সাধারণ জ্ঞান,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান,সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর,সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বারবার আসা প্রশ্ন,মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন,মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রশ্ন সাধারণ জ্ঞান,বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। একাত্তরের উত্তাল মার্চের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

১ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেলা ১টা ৫ মিনিটে এক বেতার ঘোষণার মাধ্যমে ৩ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় আহূত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২-২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত আন্দোলনই হলো অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১।

আরো পড়ুন : সহকারী জজ নিয়োগ প্রস্তুতি ২০২৩

এ আন্দোলনে কেন্দ্রীয় শাসনের বিপরীতে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় । এ আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাদের সাথে পরামর্শ করে উভয় সংগঠনের সমন্বয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ: গঠন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে এ অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।

২ মার্চ প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা প্রথমবারের মতো উত্তোলন করেন ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব। মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার নকশাকার ছিলেন শিবনারায়ণ দাস। ৬ জুন ১৯৭০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৮ নং কক্ষে বসে তিনি এ পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন।

৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ

ঢাকার পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত জনসভায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করেন ছাত্র নেতা শাজাহান সিরাজ ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ

  • ৭ কোটি মানুষের জন্য আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম হবে ‘বাংলাদেশ ।
  • স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহৃত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাঙলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’ সঙ্গীতটি।
  • স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা

৩ মার্চ “শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’ স্লোগান ধারণ করে সভা করেছিল তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। সেই সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে স্বাধীন বাংলার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে তিনটি আহবান ও দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । সেই সব আহ্বান ও সিদ্ধান্ত বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয় ।

আরো পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য

সেই বিজ্ঞপ্তিই বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম ঐতিহাসিক দলিল। সেই প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ৪ নম্বরে থাকা সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুকে প্রথম জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর এটিই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম আনুষ্ঠানিক দলিল।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অলিখিত এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।

  • ভাষণকাল : ৭ মার্চ ১৯৭১ (রবিবার)।
  • ভাষণ শুরু : বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে।
  • স্থান : রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), রমনা, ঢাকা।
  • মোট সময় : ১৮ মিনিট, মতান্তরে ১৯ মিনিট।
  • শব্দ সংখ্যা : ১,১০৮টি।
  • ভিডিও রেকর্ডকারী : পাকিস্তান চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের।
  • অডিও রেকর্ডকারী : এএইচ খন্দকার।
  • শব্দ ধারণ : সৈয়দ মইনুল আহসান।
  • ভাষণে দাবি ছিল : ৪টি।
  • মাইকের নাম : কল-রেডি।
  • প্রথম লাইন : ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
  • শেষ লাইন : এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
  • ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে : ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
  • উল্লেখযোগ্য ভাষায় অনূদিত ইংরেজি, হিন্দি, রাশিয়ান, আরবি, ফরাসি, চীনা, – ইতালীয়, জাপানি, স্প্যানিশ, পার্সিয়ান, কোরিয়ান এবং উর্দু ।

১৯ মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

অসহযোগ আন্দোলন দুর্বল করতে অন্যান্য সেনানিবাসের মতো জয়দেবপুরের দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের কৌশলে নিরস্ত্র করার জন্য তাদের অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা ব্রিগেড সদর দপ্তর। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালি সৈন্য ও স্থানীয় জনতা তাদের পরিকল্পনা বুঝতে পেরে অস্ত্র জমা না দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর- পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্যে সড়ক অবরোধ করে।

আরো পড়ুন : সংসদ নির্বাচনের সুবর্ণজয়ন্তী

পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের সতর্কতা ও রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দেখে অস্ত্র জমা নেওয়ার আশা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরছিলেন। এ সময় ছাত্র-জনতা জয়দেবপুরের রেলক্রসিং এলাকা ও চান্দনা চৌরাস্তায় তাদের বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী গুলি ছুড়লে ছাত্র- জনতা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ ।

২০ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট অনুমোদিত

গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক লে. জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খান পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘অপারেশন রিটস’ নামে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন । তিনি সামরিক শক্তি প্রয়োগে রাজি না থাকায় ৫ মার্চ পদত্যাগ করেন। দুইদিন পরই তার উত্তরসূরি হিসেবে যোগ দেন ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ হিসেবে খ্যাত জেনারেল টিক্কা খান। তার নির্দেশে ১৮ মার্চ সকালে-জেনারেল রাওফরমান আলী ও জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা অপারেশন সার্চলাইটের বিস্তারিত পরিকল্পনা করেন । সেদিন জেনারেল টিক্কা খান এ নীলনকশা অনুমোদন করেন ।

২৫ মার্চ কালরাত্রি

রাত সাড়ে দশটায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কোড নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রক্তলোলুপ ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পরিচালিত ইতিহাসের জঘন্যতম এ গণহত্যা ‘কালরাত্রি’ হিসেবে পরিচিত।

২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু -শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

স্বাধীনতা ঘোষণা

২৫ মার্চ ১৯৭১ মধ্যরাতের অব্যবহিত পর রাত ১২.২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছিল

This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.

Sheikh Mujibur Rahman
26 March 1971

বাংলা অর্থ

ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।

শেখ মুজিবুর রহমান
২৬ মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার

রাত ১.২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার অভিযানের শিরোনামে ব্যবহার করা হয় Big Bird নামের শব্দ। কারণ অপারেশন ‘সার্চলাইটে বঙ্গবন্ধুর কোড নেম এটি। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর ওয়্যারলেসে সেনা সদর দপ্তরে জানানো হয় Big Bird in the Cage। ওই রাতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে তাকে রাখা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন ২৮৯ দিন। প্রথমে ছিলেন লায়ালপুর কারাগারে এবং ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ নেওয়া হয় মিয়ানওয়ালি কারাগারে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গঠন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-এর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকবাহিনীর হঠাৎ আক্রমণে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি যখন দিশেহারা, অসহায় তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ২৬ মার্চ পরিণত হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার
কেন্দ্রে।

এ বেতার কেন্দ্রের প্রথম অনুষ্ঠান দেশের মানুষকে সাহস জোগায় আর স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রাণিত করে। হতবিহ্বল জাতিকে প্রথম আশার বাণী শোনান চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল হান্নান। তার ঘোষণাটি ২৬ মার্চ ১৯৭১ কালুরঘাট ট্রান্সমিটার থেকে প্রচারিত হয় ।

এ বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকেই মেজর জিয়াউর রহমান ২৭, ২৮ ও ৩০ মার্চ দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। ৩০ মার্চ পাকবাহিনী আক্রমণ চালায় এ বেতার কেন্দ্রের ওপর। বেলাল মোহাম্মদ ও আবুল হোসেন সন্দ্বীপ উদ্যোগী হয়ে এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটারটি প্রথমে রামগড় এবং পরে ভারতের আগরতলায় নিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *