ইতিহাসের প্রচ্ছদপট মার্চ

দেশের প্রথম পাতাল রেল

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম পাতাল রেলের (MRT Line-1) নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি মূলত দ্বিতীয় মেট্রোরেল, যা উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে গঠিত।

মেট্রোরেলের ডিপো

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ মৌজায় ৩৫.৯০ হেক্টর বা ৮৮.৭১ একর ভূমিতে MRT Line-1-এর মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে বিমানবন্দর ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রোরেল ডিপোটির সুবিধা পাবে। এ লক্ষ্যে ২৩ নভেম্বর ২০২২ ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ।

আরো পড়ুন :

কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১-এর আওতায় পাতাল রেলের ডিপোর নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ভূমির চুক্তি মূল্য ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে ৮১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং ৫২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়ক প্রতিষ্ঠান JICA থেকে নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী ৯১০ দিনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

নির্মাণ কাজ

দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ মাটির ৩০ মিটার (৯০ ফুট) নিচ দিয়ে চালানো হবে। তবে সবচেয়ে গভীরতম অংশ হবে মালিবাগ-রাজারবাগের মধ্যবর্তী এলাকা। মালিবাগ-রাজারবাগ অংশে দুটি টিউব পাশাপাশি রাখার মতো জায়গা না থাকায় সেখানে একটি টিউবের নিচে আরেকটি টিউব বসানো হবে। তাই এ স্থানে ৭০ মিটার অর্থাৎ ২১০ ফুট নিচ দিয়ে নির্মাণ কাজ চালানো হবে।

পরামর্শক ও নির্মাণের তত্ত্বাবধান

দেশের প্রথম পাতাল রেলের পরামর্শক ও নির্মাণের তত্ত্বাবধানে রয়েছে জাপানের নিপ্পন কোয়ে কোম্পানি লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন আট প্রতিষ্ঠান। ২৩ অক্টোবর ২০২২ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কনসোর্টিয়ামের নিপ্পন কোয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রকল্পের নাম : Mass Rapid Transit (MRT) Line-1। দেশের প্রথম উড়াল ও পাতাল মেট্রোরেল: MRT Line 1। নির্মাণ পরিচালনায় : ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (DMTCL)। মোট ব্যয় : ৫২,৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩,১১১ কোটি ১১ লাখ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA) প্রকল্প সহায়তা (Project Assistance-PA) ৩৯,৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদন : ১৫ অক্টোবর ২০১৯। নির্মাণ কাজ উদ্বোধন : ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত : ২০২৬ সালে। মোট দৈর্ঘ্য : ৩১.২৪১ কিমি। মোট স্টেশন : ২১টি। কাজ হবে : ১২ প্যাকেজে। রুট : ২টি > বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল।

রুট বিমানবন্দরপূর্বাচল
অবস্থান বিমানবন্দর- কমলাপুরনতুন বাজার-পিতলগঞ্জ ডিপো
ধরনপাতালউড়াল
দৈর্ঘ্য১৯.৮৭২ কিমি১১.৩৬৯ কিমি
স্টেশন ১২টি। বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাব নগর, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।৯টি। নতুন বাজার, নদ্দা, জোয়ার, সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার,  পূর্বাচল পূর্ব ও পূর্বাচল  টার্মিনাল।
পূর্বাচল রুটে নতুন বাজার ও নদ্দা স্টেশন দুটি হবে ভূগর্ভস্থ ।

পাতাল রেলের ইতিহাস

স্টীম ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর ১৮২৫ সালে যুক্তরাজ্যের স্টকটন এবং ডারলিংটন-এর মধ্যে পৃথিবীর প্রথম রেলপথ চালু হয় । আর ব্রিটিশ-ভারতে প্রথম রেলপথ চালু হয় ১৮৫৩ সালে । সেই থেকেই শুরু, এরপর বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ট্রেন এক সময় চলতে শুরু করে বৈদ্যুতিক শক্তিতে। বাড়ানো হয় ট্রেনের দৈর্ঘ্য, স্টেশনের ক্ষেত্রেও আসে ভিন্নতা। এরই একটি পাতাল ট্রেন । ভূগর্ভস্থ এই রেল ব্যবস্থাকে ডাকা হয় সাবওয়ে নামেও।

রেল ইঞ্জিন তৈরিতে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল লন্ডন। তাই প্রথম এ শহরেই যাত্রা শুরু হয় পাতাল রেলের। ১০ জানুয়ারি ১৮৬৩ বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ ইঞ্জিনযুক্ত রেলের মাধ্যমে প্যাডিংটন এবং ফ্যারিংডনের মধ্যে চালু হয় লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল ব্যবস্থা শুরু হয়। ভূগর্ভস্থ নাম হলেও এ রেলপথের ৫৫% ভূপৃষ্ঠস্থ।

১৮৯০ সালে এ পথে প্রথম ইলেকট্রিক্যাল ট্রেন চলাচল শুরু করে। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ৪০২ কিলোমিটারের এ মেট্রো স্থানীয়ভাবে ‘টিউব’ নামে পরিচিত । আর বিশ্বের দীর্ঘতম পাতাল রেল অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে; দৈর্ঘ্য ৯৪০ কিলোমিটার। ১৫ আগস্ট ১৯৭৪ সিউল মেট্রোপলিটন সাবওয়েটি খুলে দেওয়া হয়।

১৫ জানুয়ারি ১৯৭১ পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে পুরোনো সাবওয়েটির উদ্বোধন হয় চীনে, যার নাম ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রাগন’ । বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ পাতাল রেলের দৈর্ঘ্য ৭৮৩ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালে ভারতের প্রথম পাতাল রেল চালু হয় কলকাতায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *