রবিবার, জুন ৪, ২০২৩
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিক বিষয়াবলীসৌদি-ইরান : বৈরিতা থেকে সম্প্রীতি

সৌদি-ইরান : বৈরিতা থেকে সম্প্রীতি

- Advertisement -

সুন্নি-প্রধান সৌদি আরব ও শিয়া-প্রধান ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী দেশ। দেশ দুটির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব কেবল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ছড়িয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। দেশ দুটি সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনে রাজি হয়।

অম্লমধুর সম্পর্কের ঘটনাপ্রবাহ

২৪ আগস্ট ১৯২৯ স্বাক্ষরিত মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব ও ইরান পরস্পরকে স্বীকৃতি এবং পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন লেগে আছে প্রায় এক শতাব্দী ধরে। বিশেষ করে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি অভ্যুত্থানের পর সম্পর্কের অবনতি হয়।

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ইরানে হামলা করেন । তখন বাস্তবে সৌদি আরব নিরপেক্ষ থাকলেও মূলত, দেশটি তার তিনটি বন্দর ইরাককে সামরিক সরঞ্জাম-রসদ আনা নেওয়া করতে ব্যবহার করতে দিয়েছিল। ১৯৯১ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও চালু হয় । এরপর বৈরিতা যেভাবে মৈত্রীতে রূপ নেয়-

  • ডিসেম্বর ১৯৯৭ : তৎকালীন সৌদি যুবরাজ ও বর্তমান রাজা আব্দুল্লাহ ওরফে সালমান বিন আব্দুল আজিজ ইরানে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (OIC) অষ্টম সম্মেলনে যোগ দেন ।
  • মে ১৯৯৮ : দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সহযোগিতা সম্পর্কের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
  • ১৯৯৯ : সালমান বিন আব্দুল আজিজের ইরান সফরের জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি সৌদি আরবে সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন।
  • এপ্রিল ২০০১ : সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার রোধে সৌদি আরব ও ইরান একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে ।
  • ২০১১ : আরব বসন্তের সময় সৌদি কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে বাহরাইনের রাজপরিবারের বিপক্ষে বিক্ষোভে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ তোলে ।

চীনের মধ্যস্থতার সম্প্রীতি

২০১৬ সালে সৌদি আরব ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে মুখোমুখি ও দ্বান্দ্বিক অবস্থান নেয়। সেই তিক্ততা পিছে ফেলে ১০ মার্চ ২০২৩ চীনের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনে সম্মত হয় । এছাড়া দুই মাসের মধ্যে তারা একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস চালু করবে ।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

সমঝোতা হওয়ার আগে চীনে অনুষ্ঠিত টানা চার দিনের বৈঠক ছিল সম্পূর্ণ গোপন । সৌদি আরব ও ইরানকে এক টেবিলে বসানোর এ পদক্ষেপ চীনের জন্যে বিশাল কূটনৈতিক অর্জন বলা যেতে পারে ।

  • ১৫ মার্চ ২০১১ : সিরিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ইরান-সৌদি আরব আবার মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন দেয় । অন্যদিকে, সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম-অধ্যুষিত সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয় ।
  • ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ : ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দেয়। অন্যদিকে হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় ইরান।
  • ২ জানুয়ারি ২০১৬ : ২০১১ সালের বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরব বিশিষ্ট শিয়া নেতা ও সৌদি সরকারের কড়া সমালোচক নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
  • ৩ জানুয়ারি ২০১৬ : আল নিমরের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে তেহরানে বিক্ষোভকারীরা সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় । এরপর ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব।
  • নভেম্বর ২০১৭ : আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশসীমায় একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে সৌদি আরব। রিয়াদ অভিযোগ করে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইরানের সরবরাহ করা এবং ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এটি ছোড়া হয় ।
  • ২০১৯ : সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়। সৌদি আরব এ হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে। তবে ইরান বারবার এ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ।
  • এপ্ৰিল ২০২১ : সম্পর্কচ্ছেদ করার পর ইরাকের মধ্যস্থতায় ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়।
  • ডিসেম্বর ২০২২ : চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরবে যান । সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ইরান-সৌদি সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করেন।
  • ২০২৩ : ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ফেব্রুয়ারিতে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চীন সফর করেন। মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় ।

মধ্যপ্রাচ্যে কতটা প্রভাব

সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এবং তার বাইরেও প্রতিফলিত হবে । চুক্তির প্রভাব সবচেয়ে বড় আকারে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে দেখা দিতে পারে প্রক্সি যুদ্ধে, বিশেষ করে ইয়েমেনে । দেশটিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে । চুক্তিটি ইঙ্গিত দেয় যে চীন মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। এটি প্রমাণ করে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গা রয়েছে।

- Advertisement -
Preparation BD
Preparation BD
Preparation.com.bd বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক একটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগ সাইট। Preparation.com.bd এর অন্যতম উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় তৈরি করা এবং শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং সমস্যা সমাধান করা।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

সর্বশেষ মন্তব্য