ভালো বিবরণ দিন। আপনার সম্পর্কে যা বর্ণনা করা আবশ্যক, তা উল্লেখ করতে একদমই ভুলবেন না।
সুন্দর Gig description লিখুন
Gig থেকে বেশি অর্ডার পাওয়ার জন্য description টি চমৎকার হওয়া বাঞ্চনীয়। তাই Gig description অংশে আপনার সেবা সম্পর্কে ভালভাবে বর্ণনা করুন। আপনার প্রতিটি Gig-এ একটি দুর্দান্ত বর্ণনা যুক্ত করুন এবং এক্সপার্টের মতো আপনার সেবাগুলো ব্যাখ্যা করুন। যখনই কোনও বায়ার ফাইভারে কাজের জন্য লোক খোঁজে, তিনি প্রথমে আপনার Gig টি ভালোভাবে পরীক্ষা করেন। সুতরাং আপনার লেখা Gig টি যদি তার প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করে তবে আপনি অবশ্যই কোন অর্ডার পাবেন।
আপনার গিগটি সঠিকভাবে ফরমেটিং করুন। এজন্য Bold, Underline, List এবং Highlight ফরমেটিং অপশনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আপনার গিগটি নতুন অবস্থায় অর্ডার কম আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই গিগে মূল সার্ভিসের সাথে অতিরিক্ত কোন সেবা বোনাস হিসেবে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার গিগটি বায়ারের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে।
আলাদা কিছু অফার করুন
ফাইভারে প্রচুর জিগ রয়েছে এবং প্রতিনিয়তই নতুন নতুন গিগ আপলোড হচ্ছে। যার প্রতিটিই প্রায় একই ধরনের সার্ভিসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। যেমন ধরুন, কেউ একজন বিজনেস কার্ড তৈরি করে দিতে চায়। ফাইভার ঘাটাঘাটি করলে বিজনেস কার্ড তৈরির ওপর আপনি হাজারের বেশি গিগ খুঁজে পাবেন।
একইভাবে অন্যান্য সেবা যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এবং আর্টিকেল রাইটিংয়ের মত গিগও রয়েছে প্রচুর। তাই আপনি যদি খুব দ্রুত বায়ার রিকোয়েস্ট পেতে চান, তবে এমন কিছু অফার করুন, যা ফাইভারে অন্য কেউ দিচ্ছে না বা দিলেও সংখ্যাটা কম।
এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাতিক্রমধর্মী কোন সেবার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যেকোন মার্কেটপ্লেসেই ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য বড় বড় ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য আপনার সৃজনশীল মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। আপনার মধ্যে যদি আলাদা কিছু করার ক্ষমতা না থাকে, তবে আপনি এসব প্লাটফর্মে অল্প সময় ভালো কিছু করতে পারবেন না।
Gig টাইটেল অপটিমাইজ করুন
একটি গিগে টাইটেল হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এটি লেখায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনার লেখা টাইটেলটি যেন খুব বেশি বড় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গিগের টাইটেল যত শর্ট হবে, একজন বায়ারের কাছে এটি বুঝতে ততটাই সহজবোধ্য হবে। প্রথম keywords দিকে SEO এর দৃষ্টিভঙ্গিতে মনোযোগ দিন। মানুষ কি লিখে সার্চ করে থাকে, তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার টাইটেলে সর্বদা জনপ্রিয় keyword গুলো রাখার চেষ্টা করুন।
আবার এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি যে বিষয়ে সার্ভিস দেবেন, সেটি আপনার টাইটেলে ফুটে উঠলো কিনা। মনে করুন, আপনি লোগো ডিজাইন করে দিতে চাচ্ছেন। সুতরাং আপনার গিগ টাইটেলে লোগো নিয়ে যদি কিছু লেখা নাই থাকে, তাহলে বায়ারের এটি দেখে বোঝার উপায় নেই, যে আপনি মূলত কি সেবা দিতে চাচ্ছেন।
সুন্দর কভার ফটো দিন
একটি গিগকে প্রফেশনাল রূপ দেয়ার প্রধান উপকরণ হচ্ছ এতে একটি মানানসই কভার ফটো ব্যবহার করা। আপনার কভার ফটোটি যেন উপযুক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফাইভারে সাধারণত 550×370 পিক্সেল সাইজের কভার ফটো আপলোড করতে বলা হয়। তাই ছবিটি ফটোশপে ডিজাইনের সময় অবশ্যই এর সাইজের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
একটা কথা মনে রাখুন, একজন বায়ার প্রথমে আপনার দেয়া এই ফিচার ইমেজ এবং টাইটেল দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে, যে সে আপনার গিগে ক্লিক করবে কি না। তাই গিগের ফিচার ইমেজ তৈরিতে বিশেষ কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আর আপনি এই নিয়মগুলো নিশ্চিত করতে পারতে অবশ্যই তা আপনার গিগ র্যাঙ্ক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভিডিও ব্যবহার করুন
গিগে আকর্ষণীয় ভিডিও ব্যবহার করলে ওই সার্ভিসটি বিক্রির সম্ভবনা ৬০% বেড়ে যায়। এটা কিন্তু কোর্সটিকার কথা না, স্বয়ং ফাইভার অথরিটিই এটা বলেছে। সুতরাং চেষ্টা করুন ফাইভারের নিয়ম মেনে একটি ভিডিও তৈরি করতে। কারণ একটি স্টিল ইমেজের চেয়ে ভিডিওতে আপনি আরো বিস্তারিতভাবে আপনার সার্ভিসটি সম্পর্কে বায়ারকে ধারণা দিতে পারবেন।
গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফাইভার ব্লগ থেকে জানা যায়, যে সকল গিগে ভিডিও ছিল তাদের সেল অনেক বেড়েছে। যে সকল সেলার নিজেরাই নিজের কাজের উপস্থাপন করেছেন তাদের সেল প্রায় ৯৬% বেড়েছে। আবার যাদের ভিডিও ইফেক্ট, এনিমেশন, লেখা, স্টিল ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করেছে তাদের সেল ৮৪% বেড়েছে। সুতরাং গিগে ভিডিও গুরুত্বটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
তবে ফাইভার গিগে ভিডিও আপলোড করতে হলে আপনাকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এখানে যেমন ইচ্ছে তেমন ভিডিও আপলোড করলেই হবে না, আপনাকে কিছু স্টান্ডার্টও মেইনটেইন করতে হবে। ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে এর সাবধানতাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসরণ করুন।
গিগ প্রচার করুন
প্রচারেই প্রসার বলতে একটি প্রবাদ আছে। ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। গিগ তৈরি করাই শেষ কাজ না, এর সর্বোচ্চ প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া যেমন: ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন অথবা রেডিটে আপনার তৈরির গিগের লিংক শেয়ার করুন। এর ফলে প্রচুর মানুষের কাছে আপনার সার্ভিসটি প্রচার হতে থাকবে এবং এখান থেকে আপনার বায়ার পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
এছাড়াও আপার গিগটি সংশ্লিষ্ট ব্লগ পোস্টের মাধ্যমেও প্রচার করতে পারেন। গিগটি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত হয়ে থাকে, তাহলে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট উপর টিপস নিয়ে কোন ব্লগ পোস্ট লিখতে পারেন। এ পোস্টটি অনেক মানুষ পড়বে। সেই পোস্টে যদি গিগ লিংকটি দিয়ে আসেন তাহলে গিগটিতে অনেক ভিজিটর নিয়ে আসতে পারবেন।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আপনি ফাইভারে কাজ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে অবশ্যই ধৈর্য ধরে স্টেপ বাই স্টেপ আপনাকে সামনে আগাতে হবে। আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনার মত লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সার প্রতিযোগিতা করেই টিকে রয়েছে। তাই এখানে সফল হওয়ার কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই।
উপরের নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আশা করা যায় খুব দ্রুত কিছু গিগ বিক্রির অর্ডার পেয়ে যাবেন। গিগ অনুযায়ী কাজ করে এবং সময়মত কাজ ডেলিভারি দিয়ে বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন। যত বেশি ভালো ফিডব্যাক পাবেন, আপনার গিগ তত বেশি সার্চের উপরে উঠতে থাকবে।