২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশের একাধিক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্প এবং খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।
এক্সপ্রেসওয়ে
প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। সব মহাসড়কে বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয় না । এর প্রধান কারণ, এসব মহাসড়কে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। রয়েছে একের পর এক মোড় । ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি থাকে অনিশ্চিত। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশেষ সুবিধাসহ যে হাইওয়ে নির্মিত হয় সেটি এক্সপ্রেসওয়ে। এটি মাটির ওপর নির্মিত ! হাইওয়ের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করতে কম সময় লাগে । বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ । বিশ্বের দীর্ঘতম এক্সপ্রেসওয়ে : দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে, ভারত। যার দৈর্ঘ্য ১,৩৫০ কিমি ।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এক ধরনের হাইওয়ে । যার অবকাঠামো ফ্লাইওভারের মতো । ফ্লাইওভার শুধু নির্দিষ্ট একটি স্থানের ট্রাফিক অতিক্রম করে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বয়ে যায় একটা শহর বা অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এতে হাইওয়ের মতোই গাড়ি চলে হাই স্পিডে, কোনো সিগন্যাল থাকবেনা, ওঠানামার স্পট থাকবে সীমিত এবং যত্রতত্র গাড়ি থামবেনা । মহাসড়কে চলাচলে নানা বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে বিরামহীনভাবে যান চলাচলের সুযোগ করে দিতেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধারণার উৎপত্তি। পৃথিবীর দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (Road Bridge) ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে, থাইল্যান্ড । যার দৈর্ঘ্য ৫৫ কিমি ।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে
ঢাকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের নাম রাজধানীর পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে । এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে।
- প্রকল্পের নাম : কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে (কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত) ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন ।
- প্রকল্পের রুট : রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের্ ১, ২ ও ৩ নং সেক্টর হয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত। এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে রাজধানীর প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
- দৈর্ঘ্য : ১২.৫ কিমি।
- বাস্তবায়নে : রাজউক ও সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ।
- একনেকে অনুমোদন : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- প্রকল্প ব্যয় : ১০,৩২৯.৬৬ কোটি টাকা ।
- মোট লেন : ১৪টি– ৮টি লেন এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৬টি লেন সার্ভিস রোড। ১২.৫ কিমি সড়কের মধ্যে রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত সাড়ে ৬.৫ কিমি সড়কটি নির্মাণ করা হয় ১৪ লেনবিশিষ্ট। এরমধ্যে ৮ লেন সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ৬ লেন সড়ক স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড। এক্সপ্রেসওয়েটির দুপাশে খনন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন খাল ।
- এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের জন্য রয়েছে ১০টি বড় সেতু, হাতিরঝিলের আদলে ১৩টি আর্চ ব্রিজ (বাঁকানো সেতু), ৫টি এ্যাটগ্রেড ইন্টার সেকশন, চার কিলোমিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের লাইন, ২টি কালভার্ট, ১২টি ওয়াটার বাসস্ট্যান্ড, ১২টি পথচারী-সেতু, ৫টি পাম্প হাউস, ১০টি সুইচ গেইট এবং ৪টি পাতাল পথ ৷
দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম । বাণিজ্যিক এ নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান অন্তরায় যানজট। এ যানজট দূর করে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সরকার। বাংলাদেশের দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এটি। এটির নিকটেই বঙ্গবন্ধু টানেল ও শাহ আমানত বিমানবন্দর অবস্থিত। এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে চট্টগ্রামে বন্দরকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে নগরীর সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে ।
- প্রকল্পের নাম : চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ।
- প্রকল্পের রুট : চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত ।
- একনেকে অনুমোদন : ১১ জুলাই ২০১৭।
- দৈর্ঘ্য : ১৬ কিমি
- প্রস্থ : ১৬.৫ মিটার
- মোট লেন : ৪টি ।