বাউল সংগীত বাউল সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গান। এটি লোকসংগীতের এক বিশেষ ধারা যা হিন্দু শাস্ত্রের ভক্তিবাদ ও একই সাথে সুফিবাদ দ্বারা প্রভাবিত। সে অর্থে বাউল সংগীত একটি ভিন্নমার্গীয় আধ্যাত্মিক দর্শনের নামান্তর যা, গুরু থেকে শিষ্যে মুখে মুখে যুগ যুগ ধরে সঞ্চারিত হয়।
স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্কের ভাবনা আর ভিন্নধর্মী জীবন দর্শনের মধ্যেই বাউলদের বিশেষত্ব নিহিত। তাদের দর্শন কোনো বিশেষ ধর্ম, জাত, বর্ণ বা দেবতার বিশ্বাসের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় বরং স্রষ্টাকে তারা আত্মার অংশ হিসেবে বিশ্বাস করে । এ দর্শনেই তাদের আত্মার মুক্তি ।
আরো পড়ুন : সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রশ্নোত্তর
বাউল সংগীতে তাদের এ দর্শনই ফুটে উঠেছে। বাউল সংগীতের স্রষ্টা লালন শাহ। তার গানের মাধ্যমে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বাউল গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লালন শাহের পর পাঞ্জু শাহ, দুদ্দু শাহ, ভোলা শাহ, পাগলা কানাই, রাধারমণ, কাঙাল হরিনাথ, হাছন রাজা, অতুল প্রসাদ, বিজয় সরকার, দ্বিজদাস, জালাল খাঁ, উকিল মুন্সী, রশিদ উদ্দিন, শাহ আব্দুল করিম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ কবি ও বাউলের মাধ্যমে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত সংগীতের ধারাটি আরও পুষ্ট হয়।
আরো পড়ুন : ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
বাংলাদেশের কুষ্টিয়া বাউল গানের কেন্দ্র-ভূমি, কালক্রমে তা পার্শ্ববর্তী যশোর, ফরিদপুর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় প্রসার লাভ করে ।
বাউল সংগীত এদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি বড় উপাদান। বাউল সংগীতের প্রধান বাদ্যযন্ত্র একতারা। কোনো কোনো বাউল কোমরে বাঁয়া বাঁধে। ডান হাতে একতারা এবং বাম হাতে বাঁয়া বাজিয়ে বাউলরা একা অথবা দলবদ্ধভাবে গান-নাচ করে । গান, নাচ, বাদ্য— তিনের সমন্বয়ে বাউল সংগীত স্বতন্ত্র আবেগ ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে ।
আরো পড়ুন : ২০২২ সালের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আলোচিত ঘটনা
মানবতার ইতিহাসে এই বাউল সংগীতের অপরিসীম সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্ব বিবেচনায় ইউনেস্কো ২০০৫ সালে একে Masterpiece of the Oral and Intangible Heritage of Humanity হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বাউল সংগীতকে Intangible Cultural Heritage of Humanity হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।