৪ নভেম্বর ২০২২ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’। এদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি। অন্যদিকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকরের সুবর্ণজয়ন্তী।
সংবিধান
সাধারণ অর্থে সংবিধান (Constitution) হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পরিচালনার মৌল নীতিমালা। রাজনৈতিক পরিভাষায় সংবিধান হলো রাষ্ট্রের মৌল ও সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠন পরিচালনার মৌলিক নীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকে। সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, জনগণের মৌলিক অধিকার, সরকার পদ্ধতি, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে পরিচালিত হবে তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে।
লিখিত না অলিখিত এদিক বিবেচনায় সংবিধানকে দু’শ্রেণিভুক্ত করা হয়। অধিকাংশ দেশের সংবিধানই লিখিত, গ্রন্থভুক্ত। আবার সংবিধান অলিখিতও হয়। কিছু মৌলিক আইন, প্রথা, পূর্ব- অভিজ্ঞতা সংবিধানের মতো গণ্য হয়। যেমন— যুক্তরাজ্যের সংবিধান। পরিবর্তনের পদ্ধতি বিবেচনায় সংবিধান দু’রকম। সুপরিবর্তনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত এবং দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।
গণপরিষদ বা সাংবিধানিক পরিষদ
Constituent Assemblyকে বাংলায় গণপরিষদ বা সাংবিধানিক পরিষদ বলা যায়। একটি বিশেষ আইন সংক্রান্ত পরিষদ যার দায়িত্ব সংবিধান প্রণয়ন, সংবিধানের মূলনীতি নির্ধারণ বা সংবিধানের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা। ১৭৮৯ সালে Constituent Assembly নামটি প্রথম ব্যবহার করে ফরাসি ন্যাশনাল এসেম্বলি।
বাংলাদেশে গণপরিষদ গঠন
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠন করা হয় । বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নেও এমন একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। ৭ এবং ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে (জাতীয় পরিষদের ১৬৯ + প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০ = ৪৭৯ জন) ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT) কী, কেন, কিভাবে?
- বাংলায় সুবাদারী শাসন
- জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ বিধায়ক
- বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
- মৌলভীবাজার জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- জাতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- বারাে ভূঁইয়া : ইতিহাসের গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়
- সুনামগঞ্জ জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
- খুলনা জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
কেননা ৪৭৯ জন সদস্যের মধ্যে জাতীয় পরিষদের মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ১০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছিলেন ১২ জন, দালালির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন ৫ জন, দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ৪৬ জন, পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন ২ জন (নুরুল আমীন ও স্বতন্ত্র সদস্য রাজা ত্রিদিব রায়), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি গ্রহণ করেছিলেন ১ জন । গণপরিষদের ৪০৩ জন সদস্যের মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ, ১ জন ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) এর এবং বাকি ২ জন ছিলেন নির্দলীয়।
সংবিধান রচনার দিনপঞ্জি ১৯৭২
✽ ১১ জানুয়ারি ➦ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি।
✽ ২৩ মার্চ ➦ গণপরিষদের আদেশ জারি। যা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে কার্যকর ।
✽ ১০ এপ্রিল ➦ গণপরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। তিনি প্রথমে নিজেই নিজের শপথবাক্য পাঠ করেন এবং পরবর্তী সময়ে পরিষদের অন্য সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। একই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের সমর্থনে শাহ আব্দুল হামিদ (রংপুর ৫, জাতীয় পরিষদ) স্পিকার ও তাজউদ্দীন আহমদের প্রস্তাবে এবং ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর সমর্থনে মোহাম্মদ উল্লাহ (নোয়াখালী ২৭৫, প্রাদেশিক পরিষদ) ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।
✽ ১১ এপ্রিল ➦ সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে ‘খসড়া সংবিধান প্ৰণয়ন কমিটি’ উত্থাপন করলে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
✽ ১৭ এপ্রিল➦ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক।
✽ ১১ অক্টোবর ➦ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির শেষ বৈঠকে খসড়া সংবিধানের চূড়ান্ত রূপ গৃহীত।
✽ ১২ অক্টোবর ➦ গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন কর্তৃক খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন।
✽ ১৯-৩০ অক্টোবর ➦ খসড়া সংবিধানের ওপর প্রথম পাঠ অনুষ্ঠিত।
✽ ৩১ অক্টোবর-৩ নভেম্বর ➦ খসড়া সংবিধানের ওপর দ্বিতীয় পাঠ অনুষ্ঠিত।
✽ ৪ নভেম্বর ➦ (১৮ কার্তিক ১৩৭৯, শনিবার) খসড়া সংবিধানের ওপর তৃতীয় বা সর্বশেষ পাঠ অনুষ্ঠিত এবং গণপরিষদ কর্তৃক খসড়া সংবিধান গৃহীত। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
✽ ১৪ ডিসেম্বর➦ অধিবেশন শুরু হলে গণপরিষদের সদস্যরা হস্তলিখিত মূল সংবিধানে বাংলা লিপি ও ইংরেজি লিপিতে স্বাক্ষর করেন। স্পিকারের আমন্ত্রণে সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩৯৯ জন সদস্য হাতে লিখিত মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।
✽ ১৫ নভেম্বর ➦ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের শেষ সময় পর্যন্ত কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় ৪ জন সদস্য– মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ আজিজার রহমান এবং মোহাম্মদ ইব্রাহীম সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি ।
✽ ১৫ ডিসেম্বর ➦ গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ও অভিপ্রায় অনুযায়ী, রাত ১২টায় গণপরিষদের বিলুপ্তি ঘটে।
✽ ১৬ ডিসেম্বর ➦ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।