জেলার নাম | বগুড়া |
আয়তন | ২,৯১৯ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ৩৭,৩৪,৩০০ (২০২২) |
উপজেলা | ১২টি |
সংসদীয় আসন | ৭টি |
জাতীয় প্রতিষ্ঠান | পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (১৯৭৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা শহীদ চাঁন্দু ষ্টেডিয়াম এরুলিয়া স্টল বিমান বন্দর দেশের প্রথম সিরামিক কারখানা (১৯৫৯) বিসিক শিল্পনগরী। |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | জিলা স্কুল (১৮৫৩), সরকারি আযিযুল হক কলেজ |
সান্তাহার রেল জংশন | আদমদীঘিতে অবস্থিত (১৮৭৮) |
‘উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে খ্যাত বগুড়া সুপ্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী। বর্তমানে এই জেলা দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ২০১৬ সালে জেলাটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বগুড়া জেলার ইতিহাস
সম্রাট অশোক বাংলা বিজয়ের পর নাম রাখেন ‘পুণ্ড্রবর্ধন’। মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের সময় পুণ্ড্রবর্ধনের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ‘পুণ্ড্রনগর’ তথা বগুড়া । চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতকে ভারত ভ্রমণকালে এটি পরিদর্শন করেন । ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে শিবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়ার তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষকে হিউয়েন সাঙ-য়ের ‘পুণ্ড্রনগর’ হিসেবে শনাক্ত করেন।
ব্রিটিশ ভারতে ১৮২১ সালে রাজশাহীর আদমদিঘি, শেরপুরের নওখিল ও বগুড়া, রংপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ এবং দিনাজপুরের লালবাজার, ক্ষেতলাল ও বদলগাছি নিয়ে ‘বগুড়া জেলা’ গঠন করা হয়। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দিন বগড়াগণের শাসনামলে (১২৭৯-১২৮২) এ অঞ্চলের নাম হয় ‘বগড়া’ বা ‘বগুড়া’। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল জেলার ইংরেজি বানান Bogra থেকে Bogura করা হয়।
মহাস্থানগড় ও অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনা
১৯২৮-২৯ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তৎকালীন মহাপরিচালক কাশীনাথ নারায়ণ দীক্ষিতের তত্ত্বাবধানে মহাস্থানগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। দুর্গের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে যেসব প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে তা উপশহরের সাক্ষ্য বহন করে।
ভাসু বিহার : গড় থেকে ৬ কিমি দূরে অবস্থিত এই স্থান ‘নরপতির ধাপ’ নামে পরিচিত। এখানে একটি মন্দিরের স্থাপতিক কাঠামো ও দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারামসহ প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে।
শীলাদেবীর ঘাট : গড়ের পূর্বপাশে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র)-এর কাছে রাজা পরশুরাম পরাজিত হলে তাঁর বোন শীলাদেবী এখানে আত্মাহুতি দেন।
কালীদহ সাগর : গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর ও পদ্মাদেবীর বাসভবন। প্রতি মার্চে এখানে হিন্দুদের বারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়।
গোকুল মেধ : সদর থানাধীন গোকুল গ্রামে খননকৃত প্রত্নস্থলটি জনপ্রিয় লোকগাথার নায়ক-নায়িকা ‘বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর’ বলে জনসাধারণের কাছে পরিচিত। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে এটি নির্মিত হয় ।
গোবিন্দ ভিটা : গোবিন্দ ভিটা খনন করে গুপ্ত যুগ, প্রাথমিক পাল যুগ, পাল-পরবর্তী যুগ সুলতানি আমলে নির্মিত নিদর্শন পাওয়া গেছে।
মাহী সওয়ার মাজার শরীফ : হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখীকে (র:) কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজারটি গড়ে উঠেছে। কথিত আছে যে, তিনি মাছের পিঠে চড়ে বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। আর সেজন্যই তাঁর নাম ‘মাহী সওয়ার’।
মহাস্থান জাদুঘর : গড়সহ আশপাশের এলাকা খননের ফলে প্রাপ্ত প্রত্ন সম্পদের সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৭ সালে এটি গড়ে তোলা হয়। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে পাওয়া দুই হাজার ৬৮৭টি প্রত্নবস্তু ।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : খোদার পাথর ভিটা, জিউৎকুণ্ড কুপ, ভীমের জাঙ্গাল, মানকালীর ঢিবি, বৈরাগীর ভিটা, স্কন্ধের ধাপ, তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ, বিহার ধাপ এবং শেরপুরের খেড়ুয়া মসজিদ।
নদনদী
যমুনা নদী, করতোয়া, বাঙ্গালী, ইছামতি, হলহলিয়া, সুখদহ, মহিষাবান, ডাকুরিয়া, বেলাই, ভদ্রাবতী, চন্দ্রাবতী, গাংনই, গজারিয়া, মানস, ইরামতী, নাগর, ভেলকা।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
সম্প্ৰতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া বগুড়ার দইয়ের জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ শাসনামলে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানকার আঠালো আলুর দারুণ খ্যাতি। মহিষাবানে প্রতি বছর মাঘের শেষে আয়োজিত হয় দুশো বছরের ঐতিহ্য ‘পোড়াদহের মাছের মেলা’। ষাটের দশক থেকে বগুড়ায় গড়ে উঠেছে স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশের কারখানা। সারাদেশের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করছে জেলার এই ফউন্ড্রি শিল্প। রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে ।
ব্যক্তিত্ব
সন্ধ্যাকার নন্দী, প্রফুল্ল চাকী, মোহাম্মদ আলী, ভাষাসৈনিক গাজিউল হক, এম আর আখতার মুকুল, বীরউত্তম খাদেমুল বাশার, আখতারুজ্জমান ইলিয়াস, রোমেনা আফাজ, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, আঞ্জুমান আরা বেগম, খুরশীদ আলম, খন্দকার ফারুক আহম্মেদ।