সাধারণত নিরক্ষর বলতে অক্ষর জ্ঞানহীনতাকেই বােঝায়। নিরক্ষর হচ্ছে সে ব্যক্তি যার মধ্যে অক্ষরজ্ঞান নেই, যে ব্যক্তি লিখতে-পড়তে জানে না। নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ লােকই নিরক্ষর তাই এর প্রভাবে সমাজে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অদৃষ্টবাদিতা, স্বাস্থ্যহীনতা, দারিদ্র্য ইত্যাদি সমস্যা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশে নিরক্ষরতার কারণ :
বাংলাদেশে নিরক্ষরতার পেছনে একাধিক কারণ বর্তমান। নিচে নিরক্ষরতার কারণগুলাে বর্ণিত হল।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে নিরক্ষরতার অন্যতম প্রধান কারণ হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি। প্রতি বছর যে বিপুল সংখ্যক শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদের শিক্ষার জন্য প্রতি বছরে নতুন প্রায় ৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজন, যা তৈরি করা আমাদের দেশের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
- দারিদ্র্য : বাংলাদেশে নিরক্ষরতার আরাে একটি প্রধান কারণ হল দারিদ্র্য ও আর্থিক অসচ্ছলতা। ফলে ভূমিহীনদের পক্ষে খাদ্য যােগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় দরিদ্র জনগােষ্ঠীর পক্ষে শিক্ষাখাতে ব্যয় করার সংগতি থাকে না।
- শিক্ষার সুযােগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা : জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার প্রয়ােজনীয় সুযােগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় নিরক্ষরতার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি : ক্রমবর্ধমান ব্যয়বহুল শিক্ষার খরচ যােগাড় করার অক্ষমতার কারণে বাংলাদেশে নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- শিক্ষকদের আর্থিক অসচ্ছলতা : মানুষ গড়ার কারিগর যারা সেই শিক্ষকদের আর্থিক অসচ্ছলতা বাংলাদেশে নিরক্ষরতা বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রতিকার :
বাংলাদেশ হতে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে
- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছর ২৪ লক্ষ নতুন শিশু স্কুলে পড়ার উপযােগী হচ্ছে। এ বিপুল সংখ্যক শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের পক্ষে সত্ব নয়। সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত নিরক্ষরতা দূর করা সম্য নয়।
- দারিদ্র্য দূরীকরণ : শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রয়ােজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত ব্যয় বরাদ্দ। সুতরাং জনগণের দারিদ্র্য দূর না করে শিক্ষা বিস্তার সত্ব নয়।
- বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন : দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা মােকাবেলা করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব হবে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব : বাংলাদেশে এখনাে বহু গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব।
- নারীশিক্ষার সম্প্রসারণ : বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদেরকে উপেক্ষা করে নিরক্ষরতা দূর করা অসম্ভব। সুতরাং নিরক্ষরতা দূর করার জন্য নারীশিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
- যুব সমাজকে উৎসাহিত করা : বয়স্কদের নিরক্ষরতা দূর করার জন্য আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকদের কাজে লাগাতে হবে।