আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’র ঋণ কড়চা

Preparation BD
By -
0

বাংলাদেশ সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে IMF’র কাছে ঋণ সহায়তার আবেদন করে। এ প্রেক্ষাপটে IMF’র ঋণের হালচাল নিয়ে আমাদের আয়ােজন।

পূর্ণরূপInternational Monetary Fund
প্রতিষ্ঠা১৯৪৪ সালে
কার্যক্রম শুরু১ মার্চ ১৯৪৭
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থার মর্যাদা লাভ১৫ নভেম্বর ১৯৪৭
সদর দপ্তরওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র
বর্তমান সদস্য১৯০টি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা। বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা এর প্রধান কাজ। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং দারিদ্র্যহাসে সহায়তাকার জন্য নীতিমালা প্রদান এবং সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। IMF’র মতে, ব্যক্তিগত ও আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলাে ত্রুটিপূর্ণভাবে কাজ করে এবং অনেক দেশে আর্থিক বাজারগুলিতে সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সংস্থাটি সরকারি অর্থায়নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প অর্থায়নের জোগান দেয়।

ঋণদানের শর্তসমূহ

যখন কোনাে দেশের Balance of Payment বা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তারা IMF’র দ্বারস্থ হয়। IMF যখনই কোনাে ঋণ দেয় তখনই কিছু শর্ত বা পরামর্শ দেয়। IMF’র ঋণ প্রদানের উল্লেখযােগ্য শর্ত হলাে-

  • সরাসরি রপ্তানি এবং সম্পদ আহরণের ওপর অর্থনৈতিক আউটপট ফোকাস করা
  • মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা
  • বাণিজ্য উদারীন্দ্রণ বা আমদানি ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া
  • বিনিয়ােগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি
  • বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অতিরিক্ত ব্যয় না করা
  • মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি অপসারণ
  • বেসরকারিকরণ বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের সমস্ত বা – আংশিক মালিকানা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হস্তান্তর
  • জাতীয় আইনের বিপরীতে বিদেশি বিনিয়ােগকারীদের অধিকার বৃদ্ধি করা
  • শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা

রিজার্ভ মুদ্রা

IMF’র সম্পূরক আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ফান্ড বা মজুত সম্পদ, যা SDR (Special Drawing Rights) নামে পরিচিত। সদস্য দেশগুলাের জন্য SDR সুবিধা প্রবর্তনের জন্য ২৮ জুলাই ১৯৬৯ IMFর গঠনতন্ত্র সংশােধন করা হয়। সংস্থার সদস্যরা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের প্রয়ােজনে SDR-এ অন্তর্ভুক্ত মুদ্রা ব্যবহারের সুযােগ পায়। ১৯৭৪ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ বা মজুত মুদ্রা গ্রহণ করে। বর্তমানে IMF’র রিজার্ভ মুদ্রা ৫টি মার্কিন ডলার, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরাে ও ইউয়ান। ইউয়ান-এর অন্য নাম ‘রেনমিনবি।

IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ IMF’র কাছ থেকে ১০ বার ঋণ নেয়। তবে কোনােবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। এসব ঋণের বিপরীতে IMF নানা শর্ত দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কিছু শর্ত মেনে নেয় আবার কিছু মেনে নেয়নি। ১৪ জুন ১৯৭৪ বাংলাদেশ প্রথম IMF’র কাছ থেকে ঋণ পেতে চুক্তি স্বাক্ষর করে।

সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ IME থেকে বছরে ১০০-১৫০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যােগ্য। কিন্তু IMFর বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ECE), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (EFF) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মােকাবিলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (RSE) এই তিন কর্মসূচি থেকে আলাদা করে ঋণ গ্রহণ করতে পারে।

ECF থেকে নেওয়া ঋণে সুদ ও মাশুল দিতে হয় না। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ পরিশােধে সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে। বাকি দুটি তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার ১.৫৪ থেকে ১.৭৯%।

সম্প্রতি বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে IMF’র নবগঠিত Resilience and Sustainability Trust (RST) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তার জন্য আবেদন করে। এই অর্থই বাংলাদেশের ইতিহাসে IMF থেকে সর্বোচ্চ ঋণ। RST ঋণের মেয়াদ ২০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর।

IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ (হাজার SDR)

বার চুক্তির তারিখসমাপ্তির তারিখঅনুমােদিত ঋণঋণ ছাড়
১ম১৪.০৬.১৯৭৪১৩.০৬.১৯৭৫৩১,২৫০৩১,২৫০
২য় ২৮.০৭.১৯৭৫২৭.০৭.১৯৭৬৬২,৫০০৬২,৫০০
৩য় ৩০.০৭.১৯৭৯২৯.০৭.১৯৮০৮৫,০০০৮৫,০০০
৪র্থ ০৮.১২.১৯৮০২১.০৬.১৯৮২৮,০০,০০০২,২০,০০০
৫ম ২৮.০৩.১৯৮৩৩১.০৮.১৯৮৩৬৮,৪০০৬৮,৪০০
৬ষ্ঠ ০২.১২.১৯৮৫৩০.০৬.১৯৮৭১,৮০,০০০১,৮০,০০০
৭ম০৬.০২.১৯৮৭  ০৫.০২.১৯৯০২,০১,২৫০২,০১,২৫০
৮ম ১০.০৮.১৯৯০১৩.০৯.১৯৯৩৩,৪৫,০০০৩,৩০,০০০
৯ম ২০.০৬.২০০৩ ১৯.০৬.২০০৭ ৪,০০,৩৩০৩,১৬,৭৩০
১০ম
১১.০৪.২০১২
 ১০.০৪.২০১৫
৬,৩৯,৯৬০
২,৭৪,২৬৯
মােট২৮,১৩,৬৯০১৭,৬৯,৩৯৯

[Note : ৯ম চুক্তি থেকে ৯৫,৬০৪ এবং ১০ম চুক্তি থেকে ২,৭৪,২৬৯ হাজার SDR পরিশােধ করা হয়নি।]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !