অভ্যন্তরীণ তহবিল
ব্যবসায়ের মালিক তার সঞ্চিত মুনাফা বা অব্যবহৃত মুনাফার মাধ্যমে যে তহবিল ব্যবসায়ের প্রয়ােজনে বিনিয়ােগ করে তাকেই অভ্যন্তরীণ তহবিল বলা হয়। অভ্যন্তরীণ তহবিল উৎসগুলােকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
- মালিকানাভিত্তিক
- মুনাফাভিত্তিক
আমরা এবার এ দুটি উৎসের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানব।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মালিকানাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ
ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সংগঠনের অভ্যন্তরীণ তহবিলের প্রকৃতিও ভিন্ন হয়। আমরা জানি, সংগঠনের ভিত্তিতে ব্যবসায় একমালিকানা, অংশীদারি বা যৌথমূলধনি প্রতিষ্ঠান হতে পারে। একমালিকানা ব্যবসায়ে এই তহবিলের উৎস মালিকের নিজস্ব অর্থ বা অর্থ দ্বারা পরিমাপযােগ্য যেকোনাে উৎপাদনের উপকরণ হতে পারে। যেমন: ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন যা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটি যদি অংশীদারি ব্যবসায় হয়, তাহলে অংশীদারবৃন্দ যে তহবিল ব্যবসায়ে বিনিয়ােগ করে তা স্বীয় মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠানটি যদি যৌথমূলধনি ব্যবসায় হয়, সে ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে যে তহবিল সংগৃহীত হয়, সেটিই ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ তহবিল হিসেবে বিবেচিত হবে। যৌথমূলধনি ব্যবসায় প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড হতে পারে।
প্রাইভেট কোম্পানির উদ্যোক্তার সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৫০ পর্যন্ত হতে পারে আর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির উদ্যোক্তার সদস্যসংখ্যা নিম্নে ৭ ও ঊর্ধ্বে শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ যেকোনাে সংখ্যক হতে পারে। পাবলিক লিমিটেড বা প্রাইভেট লিমিটেড উভয় কোম্পানিই শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করে। তবে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি শেয়ারবাজারে শেয়ার বিক্রয় না করে নির্ধারিত মালিকদের মধ্যে বিক্রয় করে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির তহবিল সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলাে শেয়ার বিক্রয়। এ সম্পর্কে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে বিস্তারিত জানব।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মুনাফাভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। এই উপার্জিত আয় থেকে উৎপাদন খরচ, বিক্রয় খরচ ইত্যাদি বাদ দিলে যে অর্থ বাকি থাকে, সেটিই প্রতিষ্ঠানটির অর্জিত মুনাফা। এই মুনাফা থেকে ঋণের সুদ ও সরকারকে প্রদেয় ট্যাক্স বাদ দেয়ার পর বাকিটা বিভিন্নভাবে তহবিলের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা নিচে আলােচনা করা হলাে। ঋণের ক্ষেত্রে যেমন কিস্তি পরিশােধ করা বাধ্যতামূলক অভ্যন্তরীণ উৎস ব্যবহারে বাধ্যতামূলকভাবে তেমন কিছু প্রদান করতে হয় না, ফলে তহবিল পরিশােধের অপারগতা সংক্রান্ত ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়। মুনাফাভিত্তিক কয়েকটি উৎসের সাথে আমরা এখন সংক্ষেপে পরিচিত হব।
অবণ্টিত মুনাফা ও সঞ্চিতি তহবিল
নিট মুনাফার যে অংশ শেয়ারহােল্ডারদের মধ্যে বণ্টন না করে কারবারে বিনিয়ােগ করা হয়, তা অবণ্টিত মুনাফা। ভবিষ্যতে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করার জন্য এই অবণ্টিত মুনাফা একটি তহবিলে আলাদা করে রাখলে তাকে বলা হয় সঞ্চিতি তহবিল। আবার ভবিষ্যতের কোনাে আর্থিক বিপর্যয় মােকাবিলার জন্যও এই সঞ্চিতি তহবিল সৃষ্টি করা যায়।
লভ্যাংশ সমতাকরণ তহবিল
কোম্পানির শেয়ারহােল্ডাররা কোম্পানি থেকে সাধারণত নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। এই লভ্যাংশ প্রদানের সাথে কোম্পানির সুনাম জড়িত। কোনাে বছর মুনাফার পরিমাণ কম হলে সে বছর লভ্যাংশ ঘােষণা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এ অবস্থা ব্যবসায়ের সুনামকে ক্ষুন্ন করতে পারে বলে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যে বছর মুনাফা বেশি হয়, সে বছরে নিট মুনাফার একটা অংশ লভ্যাংশ সমতাকরণ তহবিলে সরিয়ে রাখে, যা পরবর্তীতে যখন মুনাফা অপ্রতুল হয়, তখন ব্যবহার করা যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে।