রবিবার, জুন ৪, ২০২৩
প্রচ্ছদপ্রবন্ধ রচনাযুদ্ধক্ষেত্রের আতঙ্ক ভাড়াটে যোদ্ধা

যুদ্ধক্ষেত্রের আতঙ্ক ভাড়াটে যোদ্ধা

- Advertisement -

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর যুদ্ধে নামে বিভিন্ন দেশ ও গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধারা। বিশ্বজুড়ে ভাড়াটে যোদ্ধাদের বেসরকারি ও সামরিক অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণ আছে কিংবা অস্ত্র চালাতে জানে এমন লোকদের সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কখনো বা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেরাই যোদ্ধা তৈরি করে।

ভাড়াটে যোদ্ধা কী

তারা সশস্ত্র সৈনিক। তবে কোনো দেশের নয় বা কোনো আদর্শের সৈনিকও নয় তারা। যে বেতন দেয় তার প্রতিই তাদের আনুগত্য। তারা ভাড়াটে যোদ্ধা (Mercenary)। অর্থের বিনিময়ে তারা যেকোনো দেশ বা সংস্থার হয়ে যুদ্ধ করে । ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় নিরাপত্তা ঠিকাদার বা Security Contractor।

ভাড়াটে যোদ্ধার ইতিহাস

ভাড়াটে সৈনিক পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন পেশা। সব শাসকই নিজেদের নিয়মিত সৈনিকদের বাইরেও ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহার করতেন। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পিটার ডাব্লিউ সিঙ্গার তার Corporate Warriors গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার উর রাষ্ট্রের সুমেরীয় রাজা শুলঘি (খ্রিষ্টপূর্ব ২০৯৪- ২০৪৭) ভাড়াটে সৈন্যদের কাজে লাগান।

পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের বিখ্যাত সুইস গার্ড বাহিনীতেও ভাড়াটে সৈন্য ছিল। আধুনিককালে ভাড়াটে যোদ্ধার প্রচলন হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর একদল সাবেক কর্মকর্তা গড়ে তোলেন ওয়াচগার্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সত্তরের দশকে লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফিকে উৎখাতের ব্যর্থ চেষ্টাসহ অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

- Advertisement -

যারা ক্লায়েন্ট

যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা ভাড়াটে সৈনিকদের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগায় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের ১০% ছিল ভাড়াটে । কিন্তু ইরাক ও আফগান যুদ্ধে এ সংখ্যা বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ । কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বল্পসামরিক শক্তির দেশগুলোও সৈনিক ভাড়া করে । আবার ধনী দেশগুলোও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই ।

আরো পড়ুন : সৌদি-ইরান : বৈরিতা থেকে সম্প্রীতি

ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য মার্সেনারিদের ভাড়া করে সংযুক্ত আরব আমিরাত বলা হয়, তাদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সৈন্য। ছয় বছর ধরে বোকো হারামের সঙ্গে প্রথাগত লড়াই চালিয়ে ব্যর্থ হয় নাইজেরিয়া। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে মার্সেনারিদের শরণাপন্ন হয় আফ্রিকার দেশটি। লিবিয়ার যুদ্ধ এখন অনেকটাই রূপ নেয় ভাড়া করা যোদ্ধাদের লড়াইয়ে। এমনকি জাতিসংঘও তাদের কিছু কাজে ভাড়াটে সৈন্য ব্যবহার করে ।

আর্থিক সমীকরণ

ভাড়াটে যোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহের সম্পর্ক যতটা ততটাই সম্পর্ক অর্থের। সংঘাত আর যুদ্ধ যত বাড়ে, ততই মুনাফা বাড়ে নিরাপত্তা ঠিকাদার কেম্পোনিগুলোর । স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এ খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ হয় । এটিকে বলা হয় ‘যুদ্ধের ব্যবসা । অভিযোগ রয়েছে, মুনাফার জন্য এই ঠিকাদারি কোম্পানিগুলো যুদ্ধ বাধিয়ে রাখে।

ইউক্রেন যুদ্ধে যারা ভাড়াটে যোদ্ধা

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নামা বেশির ভাগ ভাড়াটে সেনা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা । যার মধ্যে অন্যতম হলো ওয়াগনার গ্রুপ । এছাড়াও পশ্চিমা ব্যক্তিমালিকানাধীন সামরিক নিরাপত্তা কোম্পানিগুলোও ইউক্রেনে সক্রিয় রয়েছে। পশ্চিমাদের পরিচালিত সামরিক গ্রুপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—আলফা, ফ্যালাঙ্ক ও নরমান ব্রিগেড ।

বিখ্যাত দুই সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর

■ কনস্টেলিস : ১৯৯৭ সালে কনস্টেলিস প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এর নাম ছিল ‘ব্ল্যাকওয়াটার’ (Blackwater)। মার্কিন মেভি-সিল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা এরিক প্রিন্স এর প্রতিষ্ঠাতা। উত্তর ক্যারোলাইনায় ৭,০০০ একর জায়গায় কনস্টেলিসের প্রশিক্ষণকেন্দ্র । ২০১১ সালে এর নামকরণ করা হয় একাডেমি ।

- Advertisement -

আবার ২০১৪ সালে নামকরণ করা হয় কনস্টেলিস। ২০০৭ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে, কনস্টেলিসের সৈনিক সংখ্যা ২০,০০০। এয়ারক্রাফট আছে ২০টি, আছে অনেক যোদ্ধা কুকুর। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আফগান ও ইরাক যুদ্ধে লড়েছে কনস্টেলিসের সৈনিকরা। জাপানের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও রক্ষণাবেক্ষণ করে কনস্টেলিস। বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে এর সৈনিকরা অংশ নিচ্ছে।

■ ওয়াগনার গ্রুপ : রাশিয়ার মার্সেনারি বা ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোশিন-যাকে পুতিনের রাঁধুনি বলা হয় কারণ একসময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা প্রথম ভূমিকা পালন POLLHA করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকার সমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী ।

তাছাড়া ওয়াগনার বাহিনীর ভাড়াটে সৈন্যরা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে নিয়োগ দেয়। ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০% হচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা। এর মধ্যে হাজার হাজার যোদ্ধা এসেছে রাশিয়ার কারাগারগুলোতে থাকা বন্দিদের মধ্যে থেকে। ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের রাশিয়ার ছায়া-সৈনিক বলা হয়।

- Advertisement -
Preparation BD
Preparation BD
Preparation.com.bd বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক একটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগ সাইট। Preparation.com.bd এর অন্যতম উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় তৈরি করা এবং শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং সমস্যা সমাধান করা।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বাধিক পঠিত

সর্বশেষ মন্তব্য