শীঘ্রই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে । সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের জন্য এ চাকরির নিয়োগ পদ্ধতি, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আমাদের এ আয়োজন ।
পরীক্ষা পদ্ধতি
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বর থাকে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় (MCQ) ৮০ নম্বর থাকে এবং বাকি ২০ নম্বর থাকে ভাইভা বোর্ডের হাতে ।
আরো পড়ুন : খেলাধুলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সফলতা পাওয়ার অন্যতম সফল পদক্ষেপ হতে পারে সিলেবাস বিশ্লেষণ এবং মানবণ্টন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। তবে বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রশ্ন প্রণেতারা একটা নির্দিষ্ট ধারা অনুসরণ করেই প্রশ্ন প্রণয়ন করে থাকেন ।
লিখিত পরীক্ষা ৮০
২০২২ সালে অনুষ্ঠিত তিন পর্যায়ের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন বিশ্লেষণ
বিষয় | প্রথম | দ্বিতীয় | তৃতীয় |
বাংলা সাহিত্য | ৬ | ৫ | ৬ |
বাংলা ব্যাকরণ | ১৪ | ১৪ | ১১ |
English Grammar | ১৯ | ২০ | ২০ |
English Literature | ১ | – | – |
পাটিগণিত | ১১ | ১১ | ৮ |
বীজগণিত | ৭ | ৬ | ৯ |
জ্যামিতি | ২ | ৩ | ২ |
বিজ্ঞান ও ভূগোল | ৩ | ৩ | ৩ |
বাংলাদেশ বিষয়াবলি | ১৬ | ১৩ | ১৬ |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি | ১ | ২ | ২ |
শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা | – | ৩ | ৩ |
মোট | ৮০ | ৮০ | ৮০ |
মৌখিক পরীক্ষা ২০
১ এপ্রিল ২০১৯ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২০ নম্বর বিভাজন হলো-
ক. | শিক্ষাগত যোগ্যতা-১০ | |
এসএসসি বা সমমান – ৪ এইচএসসি বা সমমান-৪ | ১ম বিভাগ বা GPA ৩ বা তদূর্ধ্ব-৪ ২য় বিভাগ বা GPA ২-৩ এর কম-৩ ৩য় বিভাগ বা GPA ১-২ এর কম-১ | |
স্নাতক বা সমমান-২ | ১ম বিভাগ CGPA (৪ স্কেলে ৩ বা তদূর্ধ্ব, ৫ স্কেলে ৩.৭৫ বা তদূর্ধ্ব)-২ ২য় বিভাগ CGPA (৪ স্কেলে ২.২৫-৩ এর কম, ৫ স্কেলে ২.৮-৩.৭৫ এর কম)-১ | |
খ. | ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে- ১০ |
ভাইভা বোর্ড
ভাইভা বোর্ডে ৩-৪ জন থাকেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— জেলা প্রশাসক (সভাপতি), সুপারিনটেনডেন্ট পিটিআই (সদস্য) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (সদস্য সচিব) । ভাইভা সাধারণত ৩-৫ মিনিটের ব্যাপ্তি হয়ে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে ব্যক্তিভেদে এর চেয়ে কমবেশি সময়ও হয়ে থাকে ।
বেতন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন ১৩তম গ্রেডে অর্থাৎ ১১,০০০- ২৬,৫৯০ টাকা । মূল বেতন ১১,০০০ টাকা এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা ও যাতায়াত ভাতা রয়েছে। ভাতা মূল বেতনের বাইরে একজন নতুন সহকারী শিক্ষক চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০, টিফিন ভাতা ২০০ ও যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা পাবেন।
আরো পড়ুন : সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান ২০২৩ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বাড়ি ভাড়াও রয়েছে। তবে এলাকাভেদে বাড়ি ভাড়ায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৬০% । চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫০% বাড়ি ভাড়া। অন্যান্য হানের বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪৫%।
উৎসব ভাতা
প্রতিবছর মূল বেতনের ৫% হারে বেতন বৃদ্ধি অর্থাৎ ৫৫০ টাকা বেতন বাড়বে। বছরে মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা রয়েছে। অর্থাৎ ১১,০০০ টাকা করে উৎসব ভাতা। প্রতিবছর বৈশাখী ভাতা রয়েছে মূল বেতনের ২০%।
অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় সন্তানের জন্য পোষ্য কোটা রয়েছে । চাকরির পাঁচ বছর পূর্ণ হলে আপনি পেনশনের আওতায় পড়বেন ।
চাকরি শেষে পাবেন ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ল্যামগ্রান্ড, এক বছরের পিআরএল, অর্জিত মূল বেতনের ২৩০ গুণ পেনশন ও আজীবন পারিবারিক পেনশন। ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে পেনশনারদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা হবে ২,৫০০ টাকা ।
মোট বেতন
নবীন সহকারী শিক্ষকেরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সর্বসাকুল্যে পাবেন ১৯,৬০০ টাকা। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় হলে বেতন পাবেন ১৮,৫০০ টাকা। অন্যান্য স্থানে বেতন পাবেন ১৭,৯৫০ টাকা।
পদোন্নতি
সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও পদোন্নতি খুবই কম হয়। উপজেলায় পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতি হয়। অনেকে চাকরিজীবনের ২০-২২ বছর পার করে প্রথম পদোন্নতি পান। আবার কেউ চাকরির সারা জীবনেও পদোন্নতি পান না।
বিশেষ বিধান
- শিক্ষক নিয়োগে উপজেলা ও থানাভিত্তিক কোটা হবে ।
- উপজেলা বা থানাভিত্তিক শূন্যপদ অনুযায়ী, কোনো কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাক্রম অনুযায়ী একই উপজেলা বা থানায় উত্তীর্ণ সাধারণ প্রার্থীদের দ্বারা তা পূরণ করা হয়।
- সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদের ৬০% মহিলা প্রার্থীগণের দ্বারা, ২০% পোষ্য, প্রার্থীগণের দ্বারা এবং অবশিষ্ট ২০% পুরুষ প্রার্থীগণের দ্বারা পূরণ করা হয় ।
- নির্ধারিত কোটার শিক্ষকগণের মধ্যে প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে (মহিলা ৬০%, পোষ্য ২০% ও অবশিষ্ট পুরুষ ২০%) অবশ্যই ২০% বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রীধারী প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা যাবে ।
অনলাইনে বদলি প্রক্রিয়া
১৮ অক্টোবর ২০২২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা সংশোধন করে প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সহকারী শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া অনলাইনে করার ব্যবস্থা করা হয়। অনলাইনে বদলির আবেদনটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (DPEO) কাছে যাবে।
DPEO সেটি মঞ্জুর করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠালে বদলির আদেশ জারি হবে। এরপর আবেদনকারী শিক্ষক বদলির বিষয়টি অনলাইনেই জানতে পারবেন । তিন ধাপের এই যাচাইয়ে প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিন দিন করে সময় পাবেন। এই তিন দিনের মধ্যে যাচাই করে নিষ্পত্তি না করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত পরবর্তী ব্যক্তির কাছে চলে যাবে ।
সাধারণ শর্তাবলি
- এক বদলির পর ৩ বছর না হলে দ্বিতীয় বদলি নয় ।
- প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির পর ২ বছর পর বদলি হওয়া যাবে।
- চার জনের কম শিক্ষক থাকলে বদলি নয়।
বাধ্যতামূলক কোর্স DPEd
বর্তমানে দেশের ৬৮টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (PTI)-এর অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এটি সব শিক্ষকের জন্যই বাধ্যতামূলক। ১৯০২ সালে সর্বপ্রথম গুরু ট্রেনিং (জিটি) স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালে প্রাইমারি ট্রেনিং স্কুল ও ট্রেনিং সেন্টারের স্থলে PTI স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
১৯৫১ সালে PTI স্থাপনের কাজ শুরু হয় । সত্তরের দশকে PTI সমূহে ৯ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু ছিল। ১৯৭৯ সাল থেকে ১ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন (সি-ইন-এড) কোর্স চালু হয়। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কোর্সের মেয়াদ বাড়িয়ে ১৮ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১২ সালে ৭টি PIIতে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় বছর মেয়াদি কোর্স চালু করা হয় এবং কোর্সের নাম দেওয়া হয় ‘ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন’ (DPEd)। পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সাল থেকে দেশের সকল PTI-তে এ কোর্স চালু হয় ।
কোর্স পরিচিতি
- চালু : ২০১২ সালে
- ভর্তির যোগ্যতা : স্নাতক পাশ।
- সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ : জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)।
- মেয়াদ : ১৮ মাস।
- কোর্সের মোট বিষয় : ৭টি
- কোর্স মূল্যায়ন ১২০০ নম্বর (গাঠনিক ৬৯০ নম্বর এবং সামষ্টিক ৫১০ নম্বর)
- কোর্স মূল্যায়নের পাশ নম্বর ৪০%। শিক্ষকমান মূল্যায়নের পাশ নম্বর ৮০% ।
নতুন কোর্স PTBT
বাতিল হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (DPEd) কোর্স । নতুন করে চালু হচ্ছে প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং (PTBT) নামের ১০ মাসের কোর্স। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বয়সসীমা ও যোগ্যতা | |||
পদের নাম | সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা | নিয়োগ পদ্ধতি | যোগ্যতা |
প্রধান শিক্ষক | ২১-৩০ বছর | ক: ৬৫% পদ পদোন্নতির মাধ্যমে; এবং খ. ৩৫% পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে | পদোন্নতির ক্ষেত্রে > সহকারী শিক্ষক পদে প্রশিক্ষণসহ অন্যূন ৭ বছরের চাকরি। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে > কোনো স্বীকৃত |
সহকারী শিক্ষক | ২১-৩০ বছর | সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে | কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রী । |
[সূত্র : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯]