তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প আঘাত হানে। স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি আর মৃতের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক।

  • আঘাত হানার তারিখ : ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • সময়কাল : স্থানীয় সময় ভোর ৪:১৭ মিনিটে (ইউটিসি ০১:১৭:৩৫)
  • মাত্রা: ৭.৮
  • উৎপত্তিস্থল : ভূপৃষ্ঠের ১৭.৯ কিমি (১১ মাইল) গভীরে
  • কেন্দ্র : সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে
  • ভূকম্পন বিন্দু : ৩৭.১৬৬° উত্তর ৩৭.০৩২° পূর্ব
  • ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা : প্রধানত তুরস্ক ও সিরিয়া
  • হতাহত : নিহত অর্ধ লক্ষাধিক ও আহত ১.২৫ লাখের অধিক ।
  • ক্ষয়ক্ষতি: প্রলয়ংকরী এ ভূমিকম্পে তুরস্কে শত শত ঐতিহাসিক ও বসবাসের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে ২০০০ বছরের পুরোনো রোম, বাইজানটাইন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের সাক্ষী ‘গাজিয়ানতেপ ক্যাসেল’ লন্ডভন্ড হয়ে যায় । – এর আগে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। ঐ সময় ৩০,০০০-এর অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

ভূমিকম্পের পরিমাপ

ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণে ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ। মাটির নিচে কম্পন সৃষ্টি হলে এই সিসমোগ্রাফে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, সময় ও স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করা হয়। রিখটার স্কেলে কোনো ভূমিকম্পের প্রাবল্যকে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটি একটি ১০-ভিত্তির লগারিদমীয় পরিমাপ। এ পরিমাপে যেকোনো সংখ্যার ভূমিকম্প পূর্ববর্তী সংখ্যার চাইতে ১০ গুণ শক্তিশালী। তবে এখন রিখটার স্কেলের পরিবর্তে Moment Magnitude Scale নামে ভূমিকম্প পরিমাপ করার একটি স্কেল রয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণ

পৃথিবীর ভূত্বক পৃথক পৃথক বিট দিয়ে গঠিত। এই বিটকে বলা হয় প্লেট। এগুলো একটি আরেকটি পাশাপাশি থাকে । এ প্লেটগুলো প্রায়ই সরে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু একটির সঙ্গে আরেকটির ঘর্ষণের কারণে তা সম্ভব হয় না । তবে চাপ বেশি বেড়ে গেলে কখনো কখনো একটি প্লেট হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দেওয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ সরে যায়।

আরো পড়ুন : বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা

ভূ- অভ্যন্তরের সবচেয়ে উপরের দিকে থাকা লিথোস্ফিয়ার স্তরে এমন ৭টি বড়, ১৫টি মাঝারি ও বেশ কিছু তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্লেট রয়েছে। সীমানাতেই যত গণ্ডগোল। ঐ চলতে থাকা এ প্লেটগুলোর সীমানাকে বলে ‘সিস্টেম অব ফল্টস’। এ ফন্ট বলতে দুই টুকরো পাথরের মাঝখানের ফাটল বা চ্যুতি।

টেকটোনিক প্লেটের যেকোনো দুটি ফল্টের মধ্যে ঘষা বা সংঘর্ষ ঘটলেই দেখা দেয় ভূমিকম্প। তুরস্কের ঠিক নিচ দিয়ে এমন দুটি ফল্ট লাইন রয়েছে। এর একটি ‘নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন’ । অন্যটি ‘ইস্ট আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন’ । এ দুই ফাটল-রেখা বরাবরই তুরস্কের অবস্থান তাই দেশটি বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল।

স্থায়িত্ব

ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। মূল ভূমিকম্পকে বলা হয় মেইন শক, এরপর হয় আফটার শক। মূল ভূমিকম্পের আগে অল্পমাত্রায় ভূ-কম্পনকে ফোরশক বলা হয়। তুরস্কে মূল ভূমিকম্পের পরে ১৭০০ আফটার শক রেকর্ড করা হয়।

বিশ্বে প্রতিদিন যত বার ভূমিকম্প হয়

সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩৮ বার ভূমিকম্প হয়। ২০২২ সালে ৪৯,৮৩১টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিজি। তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয়েছে তার তীব্রতা বছরে একবার বা বহু বছরে একবার হয় ।

আরো পড়ুন : সাত হাজার নতুন দ্বীপ

মাত্রা ও প্রাণহানির ব্যাপকতা বিবেচনায় বিশ্বের কয়েকটি ভূমিকম্প

মাত্রা অনুযায়ীসর্বাধিক প্রাণহানি
মাত্রাদেশ সময়কালপ্রাণহানিমাত্রা দেশসময়কাল
৯.১-৯.৩ইন্দোনেশিয়া২৬ ডিসেম্বর ২০০৪২,৩০,০০০৯.১-১.৩ইন্দোনেশিয়া২৬ ডিসেম্বর ২০০৪
৯.১জাপান১১ মার্চ ২০১১২,২০,০০০৭.০হাইতি১৩ জানুয়ারি ২০১০
৮.৮চিলি২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০৮৮,০০০৭.৯চীন১২ মে ২০০৮
৮.৬ইন্দোনেশিয়া২৮ মার্চ ২০০৫অর্ধ লক্ষাধিক৭.৮তুরস্ক ও সিরিয়া৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
৮.৬ইন্দোনেশিয়া১১ এপ্রিল ২০১২৪৭,000৭.৬পাকিস্তান৮ অক্টোবর ২০০৫

২ মে ১৯৬০ চিলিতে সবচেয়ে বড় ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *