জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত তিন দশকে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। তবে বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ বেড়েছে ইউরোপের তাপমাত্রা। নতুন এক রিপোর্টে ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ু নিয়ে ভীতিকর এ তথ্য উঠে এসেছে। এটাকে একেবারেই ব্যতিক্রম ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা।
আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) প্রকাশিত ওই রিপোর্টমতে, গত ৩০ বছরে ইউরোপের তাপমাত্রা যে বেড়েছে, তার প্রভাব এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছেন এ অঞ্চলের অধিবাসীরা। খরা, দাবানল ও হিমবাহ গলে যাওয়ার মতো উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল তারা দেখছেন।
‘দ্য ইউরোপিয়ান স্টেট অব ক্লাইমেট’ শীর্ষক রিপোর্টমতে, ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউরোপের তাপমাত্রা প্রতি ১০ বছরে গড়ে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বেড়েছে। এর ফলে আল্পস পর্বতের হিমবাহ গলে গিয়ে এর পুরুত্ব ৩০ মিটার কমেছে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের বিছানাও গলে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে সমুদ্রস্তর।
আরো পড়ুন : কপ-২৭ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেবেন জো বাউডেন
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, উষ্ণায়নের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দাবানলের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়ানক রূপ নেবে। যার ফলে সমাজ, অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিরূপ আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এরই মধ্যে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২১ সালেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে প্রতিনিয়তই খারাপ খবর আসছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছর খরার প্রভাব ২০ গুণ বেড়েছে। ক্ষরার প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস ইউরোপের তাপমাত্রা সবচেয়ে উষ্ণ ছিল।
বিজ্ঞানীদের একটি দল বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে যোগসূত্রের গবেষণা করে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্টি না হলে এমন খরা প্রতি ৪০০ বছরে একবার হতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অর্থাৎ জলবায়ু কতটা উষ্ণ, সে বিবেচনায় ধারণা করা হচ্ছে প্রতি ২০ বছরে এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে।
আরো পড়ুন : ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু
চলতি সপ্তাহেই জলবায়ু নিয়ে নতুন করে সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন দেশ নানা প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করলেও সেসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এখনও দূর অস্ত। আর সেই সুযোগে বিশ্ব আরও প্রায় ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তপ্ত হওয়ার পথে হাঁটছে। বিপর্যয়কর পরিস্থিতির লাগাম টানতে চলতি দশকে কার্বন নিঃসরণ অবশ্যই ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ নিয়ে আইইএর সতর্কবার্তা
এদিকে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিক জ্বালানি সংশ্লিষ্ট কার্বন নিঃসরণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংস্থাটির প্রকাশিত সবশেষ বার্ষিক বিশ্ব জ্বালানিসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জেরে আরও টেকসই নিরাপদ জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন : ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দেবে রাশিয়া
আইইএর অনুমান, ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি মূল্যের মুখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সবশেষ নীতি ও পদক্ষেপে পরিচ্ছন্ন শক্তি খাতে বিনিয়োগ বর্তমানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে নবায়নযোগ্য এবং পরমাণুশক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা আসবে। আইইএ বলছে, ’এর ফলাফল হিসেবেই ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিক নিঃসরণ শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাবে।’
গত বছরই আইইএ বলেছিল, ‘কোনো চূড়ান্ত মাত্রা নেই।’ কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাল্টে গেছে সেই পরিস্থিতি। বায়ু ও সৌরশক্তি খাতে নতুন করে উচ্চমাত্রার বিনিয়োগ সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদাকে শীর্ষে নিয়ে যাবে এবং এর জেরে একটা নির্দিষ্ট সময় পর মোট কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।