রাষ্ট্রীয় নাম | দ্য সিরিয়ান আরব রিপাবলিক |
রাজধানী | দামেস্ক |
আয়তন | ১,৮৫,১৮০ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ২ কোটি ৩২ লাখ |
ভাষা | আরবি |
মুদ্রা | সিরীয় পাউন্ড |
মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দেশ সিরিয়া। এটি সুমেরীয়, অ্যাসিরীয়, ব্যাবিলনীয়, মিশরীয় ও ফিনিশীয়সহ নানা আদি সভ্যতার পীঠস্থান। বিশ শতকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানগত কারণে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দেশটির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু নতুন সহস্রাব্দে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঘূর্ণাবর্ত ও সশস্ত্র নানা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষিতে সিরিয়া আজ বিশ্বের সবচেয়ে উপদ্রুত এলাকায় পরিণত।
সিরিয়ার ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু
পশ্চিম এশীয় দেশ সিরিয়ার অবস্থান ভূমধ্যসাগরের পূর্ব প্রান্তে ও আরব উপদ্বীপের উত্তরে। দেশটিতে রয়েছে বিস্তীর্ণ মরুভূমি, সমভূমি ও পর্বতশ্রেণী। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুভুক্ত দেশটিতে গ্রীষ্মকালে বাষ্পীভবনের হার বেশি থাকে বলে আবহাওয়া শুষ্ক। শীতকালের তাপমাত্রা মাঝারি থেকে তীব্র।
ইতিহাস
কয়েক হাজার বছর ধরে পারস্য, ম্যাসিডন ও রোমান সাম্রাজ্যের ধারাবাহিক শাসনের পর ৭ম শতক থেকে এটি ইসলামি শক্তি ও সভ্যতার কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৫১৬ সালে অঙ্গীভূত হয় অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর ফ্রান্সের দখলভুক্ত হয় সিরিয়া।
অবশেষে স্বাধীনতা পায় ১৯৪৬ সালে। ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে গোলান মালভূমি হারায় সিরিয়া। ১৯৭১ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটিতে ক্ষমতায় আসেন হাফেজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ।
দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ
২০১১ সালে অন্য কয়েকটি আরব দেশের মতো সিরিয়াতেও শুরু হয় ‘আরব বসন্ত’। সরকারের আন্দোলন দমনের উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংঘাতে দেশি-বিদেশি নানা পক্ষ জড়িয়ে পড়ে। ২০১২ সালের পরের এক দশকে আঞ্চলিক থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নানা পরাশক্তি ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য দেশটিকে বেছে নেয়।
সিরিয়ার বিপুল অংশ দখল নিয়ে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) নামের জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। এর ফলে এদেশে যে সংকট শুরু হয় সেটি জাতিসংঘের ভাষায় ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকট’। জনগোষ্ঠীর বিপুল অংশ বাস্তুচ্যুত হয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে অভিবাসী হয়েছেন ।
প্রতিবেশি আরব দেশগুলোর সঙ্গেও সিরিয়ার সম্পর্কের অবনমন ঘটলে আরব লিগ থেকে বহিষ্কৃত হয় দেশটি । অবশ্য ২০২১ সাল থেকে সিরিয়ার প্রতি আরব রাষ্ট্রগুলোর আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। সম্প্রতি সিরিয়া সংকটের সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে সব পক্ষ।
২০২৩ সালের ৭ মে মিশরের রাজধানী কায়রোতে আরব লিগের সদর দপ্তরে আয়োজিত বৈঠকে সিরিয়ার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ গঠিত আরব লিগের ছয়টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম সিরিয়া।
অর্থনীতি
চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে চরম সংকটে সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবকাঠামো। দেশটির প্রধান প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ পেট্রোলিয়াম, ক্রোম এবং ম্যাঙ্গানিজ আকরিক, লৌহ আকরিক, মার্বেল, জিপসাম, জলবিদ্যুৎ। গম, বার্লি, তুলা, মসুর ডাল, ছোলা, জলপাই, গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদি প্রধান কৃষি পণ্য। অন্যদিকে, পেট্রোলিয়াম, টেক্সটাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পানীয়, তামাক, ফসফেট শিলা খনি প্রধান শিল্পপণ্য ।
নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও সংস্কৃতি
সিরিয়ায় বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। কুর্দি, আর্মেনীয়, অ্যাসিরীয়, খ্রিষ্টান, দ্রুজ, আলাউইট শিয়া ও আরব সুন্নিসহ বিভিন্ন জাতি ও ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আবাসস্থল এটি। তবে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
পালমিরা : ‘মরুভূমির মুক্তা’ নামে পরিচিত সিরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত পর্যটন শহরটি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের স্মৃতিবিজড়িত। খ্রিষ্টপূর্ব ২ হাজার বছরের পুরোনো এই শহর মধ্যযুগে ছিল রেশম পথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট।
আলেপ্পো : কয়েকটি সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র এই নগরীতে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীনতম দুর্গ ।
মসজিদ : উমাইয়া দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম ও প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম।
বসরার থিয়েটার: বসরা নগরীতে রয়েছে অসংখ্য সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দ্বিতীয় শতকে নির্মিত রোমান থিয়েটার।
ঐতিহাসিক অন্যান্য স্থাপনা : সালাহউদ্দিনের দুর্গ, দামেস্কের জুপিটারের মন্দির, ক্রুসেডের জন্য বিখ্যাত প্রাসাদ ‘ক্র্যাক দ্য শ্যাভেলিয়ে’।