উসমানের প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মাইনরের ছোট উসমানীয় রাজ্যকে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। তার সৌভাগ্য যে, বেশ কিছু রণনিপুণ সেনাপতির কর্মক্ষমতা তিনি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় বিস্তৃত করে সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে তার এই রাজ্য বিজয়ে দেশের যে স্থিতিশীলতা এবং অর্থের প্রয়োজন ছিল, তার ব্যবস্থা পূর্ববর্তী সম্রাট তার পিতা করে রেখে গিয়েছিলেন।
ক. সিন্ধু বিজয়ী নেতার নাম কী?
খ. সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার সাথে কোন উমাইয়া খলিফার কাজের সামজস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের দ্বিতীয় মুরাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে সেনাপতিদের অবদানের মতোই খলিফা আল-ওয়ালিদ ও সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন? তোমার উত্তরের সপক্ষে বাখ্যা দাও।
প্রশ্নের উত্তর
ক. সিন্ধু বিজয়ী নেতার নাম মুহম্মদ বিন কাসিম ৷
খ. আরবদের কিছু বাণিজ্য তরী সিন্ধুর জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে হাজ্জাজের দাবি অনুসারে রাজা দাহির কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতিই ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ ।
অষ্টম শতকের শুরুতে আরবদের ৮টি বাণিজ্য ওরী সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠিত হলে খলিফা আল-ওয়ালিদের পূর্বাঞ্ছনীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এ ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে সিন্টু আক্রমণ । অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, যা ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ ।
গ. উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার সাথে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের কাজের সামঞ্জস্য রয়েছে।
খলিফা আবদুল মালিক রাজস্ব সংস্কারে মাধ্যমে রাজ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে সক্ষম হন। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তিনি কিছু নীতি গ্রহণ করেন। যেমন- ইসলাম গ্রহণ করলেও মাওয়ালিদের জিজিয়া ও খারাজ দিতে হবে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও তাদের গ্রামে স্ব পেশায় নিযুক্ত হতে হবে, মুসলমানরা যে জমি ক্রয় করেছে তাদেরকে আগের মতো কর দিতে হবে।
এছাড়া কৃষকদের কৃষিঋণ প্রদান করা হয়, তিন বছর পর্যন্ত যার কোনো ট্যাক্স দিতে হয়নি। এভাবে তিনি একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন যার সুফল তার পরবর্তী শাসকগণও ভোগ করে। আর উদ্দীপকেও এ বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, দ্বিতীয় মুরাদ এশিয়া মাইনরে ওসমানের প্রতিষ্ঠিত ছোট উসমানীয় রাজ্যকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।
তবে তার এই রাজ্য বিজয়ের দেশের যে স্থিতিশীলতা এবং অর্থের প্রয়োজন ছিল, তার ব্যবস্থা পূর্ববর্তী সম্রাট তার পিতা করে রেখে যান। অনুরূপভাৰে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদও তার পিতা আবদুল মালিকের রেখে যাওয়া স্থিতিশীদ অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিশাল এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা প্রথম ওয়ালিদ দশ বছরের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য পশ্চিমে স্পেন হতে পূর্বে ভারতবর্ষ এবং উত্তরে মধ্য এশিয়ার ফারগানা হতে দক্ষিণে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।
এই বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল তা তার পিতা আবদুল মালিক উমাইয়া সাম্রাজ্যে রেখে গিয়েছিলেন । তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার ন্যায় উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকও রাজ্য বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও অর্থের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন : উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? খলিফা সুলাইমানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয় কেন?
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের দ্বিতীয় মুরাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের সেনাপতিতের অবদানের মতোই খলিফা ওয়ালিদও সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মুরাদ বেশ কিছু রণনিপুণ সেনাপতির কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঠিক একইভাবে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদও বিশাল উমাইয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মুরাদের মতোই সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন। তিনি হাজ্জাজ, কোতায়বা, ইবনে কাসিম, তারিক ও মুসার মতো বিখ্যাত রণনিপুণ সেনাপতিদের সাহায্য লাভ করেছিলেন এবং তাদের অসাধারণ শৌর্য-বীর্য এবং অক্লান্ত চেষ্টার ফলে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের বহু স্থানে আরব অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে কুতায়াবা বিন মুসলিমকে খোরাসানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করলে মধ্য এশিয়ায় মুসলিম রাজ্য বিস্তারের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়। তিনি একে একে তুর্কিস্থান ও ফারগানা এবং বুখারা দখল করেন। ৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাশগড় জয় করে সমগ্র মধ্য এশিয়ায় উমাইয়াদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন ।
এছাড়া আল ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসক হাজ্জাজ এর নির্দেশে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতে অভিযান পরিচালনা করেন এবং তা বিজয় করেন। তাছাড়া তার সুযোগ্য শাসক মুসা বিন নুসায়ের উত্তর আফ্রিকা থেকে রোমানদের তাড়িয়ে সেখানে মুসলিম শাসন দৃঢ় করেন। আল ওয়ালিদের রাজত্বকালে তারিক বিন জিয়াদ নামে একজন সেনানায়ক মাত্র ১২০০০ সৈন্য নিয়ে ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনের রাজা রডারিককে পরাজিত করে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, আল ওয়ালিদের রাজ্য সম্প্রসারণে তার সেনাপতিদের অবদান ছিল অপরিসীম।