পটভূমি
ব্রিটিশ শাসনামলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মালদহ জেলার অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ কমিশন অনুসারে, নবাবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) এবং তার পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর, থানাকে মালদহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১ নভেম্বর ১৯৪৮ রাজশাহী জেলার একটি থানা ও দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত পোরশা থানাসহ একটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি হয় । এ মহকুমার নাম রাখা হয় ‘নবাবগঞ্জ’।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের জেলা বান্দরবান
১৯৮৯ সালে থানাগুলোকে উপজেলা এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করার ফলে নবাবগঞ্জের ৫টি থানা শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় উন্নীত হয়।
১ মার্চ ১৯৮৪ নবাবগঞ্জ মহকুমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়। ১ আগস্ট ২০০১ সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়।
নামকরণ
প্রাক-ব্রিটিশ আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি। নবাবরা এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। আবার ইতিহাসসূত্রে ‘চাঁপাই’ নামকরণের কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এ ব্যাপারে দু’রকম জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।
প্রথমত, নবাবগঞ্জের মহেশপুর গ্রামে নবাব আমলে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারাণী’ বা ‘চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজি বাস করতেন। তার নৃত্যের খ্যাতি চারপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবদের প্রিয় পাত্রী হয়ে ওঠেন। তার নামানুসারে এ জায়গার নাম হয় ‘চাঁপাই’।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার
দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল । লখিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক । চম্পক নাম থেকেই ‘চাঁপাই’ নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয় ।
প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা : ৫টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট
- থানা : ৫টি
- পৌরসভা : ৪টি— চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, রহনপুর ও নাচোল
- ইউনিয়ন : ৪৫টি
- জাতীয় সংসদের আসন : ৩টি
সাধারণ তথ্য
- প্রতিষ্ঠা : ১ মার্চ ১৯৮৪
- সীমানা : উত্তরে নওগাঁ জেলা, দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে রাজশাহী ও মাগী জেলা, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
- আয়তন : ১,৭০২.৫৫ বর্গ কিমি (সূত্র: BBS)
- জনসংখ্যা : ১৮,৩৫,৫২৭ জন
- সাক্ষরতা (এ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৭১.৯২%
- ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১,০৭৮ জন
- প্রধান নদনদী ▶ গঙ্গা (পদ্মা), মহানন্দা, পুনর্ভবা ও পাগলা নদী ।
আমের রাজধানী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায়। উৎপাদিত আমের মধ্যে ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম ।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়
জেলার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
সদর ▶ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (পূর্বনাম আম গবেষণা কেন্দ্র) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-৩
শিবগঞ্জ ▶ ছোট সোনা মসজিদ • তাহখানা কমপ্লেক্স • বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি • সোনা মসজিদ স্থলবন্দর • শাহ্ নেয়ামতউল্লাহর মাজার
নাচোল ▶ আলী শাহপুর মসজিদ • নাচোল রাজবাড়ী
ভোলাহাট ▶ সমুন্নত ভোলাহাট স্মৃতিসৌধ।
বাংলাদেশের সর্ব পশ্চিমের
- জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- উপজেলা : শিবগঞ্জ
- ইউনিয়ন : মনাকষা
- স্থান : মনাকষা
জানেন কি : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- জেলা আয়তনে : ৪০তম
- রাজশাহী বিভাগের : ৭ম
- জনসংখ্যায় : ৪০তম
- রাজশাহী বিভাগের : ৭ম
- সাক্ষরতার হারে : ৩৮তম
- রাজশাহী বিভাগের : ৫ম
মুক্তিযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- সেক্টর ৭ নং
হানাদার মুক্ত দিবস-
- ১১ ডিসেম্বর : গোমস্তাপুর
- ১১ ডিসেম্বর : শিবগঞ্জ
- ১৫ ডিসেম্বর : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর
- ১৫ ডিসেম্বর : নাচোল
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- ইলামিত্র (ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী)
- প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য)
- প্রফেসর মো. রফিকুন নবী (রনবী) (চিত্রশিল্পী) বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান শেলি (সাবেক প্রধান বিচারপতি)
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য)
- মমতাজউদদীন আহমদ (নাট্যকার)
গম্ভীরা
গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসংগীতের অন্যতম ঐতিহ্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে । গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয় । ধারণা করা হয়, শিবপূজাকে কেন্দ্র করে গম্ভীরার প্রচলন হয়। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা।