পটভূমি
১৭৮১ সালে যশোর জেলা গঠিত হয় । ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে যশোর সদর মহকুমা, খুলনা সদর মহকুমা, কচুয়া ব্যতীত বাগেরহাট মহকুমা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চল নিয়ে পুনর্গঠিত হয় যশোর জেলা। ১৮৮২ সালে খুলনা ও বাগেরহাট — যশোর থেকে পৃথক করা হয়।
১৯৮৪ সালে জেলা পুনর্বিন্যাসের সময় বৃহত্তর যশোর জেলা বিভক্ত হয়ে যশোর, ঝিনাইদহ নড়াইল ও মাগুরা জেলার সৃষ্টি হয় । ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রাচীন যশোর জেলাটি আজ তার একটি খণ্ডিত অংশে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর।
নামকরণ
যশোর নামের উৎপত্তি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথম মতানুসারে যশোর ‘শব্দ যশোহর এর অপভ্রংশ, যা যশ হরণ করে তাই যশোহর। অর্থাৎ যশোর শব্দের অর্থ পরের যশ হরণকারী যশস্বী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান । রাজা বসন্ত রায় ও তাঁর ভাই বিক্রমাদিত্য বাংলার রাজধানী গৌড়ের যশ হরণ করে যশস্বী হয়েছিলেন বলে এ জেলার নাম হয় যশোহর বা যশোর।
আবার অনেকের মতে, যশোরেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। কিছু ব্যক্তির মতে, খান জাহান আলী বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুরলীতে আগমন করেন এবং এই বাঁশের সাঁকো (জসর) হতে যশোর নামের উৎপত্তি ।
প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা : ৮টি যশোর সদর, চৌগাছা, শার্শা, ঝিকরগাছা, কেশবপুর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও মণিরামপুর
- থানা : ৯টি (বেনাপোল থানাসহ প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে)
- পৌরসভা : ৮টি
- ইউনিয়ন : ৯৩টি
- জাতীয় সংসদের আসন : ৬ টি
সাধারণ তথ্য
- প্রতিষ্ঠা : ১৭৮১ সালে
- সীমানা : উত্তরে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা, পূর্বে খুলনা ও নড়াইল জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ
- আয়তন : ২,৬০৬.৯৪ বর্গ কিমি
- জনসংখ্যা : ৩০,৭৬,৮৪৯ জন
- সাক্ষরতা (৭ বছর ও অনূর্ধ্ব) : ৭৯.২৮% [সূত্র: BBS
- ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১,১৮০ জন
- প্রধান নদনদী > কপোতাক্ষ, ভৈরব, চিত্রা, মুক্তেশ্বরী ও হরিহর । আন্তঃসীমান্ত নদী : বেতনা ।
প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা
৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ যশোর ক্যান্টনমেন্টের অদূরে মনোহরপুর . গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াইয়ের পর একপর্যায়ে পাকবাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়। যশোরে প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী যশোর ছেড়ে পালিয়ে যায় খুলনার দিকে। আর এর মাধ্যমে প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা।
বেনাপোল স্থলবন্দর
যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দর দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। এর আয়তন ৮৬.৬৮ একর। শুল্ক আইন ১৯৬৯ এর আওতায় ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যারহাউজিং কর্পোরেশনের অধীনে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ১২ জানুয়ারি ২০০২ বেনাপোল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০২ স্থলবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়।
জানেন কি যশোর জেলা
- আয়তনে : দেশের ২৪তম খুলনা বিভাগের : ৪র্থ
- জনসংখ্যায় : দেশের ১৬তম খুলনা বিভাগের : ১ম
মুক্তিযুদ্ধে যশোর
- সেক্টর > ৮নং
- হানাদার মুক্ত দিবস— ৩ ডিসেম্বর : চৌগাছা ৪ ডিসেম্বর : শার্শা ৬ ডিসেম্বর : যশোর সদর ও ঝিকরগাছা ৭ ডিসেম্বর : কেশবপুর ৮ ডিসেম্বর : বাঘারপাড়া ৯ ডিসেম্বর : অভয়নগর ১৬ ডিসেম্বর : মনিরামপুর
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত (কবি ও নাট্যকার)
- রাধাগোবিন্দ চন্দ্র (জ্যোতিষ্ক বিজ্ঞানী)
- দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (শিশু সাহিত্যিক)
- শাহ মোহাম্মাদ ফারুক (বিজ্ঞানী)
- যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বিপ্লবী নেতা)
- ফরিদা আক্তার ববিতা (অভিনেত্রী)
উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
- যশোর সদর > কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি, হাজী মুহাম্মদ মহসিনের ইমামবাড়ী
- কেশবপুর > শেখপুরা মসজিদ, ভরত ভায়না বৌদ্ধমন্দির, মধুপল্লী
- অভয়নগর > ভবদহ, শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি, এগারো শিব মন্দির
- শার্শা > বেনাপোল স্থলবন্দর
- চৌগাছা > বেড় গোবিন্দপুর বাওড়, খড়িঞ্চা বাওড়
- বাঘারপাড়া > কালুডাংগা মন্দির
- মণিরামপুর > ঝাপা বাওড়
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা ।
- দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা ।
- দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর (বেনাপোল) অবস্থিত ।
- খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত।
- গোলাপ ফুল উৎপাদনে শীর্ষ জেলা ।
- প্রাচীনকালে প্রথমে তাম্রলিপি এবং পরে বঙ্গ রাজ্যের অধীনে ছিল ।