আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বাংলাদেশকে একাদশবারের মতো ঋণ দিচ্ছে। ৯ নভেম্বর ২০২২ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানান । স্টাফ পর্যায়ে ঋণ প্রদানে সম্মতির পর বোর্ড সভায় ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় । ২০১২ সালে বাংলাদেশ সর্বশেষ IMF থেকে ঋণ নেয়।
ঋণ পেতে আলোচনা
- ২৪ জুলাই ২০২২ : ঋণ চেয়ে IMF-কে চিঠি ।
- ১২ অক্টোবর : ওয়াশিংটনে IMF’র সঙ্গে বৈঠক।
- ২৬ অক্টোবর : IMF’র প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর শুরু ।
- ২৭ অক্টোবর-৮ নভেম্বর : সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক
- ৯ নভেম্বর : IMF ঋণ দিতে সম্মতি জানায় ।
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ : IMF’র ডেপুটি ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট এম সায়েহ ঋণ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশে আসবেন।
ঋণদানের শর্তসমূহ
- রাজস্ব আয় বাড়ানো
- রাজস্ব খাতে সংস্কার
- ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন
- কৃষি-জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো
- ভর্তুকি সুনির্দিষ্ট করা
- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
- মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা
- আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করতে পদক্ষেপ
- ঋণে নজরদারি বাড়ানো
- ব্যাংকের খেলাপি ঋণে লাগাম টানা
- ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমানো
- ব্যাংক পর্ষদের সংস্কার ব্যাংকের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া
- বন্ড মার্কেট ও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন
- জলবায়ু খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জ্বালানির দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা
- বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করা
- সরকারের ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকা।
বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ
৯ নভেম্বর ২০২২ সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। IMF’র মানদণ্ড অনুযায়ী যদি হিসাব করা হয় তাহলে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল এবং অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা অর্থ বাদ দিলে ৮ বিলিয়ন ডলার হিসাবের বাইরে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে রিজার্ভ হবে ২৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রিজার্ভ হিসাবায়নে নতুন পদ্ধতি
IMF বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবায়ন পদ্ধতি অ্যাকচুয়াল ভিত্তিতে করার পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক IMF’র পরামর্শ নীতিগতভাবে মেনে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসাবায়নে নতুন পদ্ধতি প্ৰয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এর ৭/অ ধারায় বৈদেশিক মুদ্রার ধারণ ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন
- বিভিন্ন পরীক্ষাতে এশিয়া মহাদেশ থেকে যত প্রশ্ন এসেছে
- সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (CEPA)’র সাতকাহন
- বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযােগী
- নোবেল পুরস্কার ২০২২ বিজয়ীদের তালিকা
- মিখাইল গর্বাচেভের উত্থান-পতন
- যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস
- রানি এলিজাবেথের প্রয়াণ রাজা হচ্ছেন চার্লস
- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
- আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ
বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার দায় অর্থাৎ আমদানি দায় পরিশোধের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, সাধারণত কোনো দেশের তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানোর মতো মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রস রিজার্ভ এবং অন্যটি অ্যাকচুয়াল বা নিট রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস রিজার্ভ হিসাবকালে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে, তাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেই রিজার্ভই বাইরে প্রকাশ করে থাকে। অ্যাকচুয়াল বা নিট হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণভাবে সংরক্ষণ করলেও তা সাধারণত বাইরে প্রকাশ করে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসে, ৪৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব হয় IMF’র ব্যালান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী।
বাংলাদেশের যত ঋণ
IMF’র তিনটি তহবিল থেকে বাংলাদেশ মোট ঋণ পাবে ৩,৪৬৮ বিলিয়ন SDR । যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রথম কিস্তিতে পাওয়া যাবে ৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৫০,০০০ SDR বা ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১,০০০ মার্কিন ডলার ৷
বাকি ঋণ প্ৰতি ছয় মাস অন্তর ৫১৯ মিলিয়ন SDR হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। সুদের হার হবে ফ্লোটিং বা বাজারভিত্তিক। বর্তমান SDR সুদের হার অনুযায়ী মোট ঋণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২.২ % উল্লেখ্য, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, SDR সুদের হার হলো ২.৬৪১%। ১ ডলার সমান ০.৭৭৬৩৬৭ SDR । Special Drawing Rights (SDR) হচ্ছে রিজার্ভ মুদ্রা, যা IMF সদস্যদেশগুলোকে ঋণ আকারে দেওয়া হয়।
বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ECE) ECF-Extended Credit Facility
- প্রাপ্ত ঋণ : ৮২২.৮২ মিলিয়ন SDR
- গ্রেস পিরিয়ড : সাড়ে ৫ বছর।
- পরিশোধ : ১০ বছরের মধ্যে। ঋণের অর্থ সম্পূর্ণ সুদমুক্ত
বর্ধিত তহবিল সহায়তা (EFF) EFF-Extended Fund Facility
- প্রাপ্ত ঋণ : ১৬৪৫.৬৪ মিলিয়ন SDR
- গ্রেস পিরিয়ড : সাড়ে তিন বছর
- পরিশোধ : ১০ বছরের মধ্যে । ফ্লোটিং SDR সুদের সঙ্গে ১% যোগ করে সুদ পরিশোধ করতে হবে
স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব সহায়তা (RSF) IRSF-Resilience and Sustainability Facility
- প্রাপ্ত ঋণ : ১ বিলিয়ন বা ১০০০ মিলিয়ন ।
- গ্রেস পিরিয়ড : ১০ বছর
- পরিশোধ : ২০ বছরের মধ্যে । SDR সুদের সঙ্গে বাড়তি ০.৭৫% যোগ করে পরিশোধ করতে হবে