ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ার দখলে

Preparation BD
By -
0

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রুশ ফেডারশনের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯ অক্টোবর দখলকৃত অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বিতর্কিত গণভোট

২৩-২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপারিঝঝিয়ায় গণভােট অনুষ্ঠিত হয়। গণভােটে রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার পক্ষে খেরসনে ৮৭.০৫%, দোনেৎস্কে ৯৯.২৩%, লুহানস্কে ৯৮.৪২% এবং জাপােরিঝঝিয়ায় ৯৩.১১% ভােটার ভােট দেয়। এরপর অঞ্চল চারটি রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে এক জমকালাে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐ চার অঞ্চলগুলােতে নিয়ােগকৃত নেতাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

২ অক্টোবর ২০২২ দেশটির সাংবিধানিক আদালত ভ্লাদিমির পুতিনের স্বাক্ষর করা চুক্তিকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়। অঞ্চলগুলােকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমা এবং ৪ অক্টোবর উচ্চকক্ষ ‘ফেডারেশন কাউন্সিল অঞ্চলগুলাের অন্তর্ভুক্তির আইন সর্বসম্মতভাবে অনুমােদন করে। ৫ অক্টোবর ২০২২ ভ্লাদিমির পুতিন অন্তর্ভুক্ত করার আইনে স্বাক্ষর করেন।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন

এছাড়া পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঐ চার অঞ্চলের বর্তমান মস্কো-সমর্থিত প্রধানদের ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে নিয়ােগের ডিক্রিতেও স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। রাশিয়ার সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া চারটি অঞ্চলের মােট আয়তন প্রায় ১,০৯,০০০ বর্গকিলােমিটার। এই আয়তন ইউক্রেনের মােট আয়তনের ১৫ শতাংশের বেশি। এই অঞ্চলগুলােতে ৪০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। আর আবাদযােগ্য ভূমি আছে ৫৬ লাখ হেক্টরের বেশি। ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ বর্তমানে একত্রে এ পাঁচ অঞ্চলের আয়তন ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশের সমান।

দখলকৃত অঞ্চলগুলাে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গণভােটের মাধ্যমে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় চারটি অঞ্চলকে নিজেদের ভূখন্ডের অংশ করে নিয়েছে রাশিয়া। নতুন যুক্ত হওয়া চারটি অঞ্চল কেবল রাশিয়ার ভূখণ্ডের আকারই বাড়াবে না, একই সঙ্গে অর্থনীতির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। কারণ, সাবেক ইউক্রেনীয় এ অঞ্চলগুলাে শিল্প ও কৃষির দিক থেকে সম্ভাবনাময়।

অর্থনীতির কেন্দ্র দনবাস

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এলাকা ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত। ইউক্রেনের কয়লাভিত্তিক অর্থনীতির কেন্দ্র এ দনবাস এলাকা। খনিজসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে রয়েছে ইউরােপের চতুর্থ বৃহত্তম কয়লাক্ষেত্র। এখানে উত্তোলনযােগ্য কয়লার মজুত রয়েছে এক হাজার কোটি টনের বেশি। এ ছাড়া দনবাসে থাকা ১১৫টি কয়লাখনি থেকে বছরে প্রায় ৭ কোটি টন কয়লা উৎপাদিত হয়। দোনেৎস্ক অঞ্চলে রয়েছে আটটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অন্যদিকে লুহানস্ক হচ্ছে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনকেন্দ্র। পাশাপাশি এলাকাটি ধাতুবিদ্যা, যন্ত্রপাতি ও কৃষিশিল্পের জন্যও সুপরিচিত। এখানে রাসায়নিক, ওষুধ কারখানা ও বেশ কয়েকটি কয়লাখনি রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেনের শিল্প উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশের কেন্দ্রবিন্দু এই দনবাস এলাকা।

শক্তিকেন্দ্র জাপােরিঝঝিয়া

আরেক অঞ্চল জাপােরিঝঝিয়ায় রয়েছে ইউরােপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০১৯-২০ বছরে এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪,০০০ কোটি কিলােওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, যা ইউক্রেনের মােট বিদ্যুতের ২৫-২৭%। তাই এই এলাকাকে ইউক্রেনের শক্তিকেন্দ্র বলা হয়। এছাড়া এই অঞ্চলে অনেক বৃহৎ শিল্প ও যান্ত্রিক প্রকৌশল সুবিধাও রয়েছে। এগুলাের অন্যতম জাপােরিঝঝিয়া অটোমােবাইল কারখানা থেকে বছরে দেড় লাখ গাড়ি তৈরি হয়। আজভ সাগর ও ডিনিপার নদীর অববাহিকা থাকায় এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময়।

কৃষিক্ষেত্রে এগিয়ে খেরসন

জাহাজ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত খেরসন অঞ্চল। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও রয়েছে এই অঞ্চলের বড় অবদান। এই অঞ্চলে খাদ্যশস্য, সূর্যমুখী ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়। উর্বর জমি হওয়ায় এক মৌসুমে কখনাে দুই বা তারও বেশি ফসল দিতে পারে। এ ছাড়া গবাদিপশু প্রজননেও এগিয়ে এই এলাকা।

চার অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
অঞ্চললুহানস্কদোনেৎস্কখেরসনজাপােরিঝঝিয়া
অফিসিয়াল নামLuhansk People’s RepublicDonetsk People’s Republic KhersonZaporizhzhia
আয়তন২৬,৬৮৪ বর্গ কিমি৪,৯০২ বর্গ কিমি১৩৫.৭ বর্গ কিমি৩৩৪ বর্গ কিমি
জনসংখ্যা১৪,৮৫,৩০০২২,২০,৫০০২,৮৩,৬৪৯৭,২২,৭১৩
ভাষারুশরুশরুশ ও ইউক্রেনীয়রুশ ও ইউক্রেনীয়
গঠন৫ মার্চ ২০১৪৭ এপ্রিল ২০১৪১৮ জুন ১৭৭৮১৭৭০

জাতিসংঘের নিন্দা

ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভােট এবং এগুলােকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তিকে অবৈধ উল্লেখ করে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়া খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু রাশিয়ার ভেটোতে প্রস্তাবটি আটকে যায়। এরপর আলবেনিয়ার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব আনে। কিন্তু রাশিয়া এটির ওপর গােপন ভােটাভুটির প্রস্তাব করে।

১০ অক্টোবর ২০২২ ভােটাভুটি হয় এই প্রশ্নে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি নিন্দা প্রস্তাবের ওপর গােপন ভােটাভুটি হবে কি না। এতে রাশিয়ার পক্ষে ভােট দেয় ১৩টি দেশ। আর বিপক্ষে ভােট দেয় ভারতসহ ১০৭টি দেশ। ভােটদানে বিরত ছিল রাশিয়া, চীন ও বাংলাদেশসহ ৩৯টি দেশ। ভােটাভুটির ফলাফলের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট রেকর্ড করা ভােটের প্রস্তাব অনুমােদন করেন। তবে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করে রাশিয়া।

সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হবে কি না, তা নিয়ে ভােটাভুটি করা হলে ভারতসহ ১০৪টি দেশ বিপক্ষে ভােট দেয়। ১৬টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভােট দেয় এবং ৩৪টি দেশ ভােটদানে বিরত থাকে। ১২ অক্টোবর ২০২২ ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে সীমানাভুক্ত করায় রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভােট দেয় বাংলাদেশসহ ১৪৩টি দেশ, বিপক্ষে ৫টি দেশ (বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, নিকারাগুয়া, রাশিয়া ও সিরিয়া) এবং ভােটদানে বিরত ছিল ভারত, চীনসহ ৫টি দেশ।

ইউক্রেনকে সহায়তা

১১ অক্টোবর ২০২২ ধনী দেশগুলাের জোট জি-৭-এর সদস্যরা জরুরি বৈঠকে বসে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে। এরপর ১১ অক্টোবর ২০২২ জার্মানির কাছ থেকে চারটি InfraRed Imaging System Tail (IRRS-T) আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পায় ইউক্রেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র National Advanced Surface-to-Air Missile System (NASMAS) নামের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার ঘােষণা দেয়। তাছাড়া ১১ অক্টোবর ২০২২ ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ‘ইউক্রেন ডিফেন্স কন্ট্যাক্ট গ্রুপের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করে আরও অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়।

ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ নতুন চার অঞ্চলের নতুন নেতাদের সাথে রুশ প্রেসিডেন্টের চুক্তির ফলে উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট (NATO)-তে যােগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে ইউক্রেন। ২ অক্টোবর ২০২২ ন্যাটো সদস্যভুক্ত নয়টি দেশের প্রেসিডেন্ট একটি যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার আবেদনকে সমর্থন করেন। তাছাড়া ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার আহবান জানান তারা। দেশগুলাে হলাে— চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, উত্তর মেসিডােনিয়া, মন্টিনিগ্রো, পােল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং রােমানিয়া। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রুশ হামলার পরপরই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যােগদানের আবেদন করে।

ক্রিমিয়া দখল

২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে উত্থাত এবং রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নেওয়ার পর মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শিল্পসমৃদ্ধ দনবাসকে কিয়েভের শাসন থেকে মুক্ত করতে লড়াইয়ে নামলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত শুরু হয়। ক্রিমিয়ায় জাতিগতভাবে রুশদেরই আধিক্য, সােভিয়েত আমলে রাশিয়ার এ অঞ্চলটিকে ইউক্রেনের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাশিয়া সেটির দখল নেওয়ার পর ১৬ মার্চ সেখানে গণভােট হয়, তাতে ৯৭ শতাংশ ভােটার ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে ভােট দেয় বলে জানান ক্রিমিয়ার নেতারা। রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ মার্চ ২০১৪ ক্রিমিয়াকে নিজেদের সাথে যুক্ত করে নেয়।

নতুন জেনারেল সুরােভিকিন

৮ অক্টোবর ২০২২ ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশটির বিমানবাহিনীর জেনারেল সের্গেই সুরােভিকিনকে দায়িত্ব দেন। ১১ অক্টোবর ১৯৬৬ সাইবেরিয়ার শহর নভােসিবিরিস্কেতে তার জন্ম। সুরােভিকিন তাজিকিস্তান, চেচনিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন। ২০১৭ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে তিনি রুশ বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। সিরিয়ার যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করে তাকে ‘রাশিয়ার বীর’ খেতাব দেওয়া হয়। সামরিক জীবনে ২ বার জেল খেটেছেন তিনি। সামরিক অভিযানে জেনারেল সুরােভিকিন অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পােষণ করেন এবং অর্থডক্স খ্রিষ্টান হিসেবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধর্ম পালন করেন। এ কারণে তাকে তার সহকর্মীরা ‘জেনারেল আরমাগেডন’ নামে অভিহিত করে থাকেন। আরমাগেডনকে বলা হয় বাইবেলে বর্ণিত মহাকালের শেষ প্রান্তে শুভ এবং অশুভ শক্তির শেষ যুদ্ধ।

কার্চ ব্রিজ
৮ অক্টোবর ২০২২ ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘কার্চ ব্রিজ’ বিস্ফোরণে আংশিক ধসে যায়। রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলাের একটি কার্চ সেতু। এটির মাধ্যমে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়াকে যুক্ত করা হয়েছে। সেতুটি মূলত সড়ক ও রেল যােগাযােগের। ১৯ কিলােমিটার দীর্ঘ এ সেতু কার্চ প্রণালির ওপর অবস্থিত। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর ২০১৮ সালে এটি উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউরােপের সবচেয়ে বড় সেতুও এটি; যা নির্মাণে খরচ হয় ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার। এ সেতু ব্যবহার করে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে থাকে রুশ সরকার। ফলে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্রিমিয়ার সঙ্গে সড়ক যােগাযােগে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি রুশ সরকারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠানাে কঠিন হয়ে পড়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !