উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপগুলোর মধ্যে ‘Erasmus Mundus Scholarship’কে অন্যতম আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর ইউরোপিয়ান কমিশন হতে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এ বৃত্তির অধীনে ইউরোপের প্রায় সব দেশে নিজের পছন্দমতো বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
পরিচিতি
১৯৮৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। প্রতি বছর ৩০০-এর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের হাজার হাজার মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থী ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। এই স্কলারশিপের অধীনে একজন শিক্ষার্থী ন্যূনতম ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারেন । এক সময় শুধু মাস্টার্স করার সুযোগ থাকলেও এখন ব্যাচেলর ও পিএইচডি করার জন্যও দারুণ সব সুযোগ রয়েছে।
সুযোগ-সুবিধা
- টিউশন ফিতে ১০০% ছাড়
- মাসে ১১০০-১৪০০ ইউরো করে বৃত্তি
- প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাবেন সম্পূর্ণ ভ্রমণ ভাতা, স্বাস্থ্যবীমা ও গবেষণা সম্পর্কিত সকল খরচ ৷
- সেমিস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকিট ।
- এছাড়াও থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে শুরু করে সকল ধরনের লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফিসহ বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স/সামার স্কুল/উইন্টার স্কুল প্রভৃতি সুবিধা একেবারে ফ্রি ।
- এমনকি দেশভেদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে সম্পূর্ণ বিনা খরচে খাবারের সুবিধাসহ শহরভেদে পাবলিক পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক খরচে চলাচলের সুবিধা; ইউরোপের বিমান চলাচলেও রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রমোশন ব্যবস্থা ।
আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ২টি রিকমেন্ডেশন লেটার
- লেটার অব মোটিভেশন
- অফিসিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
- পূরণকৃত আবেদনপত্র
- জীবন বৃত্তান্ত (Euro pass ফরমেট হলে ভালো হয়)
- পাসপোর্ট
- প্রুফ অব রেসিডেন্স
- IELTS পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর
- পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আলাদাভাবে Research Proposal বা প্রস্তাবিত গবেষণাপত্ৰ ।
মোটিভেশন লেটার
মোটিভেশন লেটার স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে আছেন এমন কারও সহযোগিতা নিতে পারেন । মনে রাখবেন, আপনার মোটিভেশন লেটার স্কলারশিপ প্রাপ্তিতে আপনার যোগ্যতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে । সেখানে প্রত্যেক প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে । প্রতিটি প্রোগ্রামের ওয়েবপেজ-এ আবেদন করার প্রক্রিয়া দেওয়া থাকে । কাগজপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হবে। এছাড়া কোর্স ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কনটাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে। এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আলাদাভাবে কোনো ইন্টারভিউ নেওয়া হয়না। আর আবেদন করার জন্য কোনো প্রকার ফি দিতে হয়না ।
আবেদনের সময়সীমা
বেশিরভাগ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি বা মার্চের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে থাকে ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- গতানুগতিক আবেদন না করে প্রথমেই নিজের পড়ালেখা ও আগ্রহের সাথে মিল রেখে সবচেয়ে ভালো প্রোগ্রামগুলো খুঁজে আলাদা করা দরকার । এতে করে আবেদন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সময় নিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ আবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে।
- ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স কোর্সসমূহ : https://eacea.ec.europa.eu/erasmus-plus/emjmd- catalogue_en এবং ইরাসমাস মুন্ডাস পিএইচডি: https://ec.europa.eu/ research/mariecurieactions /
- ইরাসমাস স্কলারশিপের সামান্য সংখ্যক কিছু প্রোগ্রামে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার স্কোর জমা না দিয়েও আবেদন করা যায় । এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যদি তার স্নাতক পড়ালেখা সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে করে থাকেন, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি সনদ সংগ্রহ করে জমা দিতে হয় ।
- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, স্নাতক/ স্নাতকোত্তর গবেষণা কাজের সুপারভাইজার থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নেওয়া ভালো ৷
- স্নাতকে সিজিপিএ কম থাকলেও আবেদন করা যাবে (ইতিপূর্বে প্রোগ্রামভেদে ২.৫০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়েছে)।
Never Give Up, Start Today!
প্রতি বছর এই স্কলারশিপের অধীনে বাংলাদেশ থেকে স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীরা ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন। ৬ মাস, এক বছর/দুই বছরের কোর্স কিংবা পিএইচডি ডিগ্রিতে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে অনেকে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার কিংবা স্বনামধন্য কোম্পানিতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ৫৫ জন, ২০১৯ সালে ৭৮ জন, ২০২১ সালে ১৩৯ জন, এবং ২০২২-২০২৩ সেশনে ইরাসমাস প্লাস প্রকল্পে ১৫১ জন স্কলারশিপ পেয়ে বাংলাদেশ এ বৃত্তি প্রাপ্তির দিক থেকে এ সেশনে সারা পৃথিবীতে ৩য় স্থান অর্জন করে। সুতরাং হতাশ না হয়ে লেগে থাকুন, সাফল্য আসবেই