পটভূমি : ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করে নিজেদের স্বাতন্ত্র রক্ষা করা ও ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দু বিক্ষোভ মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে। এ সময় কংগ্রেস যে ভূমিকা পালন করে তাতে কংগ্রেস মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে-এ বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
১৯০৬ সালে ১লা অক্টোবর ৩৫ জন মুসলিম নেতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দল তকালীন বড়লাট লর্ড মিন্টোর সাথে সিমলায় সাক্ষাৎ করেন। এটি সিমলা ডেপুটেশন নামে পরিচিত। এ সাক্ষাৎকারে মুসলমানদের জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে স্বতন্ত্র নির্বাচন এবং সামরিক, বেসামরিক সকল চাকরিতে ব্যাপক হারে মুসলমানদের নিয়ােগ করার দাবি জানানাে হয়। কিন্তু হিন্দু নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের দাবিগুলাের নিন্দা করে। এই বৈঠকের পর মুসলিম নেতৃবৃন্দ তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়ােজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করেন।
১৯০৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকায় সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে নবাব ভিকারুল মুলক- এর সভাপতিত্বে একটি রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর উদ্বোধনী ভাষণের পর নওয়াব সলিমুল্লাহ প্রস্তাব করেন যে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা হবে। প্রস্তাবটি সর্বসম্মক্ৰিমে গৃহীত হয় এবং ঐদিনই নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য ছিল তিনটি।
- ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য বৃদ্ধি করা ও সরকারের সঙ্গে সকল ভুলবুঝাবুঝির অবসান করা।
- মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা এবং মুসলমানদের আশা-আকাঙক্ষা ও প্রয়ােজনের কথা সরকারের কাছে ব্যক্ত করা।
- মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা। বস্তুত মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যেই মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল।