ক্যাশলেস বাংলাদেশ

ক্যাশলেস বাংলাদেশ

ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করতে ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ঢাকার মতিঝিলে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বাংলাদেশ প্রচারণার উদ্বোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্টসহ সব ডিজিটাল লেনদেনের সুফল সাধারণ মানুষকে জানাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্যদিকে ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৩০ জুন ২০২৩ এর মধ্যে অ্যাপে ‘বাংলা কিউআর’ কোড পেমেন্ট সিস্টেম চালুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কিউআর কোড কী

QR Code-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Quick Response code মূলত দ্রুততার সঙ্গে এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ (ডাটা এনকোড) করা যায় বলে এ নাম। এটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি বর্গাকার গ্রিডে সাজানো অনেকগুলো কালো বর্গক্ষেত্ৰ নিয়ে গঠিত যা, ক্যামেরার মতো একটি ইমেজিং ডিভাইস দিয়ে পড়া যায়। এ কোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ আমাদের স্মার্টফোনেই থাকে। প্রতিটি বিন্দু বাইনারি কোডে এক এবং প্রতিটি খালি জায়গাগুলি শূন্যকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আরো পড়ুন : দেশের প্রথম পাতাল রেল

এই গ্রিডগুলি Uniform Resource Locator (URL) সহ সংখ্যা, অক্ষর বা উভয়ের সেট সাঙ্কেতিক অক্ষরে সংগ্রহ করে । সবচেয়ে ছোট গ্রিডে ২১টি সারি ও ২১টি স্তম্ভ এবং সবচেয়ে বড় গ্রিডে ১৭৭টি স্তম্ভ ও ১৭৭টি সারি থাকে। যখন কোনো ব্যক্তি একটি কোড স্ক্যান করেন তখন ফোনে একটি URL উপস্থাপন করে। URL’র ওপর টাচ করলেই মোবাইল ব্রাউজারে ঐ URLটি খুলে যাবে।

কিউআর কোডের উদ্ভাবন

১৯৯৪ সালে জাপানের জনপ্রিয় অটোমোবাইল কোম্পানি টয়োটার অধীন ‘ডেনসো ওয়েভ’ (বর্তমান ডেনসো কর্পোরেশন) -এর ইঞ্জিনিয়ার মাসাহিরো হারা সর্বপ্রথম কিউআর কোড নকশা করেন । মূলত মোড়কজাত করার সময় গাড়িকে ট্র্যাক করার উদ্দেশ্যেই এটি তৈরি করা হয়, যা পুরো জাপানেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণ বারকোডের তুলনায় এটি দ্রুত পঠনক্ষম এবং বেশি তথ্য ধরে রাখতে পারায় গাড়ি শিল্পের বাইরেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

কিউআর পেমেন্ট

  • মোবাইলে আপনার ব্যাংক / MPS/ Payment Service Provider (PSP) অ্যাপ ডাউনলোড করুন ।
  • ব্যাংক / MFS / PSP’র অ্যাপে পিন টাইপ করে লগ ইন করুন ।
  • দোকান বা মার্চেন্ট আউটলেট প্রদর্শিত কিউআর কোড স্ক্যান করুন ।
  • পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করার জন্য টাকার পরিমাণ লিখুন।
  • পিন/ওটিপি টাইপ করে লেনদেন সম্পন্ন করুন।
  • লেনদেন সম্পন্ন হবে এবং পেমেন্টের কনফার্মেশন ও ডিজিটাল রিসিট পাবেন ।

ক্রেতার সুবিধা

পেমেন্ট করতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হয় না • ক্রেডিট/ ডেবিট/ প্রিপেইড কার্ড সঙ্গে না থাকলেও ব্যাংক/MPS/PSP অ্যাপের সঙ্গে পূর্বে সংযুক্ত কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যায় • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা MFS ওয়ালেটের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায় ।

বিক্রেতার সুবিধা

নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না বিধায় ছেঁড়া-ফাটা বা জাল নোট গ্রহণের আশঙ্কা থাকে না। কিউআর এর ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ অনেক কম। বড় বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতারাও কম খরচে কিউআর ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার মূল্য গ্রহণ করতে পারবেন।

বাংলা কিউআর কোড

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও Mobile Financial Services (MFS)-এর কিউআর কোড থাকলেও সর্বজনীন কিউআর নেই। ফলে, শুধু ঐ ব্যাংক বা MFS গ্রাহকরা পারস্পরিক লেনদেনেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বজনীন বাংলা কিউআর প্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

১১ মার্চ ২০১৯ বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলা কিউআর স্ট্যান্ডার্ড ঘোষণা করে। ৬ জানুয়ারি ২০২১ মোবাইল ফোনে কিউআর কোডভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের জন্য ‘বাংলা কিউআর’ বাধ্যতামূলক করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে সম্প্রতি ১০টি ব্যাংক, ৩টি MFS ও ৩টি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম যুক্ত হয়। এসব ব্যাংক ও MFS অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহক বাংলা কিউআর-এ অংশগ্রহণকারী যেকোনো ব্যাংক বা MFS অ্যাকাউন্টধারী মার্চেন্টকে পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করতে পারেন একবার স্ক্যান করেই।

সীমাহীন লেনদেন

একজন গ্রাহক এখন থেকে দিনে যত খুশি ‘বাংলা কিউআর’ কোডে লেনদেন করতে পারবেন। . ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে। এছাড়া দেশের সব ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রোভাইডার (MFS), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, ৩০ জুন ২০২৩ এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর অ্যাপে ‘বাংলা কিউআর’ কোড পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *