সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের একটি নজরদারি বেলুনকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক সংকট শুরু হয়। এরপর যুদ্ধবিমান দিয়ে বেলুনটি ভূপাতিত করা নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েন দেখা দেয় ৷
গুপ্তচর বেলুন
গুপ্তচর বেলুন (Spy Balloon) সাধারণত নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের বেলুন সাধারণ হিলিয়াম গ্যাসে ভরা থাকে। এটি আকাশের অনেক উঁচুতে উড়তে সক্ষম। বেলুনের নিচের অংশে একটি সৌরশক্তির প্যানেল থাকে, যা থেকে বেলুনটি পরিচালনার শক্তি জোগায় এবং নিচেই ক্যামেরা, রাডার, সেন্সর এবং যোগাযোগের সরঞ্জাম থাকে। এ বেলুনগুলো বাণিজ্যিক বিমান যে উচ্চতায় ওড়ে তার থেকে বেশি উচ্চতায় উড়ে থাকে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালনা করা যায় এগুলো ।
ইতিহাস
১৮০০ সাল থেকে গুপ্তচর বেলুনের প্রয়োগ শুরু হয়। ১৮৫৯ সালে ফ্রাঙ্কো অস্ট্রিয়ান যুদ্ধে নজরদারির জন্য ফ্রান্স প্রথম এ বেলুন ব্যবহার করে । সেই বেলুনে মানুষও থাকত। ১৮৬১-১৮৬৫ সাল অবধি গৃহযুদ্ধের সময়েও এই ধরনের বেলুনের ব্যাপক প্রয়োগ হয়েছিল। সে সময় বেলুনের আরোহীরা দুরবিন দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে মোর্স কোডের মাধ্যমে সংকেত পাঠাতো।
আরো পড়ুন : চ্যাটজিপিটি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্ময়
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হাইড্রোজেন ভরা বেলুন বড় ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুপ্তচর বেলুনের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পায়। বিশ্বযুদ্ধে জাপানি বাহিনী মার্কিন ভূখণ্ডে অগ্নিসংযোগকারী বোমা পরিবহনে বেলুন ব্যবহার করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে এমন বেলুন তৈরি করা শুরু করে। মিশনের নাম দেওয়া হয় Project Genetrix। শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরের ওপর নজরদারির জন্য এ বেলুন ব্যবহার করে।
সেই আমলে গোয়েন্দা বেলুন বাতাসের টানে অনেক সময় দিগ্ভ্রান্ত হয়ে যেত। কিন্তু এখনকার আধুনিক বেলুন ক্যামেরা, রাডার ও রেডিও ডিভাইসসজ্জিত থাকায় তা সাধারণত পথ হারায় না ।
সুবিধা
গোয়েন্দা নজরদারির সবচেয়ে পুরোনো পদ্ধতিগুলোর একটি হলো বেলুন। গত কয়েক দশক ধরে নজরদারির কাজে স্যাটেলাইটের ব্যবহার হয়ে আসছে । বর্তমানে লেজার প্রযুক্তি ও কাইনেটিক অস্ত্র উদ্ভাবনের ফলে স্যাটেলাইটকে সহজেই অন্ধ করে দেওয়া সম্ভব । তাই আবারো বেলুনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে দেশগুলোর। গুপ্তচর বেলুনে যে সকল সুবিধা রয়েছে—
- নজরদারি বেলুনগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। ক্যামেরা একদম নিচে তাক করা থাকে। তাই খুব কাছ থেকে নির্দিষ্ট স্থান বা বস্তু পর্যবেক্ষণ করা যায়।
- কখনো কখনো আবহাওয়ার ওপর এর গতিপথ নির্ভর করলেও নির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করে বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- কম ব্যয়বহুল এবং খুব সহজেই মোতায়েন করা যায়।
- স্যাটেলাইট থেকে অনেক কম উচ্চতায় বেলুন ওড়ে তাই অনেক বেশি জায়গাজুড়ে নজরদারি চালাতে পারে ।
- স্যাটেলাইট তার নিজের কক্ষপথেই ঘুরতে থাকে। কিন্তু বেলুন যেকোনো জায়গায় পাঠানো যায় ।
- সর্বনিম্ন কক্ষপথে প্রদক্ষিণকারী স্যাটেলাইটের চেয়েও বেলুনগুলো স্পষ্ট ছবি তুলতে পারে ।
- নজরদারি বেলুনগুলো ইলেকট্রনিক সংকেত সংগ্ৰহ করতে এবং যোগাযোগে বাধা তৈরিতে সক্ষম ।
মার্কিন আকাশে চীনা গুপ্তচর বেলুন
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মার্কিন সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার আকাশে সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন শনাক্ত করে। দেশটির অভিযোগ চীন এ বেলুনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটির ওপর নজরদারি করছে। এ ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি রিঙ্কেন চীন সফরের পরিকল্পনা বাতিল করে।
আরো পড়ুন : তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প
২০১৮ সালের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম চীন সফরের সমস্ত সম্ভাবনা উবে যায় ‘গুপ্তচর’ বেলুনকাণ্ডের পর। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ক্যারোলিনা উপকূলে মার্কিন যুদ্ধবিমান দিয়ে বেলুনটি ভূপাতিত করা হয়। একটি এফ-২২ যুদ্ধ বিমান থেকে AIM-9X Sidewinder ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে বেলুনটিকে আঘাত করে। এতে বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে।
গগণচুম্বী গোয়েন্দা বেলুন
- হিলিয়াম গ্যাসে পরিপূর্ণ
- শক্তি উৎপাদনে সৌর শক্তির ব্যবহার
- ক্যামেরা, রাডার, সেন্সর যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকে
কত উচ্চতায় উড়তে পারবে?
১,২০,০০০ ফুট (৩৭ কিমি) | গোয়েন্দা বেলুন |
৮০,০০০ ফুট (২৪ কিমি) | |
৬৫,০০০ ফুট (২০ কিমি ) | যুদ্ধ বিমান |
৪০,০০০ ফুট (১২ কিমি) | বাণিজ্যিক বিমান |