রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ : বর্ণাঢ্য এক জীবনের আখ্যান

Preparation BD
By -
0
একনজরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
জন্মগ্রহণ২১ এপ্রিল ১৯২৬
ব্রিটিশ রাজত্বের দায়িত্বগ্রহণ১৯৫২ সালে
রানির ৭০ বছরের শাসনামলে যুক্তরাজ্য পেয়েছে১৬ জন প্রধানমন্ত্রী
রানি ছিলেন১৬টি (ব্রিটেনসহ) কমনওয়েলথ রাজ্যের
প্রধান ছিলেন৫৪ সদস্যের জোট কমনওয়েলথের
প্রথম বাংলাদেশ সফর১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি (পূর্ব পাকিস্তান থাকাকালে)
দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ সফর১৪ নভেম্বর, ১৯৮৩
শেষনিশ্বাস ত্যাগ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর (স্কটল্যান্ডের বালমােরাল ক্যাসলে)
মৃত্যুকালে বয়স৯৬ বছর
রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের বার্কলে স্কয়ারের কাছে একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশ রাজা জর্জ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পুরাে নাম এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর।

পারিবারিক জীবন

১৯৪৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রিন্স ফিলিপকে (ডিউক অব এডিনবরা) বিয়ে করেন। ফিলিপ গত বছরের ৯ এপ্রিল ৯৯ বছর বয়সে মারা যান। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চার সন্তান। তাঁরা হলেন ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস (তিনি ব্রিটেনের নতুন রাজা), প্রিন্সেস অ্যান, ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রুও আর্ল অব ওয়েসেক্স যুবরাজ এডওয়ার্ড।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা ১৯৩৬ সালে সিংহাসনে আরােহণ করেছিলেন। সে সময় থেকেই এলিজাবেথ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন।

ব্রিটিশ রাজত্বের দায়িত্ব গ্রহণ

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবা রাজা জর্জ মারা গেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ রাজত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কমনওয়েলথের প্রধান হন।

দীর্ঘ সময় শাসনকার্য পরিচালনা

৯৬ বছর বয়সী রানি এলিজাবেথ ১৯৫২ সাল থেকে টানা ৭০ বছর সিংহাসনে আসীন ছিলেন। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের দীর্ঘ ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থেকেছেন।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন :

রাষ্ট্রপ্রধান

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের সরকারব্যবস্থার প্রধান হলেও ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান রানি। দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছরের শাসনামলে যুক্তরাজ্য ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১ জন কনজারভেটিভ পার্টির ও ৫ জন লেবার পার্টির।

অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের রানি

যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫টি কমনওয়েলথ রাজ্যের রানি ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এ ছাড়া তিনি। ৫৪ সদস্যের জোট কমনওয়েলথের প্রধান। তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান। এককথায়, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত রাজতন্ত্রের প্রতিভূ।

রানি এলিজাবেথের মুকুটের কোহিনূর কে পাবেন

এলিজাবেথের বড় ছেলে প্রিন্স চার্লস (রাজা তৃতীয় চার্লস) উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরােহন করেছেন। সে হিসেবে বিবাহসূত্রে রাজবধূ এবং ব্রিটেনের ভাবী রানি হতে যাচ্ছেন চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার। রাজা চার্লসের স্ত্রী হিসেবে রানি ক্যামিলার মাথায় উঠবে কোহিনূরের মুকুট।

রানির উত্তরাধিকারী তৃতীয় চার্লসের অভিষেক

দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথাগতভাবেই তাঁর উত্তরাধিকারী হয়েছেন তাঁর ৭৩ বছর বয়সী বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস। ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সেন্ট জেমস প্যালেসে এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হয়েছে তৃতীয় চার্লসের।

ব্রিটিশ জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন

১৯৫২ সাল থেকে যে জাতীয় সংগীত গেয়ে আসছিল ব্রিটিশরা, রানির মৃত্যুর পর এবার পরিবর্তন আসছে। এখন থেকে ‘গড সেভ দ্য কুইন’-এর জায়গায় ‘গড সেভ দ্য কিং’ গাইবে সবাই।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন দুবার

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দুবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। প্রথমবার ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি (পূর্ব পাকিস্তান আমলে) এবং দ্বিতীয়বার ১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৮৩ সালে সফরের সময় ১৬ নভেম্বর তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন।

মৃত্যু

ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনশায়ারের বালমােরাল ক্যাসলে ৯৬ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। আর এরই মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজশাসনের একটি বর্ণাঢ্য সময়ের ইতি হলাে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য

৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পরদিন থেকে টানা ১০ দিনের জাতীয় শােক পালন শেষে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে আড়ম্বরপূর্ণ আয়ােজনে ও রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পাঁচ শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান ও বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ৭০ বছর আগে যে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির অভিষেক, সেখানেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়। তার বিয়ের অনুষ্ঠানও হয়েছিল একই গির্জায়।

ব্রিটিশ সিংহাসন : রাজা তৃতীয় চার্লসের পথচলা শুরু

একনজরে প্রিন্স চার্লস
ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম ভাষণ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম ভাষণ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রিন্স অব ওয়েলস ঘােষণা১৯৬৯ সালে
প্রধান১৪টি কমনওয়েলথ রাষ্ট্রের

অভিষেক

মা দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথাগতভাবেই তার উত্তরাধিকারী হয়েছেন তাঁর বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস। ১০ সেপ্টেম্বর। ২০২২ লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে। যাত্রা শুরু হয়েছে তৃতীয় চার্লসের। ৭০ বছর ধরে উত্তরাধিকারী থাকার কারণে তিনি হচ্ছেন ব্রিটেনের ইতিহাসে সিংহাসনে অভিষেক হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক রাজা। চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘােষণা দিয়েছে। ব্রিটেনের ‘এক্সেশন কাউন্সিল। ব্রিটেনের রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে এ কাউন্সিল গঠন করা হয়।

রাজা কী করেন

রাজা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান। তবে তার ক্ষমতা অনেকটাই প্রতীকী ও আনুষ্ঠানিক এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেন। একটি লাল চামড়ার বাক্সে করে তিনি প্রতিদিন সরকারি বার্তা পাবেন। যেমন আসন্ন কোনাে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নিয়ে। ব্রিফিং বা তার স্বাক্ষর দরকার, এমন কোনাে দলিল। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বিষয়ে রাজাকে অবহিত করতে সাধারণত বুধবার বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব বৈঠক একেবারেই গােপনীয় এবং এগুলােতে কে কী বলেন, তার কোনাে রেকর্ড থাকে না।

রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর বাকিংহাম প্যালেসে জন্ম হয়েছিল চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জের। যখন তাঁর বয়স তিন বছরের কিছু বেশি, তখন তার মা দ্বিতীয় এলিজাবেথ রানি হন। চার বছর পর তিনি ব্রিটিশ সিংহাসনের স্পষ্ট উত্তরাধিকারী হন। আট বছর বয়স পর্যন্ত চার্লসের বাড়িতে পড়াশােনা হয়েছে। এরপর চার্লস ছিলেন সিংহাসনের প্রথম উত্তরাধিকারী, যাকে গর্ডনস্টন স্কুলে পড়াশােনা করতে পাঠানাে হয়। এরপর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে প্রথমে প্রত্নতত্ত্ব, পরে নৃবিজ্ঞান পড়েন চার্লস।

প্রিন্স অব ওয়েলস ঘােষণা

১৯৬৯ সালে কারনেশন ক্যাসলে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চার্লসকে প্রিন্স অব ওয়েলস ঘােষণা করা হয়। সেখানে। তিনি ওয়েলস ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বক্তব্য দেন।

‘অ্যাকশনম্যান’ খেতাব অর্জন

পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি সামরিক বাহিনীতে যােগ দিয়ে আরএএফ পাইলট হিসেবে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে রাজকীয় নৌবাহিনীতে চলে যান। তিনি কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ‘অ্যাকশনম্যান’ খেতাব অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে প্রিন্স’স ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন।

বাগদান

১৯৮১ সালে ঘােষণা করা হয়, চার্লস লেডি ডায়ানা | স্পেনসারের সঙ্গে বাদান সম্পন্ন করেছেন। এর পাঁচ মাস পর তারা সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮২ সালে প্রিন্স উইলিয়াম ও ১৯৮৪ সালে প্রিন্স হ্যারির জন্ম সত্ত্বেও চার্লস-ডায়ানার দাম্পত্যজীবন জটিলতায় পড়েছিল। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে চার্লস ও ডায়ানা ‘অনিষ্পত্তিযােগ্য পার্থক্য থাকার কথা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানার আকস্মিক মৃত্যু হয়।

ক্যামিলা পার্কার বােলসের সঙ্গে বাগদান

১৯৭০ সালে রাজা চার্লসের বর্তমান স্ত্রী ক্যামিলার সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। এই যুগল ২০০৫ সালে বান্দানের ঘােষণা করেন। রাজকীয় পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে তৃতীয় চার্লস বেসরকারিভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন ক্যামিলাকে। ডাচেস অব কনওয়েলে পরিণত হন ক্যামিলা পার্কার বােলস। আর চার্লস সিংহাসনে আরােহণের পর তিনি হয়েছেন কুইন কনসর্ট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !