বেসিক ব্যাংকিং পর্বে স্বাগত। গত পর্বে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং টার্ম নিয়ে আলােচনা করেছি। এই পর্বেও তুলে ধরব তেমন কিছু বিষয়।
Foreign Exchange Reserve
ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রা মজুত বলতে একটি দেশের বিদেশের সঙ্গে লেনদেনযােগ্য সম্পদকে বােঝায়। আমদানি ব্যয় মেটানাে, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রােধ, মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল নীতি জোরদারকরণ, রাষ্ট্রের জনগণ ও বিদেশিদের আস্থা ঠিক। রাখাসহ বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থ জোগান, বৈদেশিক দায় পরিশােধ নিশ্চিত রাখতে সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ বা বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রাখে।
রিজার্ভের পরিমাণ নির্ভর করে আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সের ওপর। আমদানি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার বেশি দিয়ে দিতে হয়, রিজার্ভ কমে। রপ্তানি বেশি হলে ও রেমিট্যান্স বেশি এলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার বেশি জমা হয়, রিজার্ভ বাড়ে। বিশ্বায়নের এই যুগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেকোনাে দেশের বড় সম্পদ ও অর্থনীতির বড় শক্তি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ৩৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৫তম।
Monetary Policy
মুদ্রানীতি হলাে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত নীতি, যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে খােলাবাজার কার্যক্রম, ধাতব মুদ্রা ও কাগুজে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক হার পরিবর্তন, রিজার্ভ হার পরিবর্তন—এই বিষয়গুলাে মুদ্রানীতির মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে । এর লক্ষ্য হলাে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, যুক্তিসংগত মূল্য স্থিতিশীলতা, ব্যবসায় চক্ৰ স্থিতিশীল রাখা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, সুদের হার নিয়ন্ত্রণ, বেকারত্ব হ্রাস করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনা করে দ্রব্যমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঋণদান ও মুদ্রা সরবরাহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। এ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য বিমােচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানাের মতাে সামষ্টিক লক্ষ্যমাত্রাগুলাে বিবেচনায় রাখা হয়। মুদ্রানীতি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। সম্প্রসারণমূলক ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেকারত্ব হ্রাস, মন্দা এড়াতে ও স্বল্প মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ব্যবহার করে থাকে এবং সাধারণত মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে সংকোচনমূলক। মুদ্রানীতি প্রয়ােগ করে।
Inflation
মূল্যস্ফীতি বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনাে দেশের দ্রব্য বা সেবার মূল্যের স্থায়ী একটা ঊর্ধ্বগতি বােঝায়। মূল্যস্ফীতি বলতে অর্থনীতিতে সব দ্রব্যের দামের পরিবর্তনকেই বােঝায় না, বরং জনগণের নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের গড় দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ে। কতটুকু পরিবর্তিত হলাে, তা-ও নির্দেশ করে। আবার যদি কোনাে দেশের মােট মুদ্রার জোগান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করে, তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
অর্থাৎ অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধিকেই মুদ্রাস্ফীতি বলে। মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে এবং পণ্য ও সেবার সরবরাহ অপরিবর্তিত থাকলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। কারণ, অনেক বেশি টাকা সীমিত পণ্য ও সেবার পেছনে ধাওয়া করে। মুদ্রাস্ফীতির অর্থ সব ধরনের পণ্য ও সেবামূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি, যা সাধারণত ঘটে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের কারণে, যাতে অর্থের মূল্য হ্রাস পায়।
Money Laundering
মানি লন্ডারিং অর্থশােধন হলাে অর্থের উৎস গােপন করে অবৈধ বা কালাে অর্থকে লেনদেন চক্রের মাধ্যমে বৈধ করা বা স্বচ্ছতা দান করার একটি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের উৎস গােপন করার উদ্দেশ্যে সম্পদের আংশিক বা পূর্ণ অংশ রূপান্তর বা এমন কোনাে বৈধ জায়গায় বিনিয়ােগ করা হয়, যাতে সেই বিনিয়ােগ করা সম্পদ থেকে অর্জিত আয় বৈধ বলে মনে হয়। মানি লন্ডারিংয়ের প্রধান উদ্দেশ্য দুটি।
একটি হলাে চোরাচালানের মাধ্যমে উপার্জিত আয় তথা আয়ের সূত্র গােপন করা। অন্যটি বৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেওয়া। মানি লন্ডারিং দেশের অর্থনীতি তথা সমাজের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। সাধারণত চোরাচালান, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ট্যাক্স ফাঁকি, রাজনৈতিক দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাচালান ইত্যাদি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। সাধারণত মানি লন্ডারিংয়ের তিনটি ধাপ আছে, ধাপগুলাে হলাে : ১. প্লেসমেন্ট, ২. লেয়ারিং ও ৩. ইন্টিগ্রেশন।
এই ধাপগুলাের মাধ্যমেই মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আইন প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০০২ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং সম্পর্কে গাইডলাইন তৈরি করে সব ব্যাংককে তা মেনে চলার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছ।
Bitcoin
বিটকয়েন একটি অনলাইননির্ভর ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা, যার কোনাে বাস্তব অস্তিত্ব নেই। ‘বিটকয়েন’ বিশ্বের প্রথম মুক্ত ভার্চুয়াল মুদ্রা। সাধারণত মুদ্রাব্যবস্থার ডিজিটাল বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্য থেকে এই মুদ্রার ধারণা চালু হয়। অন্যান্য মুদ্রার মতাে এটি ধরাছোঁয়া যায় না, এমনকি এই মুদ্রার কোনাে নিয়ন্ত্রণকারী দেশ বা ব্যাংক নেই। তাই এই মুদ্রা দিয়ে সারা বিশ্বে সব ধরনের বৈধ-অবৈধ লেনদেন নিশ্চিন্তে সম্পন্ন করা যায়।
২০০৯ সালে সাতােশি নাকামােতাে এই মুদ্রাব্যবস্থা চালু করেন। এটি লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার, অর্থাৎ প্রেরক থেকে প্রাপকের কম্পিউটারের মাধ্যমে। এই লেনদেনের হিসাব রাখা হয় কম্পিউটারে ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে। এর খতিয়ানের নাম ‘ব্লকচেইন’। বিটকয়েনের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয় বিশ্ববাজারের সঙ্গে। স্বর্ণের দাম যেমন ওঠানামা করে, ঠিক তেমনি বিটকয়েনের মূল্যের ক্ষেত্রেও তা-ই।
বিটকয়েন দিয়ে কোনাে পণ্য কেনা হলে তা ওই ক্রেতার অ্যাকাউন্টে বিটকয়েন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে তাঁর বিটকয়েন লেজার কমে যাবে। আবার এই বিটকয়েন দিয়ে তিনি পুনরায় পণ্য কিনতে পারবেন, এমনকি সমপরিমাণ বিটকয়েন তার লেজারে রাখতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে বিটকয়েন লেনদেনকে অবৈধ বলে ঘােষণা করে। বিটকয়েনকে অনেকেই ফিউচার মানি হিসেবেও মনে করেন। ধারণা করা হয়, বিটকয়েন পৃথিবীতে একসময় ভার্চুয়াল মুদ্রা হিসেবে রাজত্ব করবে।
General Lien
অতিরিক্ত ঋণের কারণে ঋণগ্রহীতার সব সম্পত্তির দায়িত্ব ঋণদাতাকে দিয়ে দেওয়া।
Insolvent
যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেও তাঁর ঋণ করা অর্থ ফেরত দিতে পারেন না।
Some Financial Abbreviations
- ACU : Asian Clearing Union.
- AML : Anti Money Laundering.
- BEFTN : Bangladesh Electronic Fund Transfer Network
- BSEC : Bangladesh Securities and Exchange Commission.
- CASA : Current & Savings Account.
- CD : Current Deposit.
- CIB : Credit Information Bureau.
- CSR : Corporate Social Responsibility.
- CVC : Card Verification Code.
- CVV : Card Verification Value.
- DD : Demand Draft.
- FDR : Fixed Deposit Receipt.
- MICR : Magnetic Ink Character Recognition.
- SDR : Special Drawing Rights.
- SWIFT : Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication.
- CRR : Cash Reserve Ratio.
- SLR : Statutory Liquidity Ratio.