শ্রমবাজারের অবস্থা বোঝার সুবিধার্থে ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ সূচক হলো বেকারত্বের হার। অর্থনীতিবিদরা শ্রমবাজার বলতে বোঝান শ্রমের জোগান ও চাহিদাকে। বেকারত্বের হার দিয়ে একটি দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থাও বোঝা যায়। ফলে এর ভিত্তিতে দেশটি আর্থিক নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে।
বেকারত্বের হার নির্ধারণ যেভাবে
ব্যক্তি যখন কাজ করতে চেয়েও পান না তখন সে অবস্থাকে বলে বেকারত্ব। শ্রমবাজারে এ-ধরনের ব্যক্তির শতাংশের হারই হলো বেকারত্বের হার। আর এ থেকে শ্রমশক্তির হারও পাওয়া যায়। শ্রমশক্তিতে বেকার ও কর্মে নিযুক্ত উভয় গোষ্ঠীই অন্তর্ভুক্ত থাকে । আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ব্যাখ্যামতে—
- কর্মে নিযুক্ত জনগোষ্ঠী— যাঁরা এক সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টার জন্যও কোনো ধরনের অর্থোপার্জনকারী কাজ করেছেন।
- বেকার জনগোষ্ঠী— অর্থ উপার্জন করার মতো কোনো কাজে নিযুক্ত নন কিন্তু সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন যারা।
- শ্রমশক্তির বাইরে যাঁরা— এই গ্রুপে রয়েছেন শিক্ষার্থী, শিশু বা পরিবারের সদস্যদের দেখভালের দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত এবং শারীরিক দিক থেকে স্থায়ীভাবে অক্ষম এমন কর্মক্ষম বয়সের জনগোষ্ঠী।
তিন ধরনের বেকারত্ব
চক্রাকার বেকারত্ব : মন্দার সময়ে বেকারত্ব বাড়ে এবং প্রবৃদ্ধির সময় কমে। এই সময়গুলোতে বেকার শ্রমিকদের সংখ্যায় যে বৈচিত্র্য আসে সেটাই চক্রাকার বেকারত্ব। সরকারের নীতি নির্ধারণে এই পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনেক।
কাঠামোগত বেকারত্ব : যখন কর্মসন্ধানী জনগোষ্ঠী ও বিদ্যমান কাজের সুযোগের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয় তখন সেই পরিস্থিতিকে বলে কাঠামোগত বেকারত্ব। সাধারণত বৃহৎ পরিসরে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে এ-ধরনের সংকট দেখা দেয়।
স্বল্পকালীন বেকারত্ব : শ্রমবাজারের স্থিতিস্থাপকতার জন্য শ্রমিকদের আনাগোনা অত্যন্ত জরুরি। কর্মসন্ধানীদের যথোপযুক্ত কাজ খোঁজা ও ব্যবসায়ে উপযুক্ত কর্মী খোঁজার সময়টায় স্বল্পস্থায়ী কর্মহীনতা থাকতে পারে। একে বলে স্বল্পকালীন বেকারত্ব।
আরও যত ধরন : অর্ধ-বেকারত্ব তখনই ঘটে যখন লোকে কাজে যুক্ত থাকলেও পরিপূর্ণ কর্মক্ষম হতে পারেন না। ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কাজ খুঁজছেন কিন্তু পরে আশা ছেড়ে দিয়েছেন এমন বেকারত্বকে ছদ্ম- বেকারত্ব বলা হয়। মৌসুমি বেকারত্ব বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘটে থাকে ।
বেকারত্বের বৈশ্বিক পরিস্থিতি
তিন বছর আগে করোনা মহামারির শুরু থেকেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থবিরতা থেকে বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর আয়ের রেখাচিত্রে বিপুল অবনমন দেখা দেয়। বেড়ে যায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণহীন তরুণের সংখ্যা। মহামারির প্রকোপ কমে আসার পর সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশগুলো নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয় ইউক্রেন সংকট। ফলে সমস্যার বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) “ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক ট্রেন্ডস ২০২৩”-এ বলা হয়, চলতি বছর বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের হার বাড়বে মাত্র ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালের অর্ধেকেরও কম। বিশ্বব্যাপী বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ বেড়ে দাঁড়াবে ২০ কোটি ৮০ লাখে। এ সংখ্যা বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শ্রমবাজারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন নারী ও নবীন শ্রমশক্তি। ২০২২ সালে শ্রমবাজারে মোট নারী শ্রমশক্তির হার ছিল ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ। পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার অন্যান্য বয়স-গ্রুপের চেয়ে তিন গুণ বেশি। চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৩ শতাংশ।
বেকারের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৫ কোটি ৪১ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি । করোনার অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে শোভন কর্মসংস্থান কমে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার বেড়ে গিয়েছিল । ২০২২ সালে প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিযুক্ত দেখা গিয়েছে। অনেকে চাকরি হারানোর ফলে বাধ্য হয়ে ‘গিগ’ অর্থনীতিতে প্রবেশ করেন। যোগ দেন পণ্য সরবরাহের মতো কাজে। কর্মজগতে এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এতে প্রকৃত মজুরি কমে যায়।
২০২২ সালে বিশ্বের মোট শ্রমশক্তির ২১ কোটি ৪০ লাখ ছিলেন চরম দারিদ্র্য-কবলিত। আইএলও জানায়, উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থানে এগিয়ে রয়েছে। সমস্যা সবচেয়ে বেশি নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে এসব দেশে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট হৌয়াংবো তাই মনে করেন, “বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধির পতি থমকে যাওয়ার অর্থ হলো, মহামারির সময় আমরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম তা থেকে ২০২৫ সালের আগে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।”
দেশের শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২৯ মার্চ ২০২৩ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার (বেকারত্ব ৩ দশমিক ৬ শতাংশ)। ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ (বেকারত্ব ৪ দশমিক ২ শতাংশ)। বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ এবং নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার।
শ্রমশক্তিতে এখন রয়েছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার মানুষ । এদের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। কর্মে নিয়োজিতদের মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার জন পুরুষ। নারীর সংখ্যা ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার। ২০২২ সালের জুনে পরিচালিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন মতে, দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১ (মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ)। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ‘তরুণ শ্রমশক্তি’ হিসেবে ধরা হয় ।
গত ছয় বছরে এই বয়সীদের মধ্যে বাড়তি ৬৭ লাখ ২০ হাজারের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই বয়স-গ্রুপে নারীদের কর্মসংস্থান বেশি হয়েছে। বাড়তি ৬৩ লাখ ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থানের বিপরীতে একই বয়সী পুরুষদের কর্মসংস্থানের সংখ্যা মাত্র ৪ লাখ ১০ হাজার। শ্রমশক্তির ৩ কোটি ২২ লাখ কৃষি খাতে, ১ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার শিল্প খাতে এবং ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার সেবা খাতে কাজ করেন।
উল্লেখ্য, জরিপটি পরিচালনার জন্য পুরো দেশকে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকায় ভাগ করে প্রতি এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয় ।
অন্যান্য প্রতিবেদনে দেশের শ্রমশক্তি
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার “ এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক ২০১৮” শীর্ষক প্রতিবেদনে ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৮টি দেশের কর্মসংস্থানের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব দ্বিগুণ বেড়েছে (১২ দশমিক ৮ শতাংশ)। দেশের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ছিল আলোচ্য ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
- ২০১৯ সালে ব্র্যাক, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী চার হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীকে নিয়ে একটি জরিপ চালায় । দেখা যায় যে, এই বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী মাত্র ১৬ শতাংশ। ১৪ শতাংশ কারিগরি প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ইংরেজিতে দক্ষতায় এগিয়ে মাত্র ২১ শতাংশ তরুণ। কম্পিউটার ব্যবহার ও ভাষাগত দক্ষতার এই চিত্রটি গ্রামাঞ্চলে ছিল আরও করুণ।
- ২০১৮ সালে বিবিএস পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশ চাকরিজীবী কাজ করেন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৪ শতাংশ এবং সরকারি কর্মক্ষেত্রে ৩ শতাংশের মতো শ্রমশক্তি যুক্ত রয়েছেন। প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন ২৫ লাখ তরুণ ।
- মহামারির কারণে দেশে নতুন ধরনের কাজও তৈরি হচ্ছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২০ সালে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও বেকারত্ব দূরীকরণ
একটি দেশের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংখ্যা যদি কর্মক্ষমতাহীন জনসংখ্যার তুলনায় বেশি হয় তাহলে এই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ বলে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনেফপি)-এর “ওয়ার্ল্ড পপুলেশন স্টেট” অনুসারে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশের বয়স এই সীমার মধ্যে রয়েছে। কর্মক্ষম মানুষের এই আধিক্য ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বজায় থাকবে। এটিকে কাজে লাগানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তা হলো—
- এক, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণদের কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তোলা ।
- দুই. প্রণোদনার মাধ্যমে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ।
- তিন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া ।
- চার. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার জন্য নতুন গ্র্যাজুয়েটদের তৈরি করা।
- পাঁচ, চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করা। ছয়. দক্ষতার ঘাটতি পূরণে অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন।
- সাত. সফট স্কিল অর্জনে জোর প্রদান ।
বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০১৯-এ বলা হয়, অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর, উৎপাদন শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার, যান্ত্রিকীকরণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কেন্দ্র করে কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কর্মসূচির দিকে গুরুত্ব দিলে বেকারত্ব সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে।
খুলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুয়ার
যন্ত্রের কাছে কাজ হারানোর ভয় মানুষের চিরকালের। একুশ শতকে এসেও আমরা উৎকণ্ঠাভরে ভাবছি, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আমাদের কাজ কেড়ে নেবে ? দ্রুতগতিতে এআইয়ের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্সস।
মার্চে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বর্তমান চাকরিগুলোর এক চতুর্থাংশ চলে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে।
অতীতে যন্ত্র নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনার মধ্যেও যন্ত্র মূলত মানুষের শ্রমকে প্রতিস্থাপন করেছে। যেমন ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটারের সাহায্যে মানুষের জন্য গণনা সহজ হয়েছে। আবার কিছু প্রযুক্তি অনেক কাজকে অপ্রয়োজনীয় করে দিলেও নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে । যেমন টাইপরাইটার বাদ গিয়ে এসেছে কম্পিউটার— রিকশা থেকে অটোরিকশা। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা ।
তথ্যকণিকা
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৩০টি দেশের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে “ওয়ার্কিং ফ্রম হোম : ফ্রম ইনভিজিবিলিটি টু ডিসেন্ট ওয়ার্ক” শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে যাঁরা ঘরে বসে কাজ করছেন তাঁদের আরও সুরক্ষা দরকার। দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে যাঁরা ঘরে থেকে কাজ করেন তাঁদের আয় অন্যদের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।
- আইএলও-এর হিসাবে, বিশ্বের মাত্র অর্ধেক শ্রমশক্তি শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি করেন। বাকিরা হয় অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নিম্ন দক্ষতার চাকরি করছেন অথবা যথাযথ যোগ্যতা ছাড়াই উচ্চ দক্ষতার কাজে যোগ দিয়েছেন। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে শ্রমশক্তির অন্তত ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু উচ্চ-মধ্যম ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই হার যথাক্রমে ৫২ ও ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের দেশে এই হার মাত্র ২৫ শতাংশ।
- ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল মাত্র তিন দশমিক চার শতাংশ; যা ১৯৬৯ সালের পর সর্বনিম্ন। তবে দেশটির প্রযুক্তি খাতে চাকরিচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছেই। অন্যদিকে, সামগ্রিকভাবে কমেছে মজুরি বৃদ্ধি।