পটভূমি
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা হয় এবং বান্দরবানকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেজ্যুলেশন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়। সার্কেলগুলো— চাকমা, মং এবং বোমাং। বান্দরবান সে সময় বোমাং সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত থাকায় এ জেলার আদি নাম বোমাং থং।
বান্দরবান ১৯৫১ সালে মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল ১৯৮১ তৎকালীন লামা মহকুমার ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
নামকরণ
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এ এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর। বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে (ক্ষুদ্রনদী) পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরের দল। পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়
বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। সে থেকে জায়গাটি পরিচিতি লাভ করে ‘ম্যাঅকছি ছড়া’ নামে। মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষী মানুষের সাধারণ উচ্চারণে এ এলাকা বান্দরবান নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের প্রকৃত নাম ‘রদ ক্যওচি শ্রোত’।
প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা : ৭টি। বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলী কদম, রুমা, থানচি ও লামা।
- থানা : ৭টি
- পৌরসভা : ২টি। বান্দরবান ও লামা
- ইউনিয়ন : ৩৪টি
- জাতীয় সংসদের আসন : ১ টি
- জাতীয় সংসদের ৩০০ নং আসন : পার্বত্য বান্দরবান
সাধারণ তথ্য
- প্রতিষ্ঠা : : ১৮ এপ্রিল ১৯৮১
- সীমানা : পূর্বে মিয়ানমার ও পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা, উত্তরে পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলা এবং দক্ষিণে মিয়ানমার।
- আয়তন : ৪,৪৭৯.০১ বর্গ কিমি (সূত্র BBS)
- জনসংখ্যা : ৪,৮১,১০৯ জন
- সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৬৩.৬৪%
- ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১০৭ জন
- প্রধান নদনদী > সাংগু, মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী ।
জেলার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
সদর➨
- চিম্বুক পাহাড়
- প্রান্তিক হ্রদ
- নীলগিরি
- বোমাং রাজবাড়ি
- বৌদ্ধ স্বর্ণমন্দির
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট
- মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
- নীলাচল
- শুভ্রনীলা
রুমা➨
- তাজিংডং (দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ)
- কেওক্রাডং
- ঋজুক ঝরনা
- জাদিপাই ঝরনা
- পাতংঝিরি ঝরনা
- বগা লেক
থানচি➨
- নাফাখুম ঝরনা
- বাকলাই ঝরনা
- জীবন নগর পাহাড়
আলীকদম➨
- রূপমুহুরী ঝরনা
- মেরাইনডং পাহাড়
- ডিম পাহাড়
লামা➨
- সাঙ্গু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
রোয়াংছড়ি➨
- দেবতাখুম
- শিল্পি পাহাড়
নাইক্ষ্যংছড়ি➨
- বাংলাদেশের রাবার জোন
- উপবন পর্যটনকেন্দ্র
- প্যানোরামা পর্যটনকেন্দ্র
- শৈলচূড়া আশারতলী চা বাগান।
বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের
- জেলা : বান্দরবান
- উপজেলা : থানচি
- ইউনিয়ন : তিন্দু
- স্থান : আখাইনঠং
জানেন কি : বান্দরবান জেলা
- আয়তনে : ৩য়
- চট্টগ্রাম বিভাগের : ৩য়
- জনসংখ্যায় : দেশের ক্ষুদ্রতম জেলা
- চট্টগ্রাম বিভাগের : ১১তম
- সাক্ষরতার হারে : ৬২তম
- চট্টগ্রাম বিভাগের : ১১তম
মুক্তিযুদ্ধে বান্দরবান
সেক্টর➨ ১ নং
হানাদার মুক্ত দিবস
- ১৩ ডিসেম্বর : থানচি ও লামা
- ১৪ ডিসেম্বর : বান্দরবান সদর
- ১৪ ডিসেম্বর : রোয়াংছড়ি
- ১৪ ডিসেম্বর : আলী কদম
- ১৬ ডিসেম্বর : রুমা
- ১৬ ডিসেম্বর : নাইক্ষ্যংছড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- ইউ. কে. চিং মারমা (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে একমাত্র বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা)
- জাফর ইকবাল (ফুটবলার)
- বীর বাহাদুর উশৈ সিং (রাজনীতিবিদ)
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে একমাত্র বান্দরবান জেলাতে। এরা হলো মারমা, চাকমা, মুরং, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বম, খিয়াং, চাক, পাংখোয়া ও তঞ্চঙ্গ্যা।
প্রকৃতির কন্যা
প্রকৃতির কন্যা হিসেবে অপরূপা বান্দরবান এক নামে পরিচিত। পাহাড় কন্যা, পর্যটন কন্যা, বাংলার দার্জিলিং, নৈসর্গিক ভূমি এবং অনেকে মেঘ পাহাড়ের দেশও বলে থাকেন বান্দরবানকে। আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড়ের দাঁড়িয়ে থাকা, উঁচু পাহাড়ে গভীর অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে পর্যটকদের সহজেই কাছে টানে বান্দরবান।