কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা—একে একে সবাই চ্যাটবট তৈরিতে ব্যস্ত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই (OpenAI) চ্যাটজিপিটি নামে একটি চ্যাটবট চালু করেছে।
চ্যাটজিপিটি কী?
ChatGPT’র পূর্ণরূপ Chat Generative Pre-trained Transformer। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি চাটবট সিস্টেম বা আলাপচারিতা করার সফটওয়্যার। Reinforcement learning from Human Feedback নামক একটি মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি তৈরি করা হয়।
এটি কথোপকথন শুরু, প্রশ্নের উত্তর প্রদান, ভুল স্বীকার, ভুল অনুমান চ্যালেঞ্জ এবং অযাচিত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম। এটি তার ৩০০ বিলিয়ন শব্দের তথ্যভান্ডারে থাকা নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব হাজির করে। চ্যাটজিপিটিতে ইন্টারনেটের ওয়েব পেজ, ওয়েব টেক্সট, বই, উইকিপিডিয়া, আর্টিকেলসহ বিভিন্ন সোর্স থেকে বিপুল ডাটা রয়েছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর ওপেনএআই নামের একটি কৃ ত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটি উদ্ভাবন করে । ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ স্যাম অ্যান্টম্যান, ইলন মাস্কসহ কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ওপেনএআই গড়ে তোলেন । ৩০ নভেম্বর ২০২২ চ্যাটজিপিটির পরীক্ষামূলক ভার্সন চালু হয়।
আরো পড়ুন : তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প
এর আগে ১১ জুন ২০২০ প্রতিষ্ঠানটি জিপিটি-৩ (GPT-3) নামের একটি অ্যাপলিকেশন তৈরি করে। সেটি মানুষের মতো করে বার্তা লিখতো । জিপিটি-৩ এবং পরবর্তীতে তৈরি করা জিপিটি-৩.৫ মিলেই চ্যাটজিপিটি তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মাইক্রোসফট এ কোম্পানিতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তাদের সাথে যুক্ত হয় ।
বৈশিষ্ট্য
চ্যাটজিপিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের মতো লেখা বা টেক্সট তৈরি করার ক্ষমতা। অর্থাৎ, কোনো একটি বিষয়ে একজন মানুষ যেমন প্রত্যুত্তর দিতে পারে, চ্যাটজিপিটি সে রকমই জবাব লিখে জানাতে পারে। এটি চ্যাটবটের মতো অ্যাপগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
চ্যাটজিপিটির লক্ষ্য হলো, এমন একটি কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া, যা প্রায় সহজাত মনে হয় । স্বাভাবিক ভাষাকে যন্ত্র যাতে আরও বেশি করে বুঝতে পারে এবং বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ করতে পারে, সেই ক্ষমতা চ্যাটজিপিটির রয়েছে। বর্তমানে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) নিয়ে যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তারই প্রায়োগিক রূপ এই চ্যাটজিপিটি ।
আরো পড়ুন : মধ্য আফ্রিকার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
ইন্টারনেট থেকে লিখিত কথোপকথনের একটি বড় তথ্যভান্ডার দিয়ে চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণের অর্থ হলো, এটি মানুষের বিভিন্ন রকম ভাষাশৈলী, বিন্যাস এবং বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। যত বেশি ধরনের কথোপকথন পাওয়া যাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রোগ্রামটি তত সঠিকভাবে কথার প্রত্যুত্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিতে পারবে ।
সুবিধা
এআই মডেলের দ্বারা তৈরি চ্যাটবট সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং যুক্তি-যুক্তভাবে রেজাল্ট প্রদর্শন করে। এই চ্যাটবট আপনার জন্য কবিতা লেখা, পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লেখা, অর্থনীতি – রসায়ন থেকে শুরু করে একাধিক প্রশ্নের উত্তরসহ ডিজিটাল সহকারী হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য, প্রোগ্রামিং ভাষা এবং গেমও খেলা যায় ।
অসুবিধা
কিছু সুবিধা থাকলেও এই চ্যাটবটে কেবল টেক্সট রেজাল্ট পাওয়া যায়। ভিডিও বা ভিজুয়াল রেজাল্ট আসে না। এছাড়া এটি উত্তর দিতে সক্ষম নয় ।
চ্যাটজিপিটির পাল্টা বট বার্ড
ধারণা করা হয়, চ্যাটজিপিটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গুগল। কারণ, গুগলের সার্চ ইঞ্জিন যেখানে মানুষকে নানা ধরনের সূত্র ধরিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়, সেখানে চ্যাটজিপিটি রীতিমতো সমাধান দেয়। ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ গুগল বার্ড (BARD) নামে একটি চ্যাটবট ওপেন করে জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য। বর্তমানে এটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে রয়েছে।
চ্যাটবট
চ্যাটবট এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গঠিত। এটি একটি বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যাকে অসংখ্য ডেটা দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়। ফলে কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষের মতো করে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে; অর্থাৎ ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে পারে।
AI
প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই Artificial intelligence (AI) বা কৃত্রিম মেধা। এটি এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি, যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় এবং ভাবায়। যেমন, কারো কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি। এককথায় মেশিন লার্নিং ১৯৪০ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পথচলা শুরু । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং এবং নিউরোলজিস্ট গ্রে ওয়াল্টার বুদ্ধিমান মেশিন এবং তার বিভিন্ন সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন।