কিডনির বিভিন্ন রোগ

কিডনির বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার

কিডনির বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা কিডনি বিভিন্ন রোগ, রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রয়োজনে খুজে পেতে শেয়ার করে রাখুন।

কিডনি বা বৃক্ক

বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক নিচে, উদর গহ্বরের কটি অর্থাৎ কোমর অঞ্চলে মেরুদণ্ডের দু’পাশে একটি করে মোট দুটি বৃক্ক (Kidney) থাকে। উদর গহ্বরে যকৃতের অবস্থানের কারণে বাম বৃদ্ধটি ডান বৃক্কের তুলনায় সামান্য উপরে অবস্থিত।

কিডনির গঠন

কিডনি দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো। এর পার্শ্বদেশ উত্তল, ভিতরের দিক অবতল। অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাম বলে। ১৮৪২ সালে স্যার উইলিয়াম বোম্যান কিডনির প্রথম সূক্ষ্ম গঠনের সঠিক বর্ণনা দেন।

কিডনির কাজ

মূত্র উৎপাদন কিডনির প্রধান কাজ হলেও এটি রেচন বর্জ্য অপসারণ, দেহে ও রক্তে পানির ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজও সম্পন্ন করে ।

নেফ্রন

বৃক্ক বা কিডনির গাঠনিক ও কার্যিক একককে নেফ্রন (nephron ) বলে । মানুষের প্রত্যেক বৃদ্ধে ১০-১২ লক্ষ নেফ্রন রয়েছে। প্রতিটি নেফ্রন প্রায় ৩-৫ সে.মি.

কিডনি বিকল

বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনির সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। বলা হয়ে থাকে, ৭০ বছর বয়স্ক মানুষের কিডনি মাত্র ৫০% কাজে সক্ষম থাকে। রোগ-ব্যাধির কারণে কিডনির সক্ষমতা কমে যাওয়াকে কিডনি বিকল বলে। কিডনির বৈকল্য দু’ভাবে দেখা দিতে পারে, একটি হলো দীর্ঘস্থায়ী (chronic), অন্যটি তাৎক্ষণিক (acute)।

কিডনি বিকলের লক্ষণ

অতি অল্প, ঘন ও গাঢ় মূত্র ত্যাগ বা মূত্র একেবারেই না হওয়া। হাত ও পায়ের পাতা, পা, মুখমণ্ডল ইত্যাদি ফুলে যায়, ফুসফুসে পানি জমার কারণে ঘনঘন শ্বাস নিতে হয়। পাঁজর ও কোমরের মাঝামাঝি দু’পাশে ব্যথা (flank pain) | ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ।

ডায়ালাইসিস (Dialysis)

ডায়ালাইসিস একটি কৃত্রিম প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বৃক্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে রক্তে জমে যাওয়া বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, পটাসিয়াম) ও অপ্রয়োজনীয় পানি অপসারণ করা হয়। ১৯২৪ সালে জার্মান চিকিৎসক জর্জ হাস্ সর্বপ্রথম ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার প্রবর্তন করেন।

অঙ্গ বা টিস্যু প্রতিস্থাপন

একজন ব্যক্তির শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে অথবা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে অঙ্গ বা টিস্যু প্রতিস্থাপন বা সংযোজন করাই ট্রান্সপ্লান্টেশন। ট্রান্সপ্লান্টেশন হতে পারে শরীরের বিভিন্ন পূর্ণাঙ্গ অঙ্গ (যেমন : কিডনি, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের টিস্যু (যেমন : চোখের কর্নিয়া, চামড়া, হার্ট ভাল্ব, শিরা ইত্যাদি)।

আরো পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য

তবে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপিত অঙ্গ হলো কিডনি। সর্বপ্রথম সফল কিডনি সংযোজন হয় ১৯৫৪ সালে যমজ সন্তানদের মধ্যে। যা ছিল লিভিং রিলেটেড কিডনি।

কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বা সংযোজন

দু’টি কিডনি স্থায়ীভাবে পুরোপুরি বিকল হওয়ার চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন । ডায়ালাইসিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাময়িক। সে ক্ষেত্রে স্থায়ী চিকিৎসা হলো কিডনি সংযোজন বা ট্রান্সপ্লান্টেশন।

প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা প্রমাণিত যে, কিডনি দাতারা একটি কিডনি দানের জন্য বাড়তি কোনো অসুবিধা ভোগ করে না। একজন কিডনি অকেজো রোগী, যার বয়স ১০-৬৫- এর ভেতরে, লিভার ও হার্ট সুস্থ এবং শরীরের কোনো সংক্রামক ব্যাধি নেই এবং রোগী ডায়ালাইসিসে সুস্থ থাকে, তাকেই কিডনি সংযোজনের জন্য মনোনীত করা হয়।

আরো পড়ুন : সংসদ নির্বাচনের সুবর্ণজয়ন্তী

এরপর রোগীকে ও কিডনি দাতাকে আইন অনুযায়ী নিকটাত্মীয় কি না তার প্রামাণিক দলিল দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মেডিক্যাল বোর্ড যখন নিশ্চিত হয় কিডনি দাতা ও গ্রহীতা অপারেশনের জন্য উপযুক্ত কেবল তখনই অপারেশনের তারিখ দেওয়া হয় ।

বাংলাদেশে কিডনি সংযোজন

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন

১৩ এপ্রিল ১৯৯৯ বাংলাদেশে প্রথম মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’ প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী জীবিত এবং ব্রেন- ডেড রক্ত সম্পর্কীয় স্বজন ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অঙ্গ লেনদেন বৈধ ঘোষণা করা হয়। রক্ত সম্পর্কীয় স্বজন বলতে বোঝানো হয় আপন ভাইবোন, মা-বাবা, চাচা, ফুপু, মামা, খালা। পরে ২০১৮ সালে সংশোধিত আইনে চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, খালাতো ভাই এবং নানা- নানি, দাদা-দাদিকে নিকটাত্মীয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কিডনি দাতার বয়স ১৮-৬৫ বছরের ভেতর হতে হবে এবং মৃত্যুর আগে তার সম্মতিপত্র অথবা মৃত্যুর পর নিকটাত্মীয়ের সম্মতি লাগবে। এর বাইরে কেউ স্বেচ্ছায় দান করতে চাইলেও কিডনি দেওয়া-নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া ক্লিনিক্যালি মৃত ব্যক্তি বা ব্রেইন ডেড হয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির কিডনি আইন-কানুন মেনে নেওয়া যেতে পারে।

প্রতিস্থাপনে সফলতা

বাংলাদেশে কিডনি সংযোজনে সাফল্যের হার শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ। ১৯৮২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (BSMMU) প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। ২ মার্চ ২০২২ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ দেশে প্রথমবারের মতো ব্রেন ডেড রোগী সারাহ ইসলামের দান করা কিডনি অন্য দুই নারীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *