আল ওয়ালিদ কাকে দামেস্কের পূর্বাস্বলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন? অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেনের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।

Preparation BD
By -
0

সমির সাথে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও দেশ শাসন করতে গিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ত্যাগ করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব করেন। তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে তার উত্তরাধিকারী মনোনিত করে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেন। এতে তিনি ধর্মের সাধারণতান্ত্রিক আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেন ।

ক. আল ওয়ালিদ কাকে দামেস্কের পূর্বাস্বলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন?
খ. অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেনের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।
গ. সমির সাহেবের সাথে মিল রয়েছে এমন একজন শাসকের খিলাফত লাভের উপায় পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমির সাহেবের মতো এক ব্যক্তিই পাঠ্যবইতে মুসলিম জাহানের অধিপতি হতে চেয়েছিলেন বিশ্লেষণ কর।

ক. আল ওয়ালিদ দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে নিযুক্ত করেন।

খ. অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেন অত্যন্ত করুণ পরিণতি বরণ করেন । ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহররম ইমাম হোসেনের সাথে ইয়াজিদ বাহিনীর যুদ্ধ বাঁধে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। কেননা হোসেনের বাহিনীতে যুদ্ধক্ষম ব্যক্তি ছিল মাত্র ৭২ জন। অপরপক্ষে ইয়াজিদের বাহিনীতে ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি। যুদ্ধে হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম ও শিশুপুত্র আসগর শহিদ হলে ইমাম হোসেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার প্রচণ্ড আক্রমণে ইয়াজিদ বাহিনী ভীত হয়ে পালাতে থাকে । কিন্তু হঠাৎ একটি তীর তার বক্ষে বিদীর্ণ হলে তিনি ধরাশায়ী হন। অবশেষে নিষ্ঠুর সীমার অর্ধমৃত হোসেনের মস্তক ছিন্ন করেন।

গ. উদ্দীপকের সমির সাহেবের সাথে মিল রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের এমন একজন শাসক হলেন মুয়াবিয়া।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সমির সাহেব গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিহার করে রাজতান্ত্রিকভাবে দেশের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তার এ কাজে মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন রয়েছে। কারণ তিনিও খুলাফায়ে রাশেদিনের গণতান্ত্রিক আদর্শ বর্জন করে জ্যেষ্ঠ পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব করেছিলেন । সম্পূর্ণ শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তিনি খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

হযরত ওমরের (রা) খিলাফতে মুয়াবিয়া সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে তিনি সমগ্র সিরিয়ায় সুশাসন কায়েম করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে মুয়াবিয়া সিরিয়াকে বাইলান্টাইন আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। খলিফা ওসমানের (রা) সময় তিনিই সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র আরব নৌবহর গঠন করে সাইপ্রাস ও রোডস্ দখল করেন।

৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওসমান (রা) এর হত্যাকে কেন্দ্র করে খলিফা হযরত আলি (রা) এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ফলে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক সিফফিন প্রান্তরে উভয়ের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আলি (রা)-এর নৃশংস হত্যা ও তার জ্যেষ্ঠপুত্র ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যার পর মুয়াবিয়া খিলাফত লাভ করেন।

আরো পড়ুন : উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিজেতা কে ছিলেন? মুয়াবিয়াকে প্রথম রাজা বলা হয় কেন ?

ঘ. সমির সাহেবের মতো উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া মুসলিম জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চেয়েছিলেন । নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে ইমাম হাসানকে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শঠতার মাধ্যমে মুয়াবিয়া সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং দামেস্কে উমাইয়া রাজবংশ প©তিষ্ঠা করেন । এ সময় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা কঠোর হস্তে দমন করেন।

এরপর তিনি রাজ্যবিস্তারে মন দেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্য বিস্তারের পূর্বশর্ত হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান। এ কারণে তিনি সীমান্তে উপজাতিদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেন। তার গঠিত সমর বাহিনী দ্বারা তিনি পূর্বদিকে সমরখন্দ ও বুখারা এবং দক্ষিণে সিন্ধুনদ পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন।

তিনিই সর্বপ্রথম বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নৌবহরের মোকাবিলা করার জন্য নিজে একটি নৌবহর গঠন করেন। তার নৌ ও স্থ বাহিনীর যুগপৎ আক্রমণে বহুদিন পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপল অবরুদ্ধ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এ অভিযান ব্যর্থ হয় তথাপি তাদের এ অভিযানের ফলে ভূমধ্যসাগরে মুসলিম নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

তাছাড়া তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই কুরআন- সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে পারস্য ও বাইজান্টাইন রীতি ভিত্তিক সমাজ কাঠামো রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন।

উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া মুসলিম জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চেয়েছিলেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !