পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন
১৯৫৪ সালে মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানাে হয়। হক সাহেব নিজ বাড়িতে অন্তরীণ হন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ প্রায় ১৬শ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৪ সালের ২৪শে অক্টোবর এক ঘােষণায় গােলাম মােহাম্মদ গণপরিষদ বাতিল করে দেন। আবার তিনিই ১৯৫৫ সালে জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন গণপরিষদ গঠন করতে বাধ্য হন।
১৯৫৫ সালের ৬ই জুন তারিখে ৯২-ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে ফজলুল হকের মনােনীত প্রার্থী আবু হােসেন সরকারের নেতৃত্বে নতুন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ মন্ত্রিসভা একুশ দফা বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট মিলিতভাবে চৌধুরী মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালের ১১ই আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে। ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকারের পতন হয়। ১৯৫৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে রিপাবলিকান- আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। এ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য যুক্ত নির্বাচন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করে। ১৯৫৭ সালের ১৬ই অক্টোবর তাঁর সরকারের পতন হয়। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সংকটকে কেন্দ্র করে আবু হােসেন সরকারের পতন হলে ১৯৫৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর আতাউর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হয়।
১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে ইসমাইল ইব্রাহিম চন্দ্রিগড়-এর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ-রিপাবলিকান মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। চুন্দ্রিগড় প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরােধিতার সম্মুখীন হয়। পরে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। অতঃপর ফিরােজ খান নুনের নেতৃত্বে রিপাবলিকান দল কেন্দ্রে মন্ত্রিসভা গঠন করে।
প্রধানমন্ত্রী ফিরােজ খান নুন ১৯৫৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনতারিখ ঘােষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি দিন দিন ঘােলাটে হতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটির পর একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটতে লাগল। ১৯৫৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক পরিষদে তুমুল ঝগড়া ও মারামারিতে ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল
ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীর মৃত্যর পর ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা দেশের শাসনন্ত্র, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা এবং আইন পরিষদ বাতিল করেন। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘােষণা করে সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন।
১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
১৯৬০ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থামূলক ভােটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করেন। এ সংবিধান মতে সমস্ত ক্ষমতাই ন্যস্ত থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে।
১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে কেন্দ্র করে আইয়ুব-বিরােধী জোট গড়ে ওঠে। কিন্তু আইয়ুব খান জয়ী হয়।
১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের যুদ্ধ বাধে। যুদ্ধের পর আইয়ুব-বিরােধী আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে।
১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয়-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।