সব জাতিরই সুনির্দিষ্ট কিছু উৎসব রয়েছে। জাহেলি যুগেও আরবে নওরোজ ও মেহেরজান নামের দু’টি উৎসব ছিল । আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের এর চেয়ে উত্তম দুটি উৎসব উপহার দেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পহেলা শাওয়াল পালিত হয় ঈদুল ফিতর। আর ১০ জিলহজ পালন করা হয় ঈদুল আজহা ।
নামকরণ
ঈদ শব্দটি আরবি। ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি । শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। লিসানুল আরব অভিধানে রয়েছে, আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। ঈদ প্রতিবছর সাজগোজ, আনন্দ-খুশি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে ফিরে আসে। এ কারণে ঈদের দিনকে আনন্দ ও খুশির দিন বলা হয়।
কোরআন মাজিদেও ঈদ শব্দের ব্যবহার রয়েছে; যেমন- মরিয়ম তনয় ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে ঈদ আনন্দোৎসব এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৪)
ঈদের প্রবর্তন
মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদযাপন করছে । তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে।
মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এ দু’টির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন । তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩৬৪৭ )
মদিনায় প্রথম ঈদ
মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৩০ বা ৩১ মার্চ ৬২৪ । তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না । তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না । মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন।
আরো পড়ুন
- ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান স্কুল পর্যায়-২
- ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান স্কুল/সমপর্যায়
- ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান কলেজ পর্যায়
- বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি মডেল টেস্ট
- সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রশ্নোত্তর
- সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রশ্নোত্তর
- সাধারণ বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর- বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
- কম্পিউটার সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন । বালিকা বয়সি আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তার পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম ।
ঈদে রাসুল (সা.)-এর আমল
মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেন। ঈদুল আজহায় কিছু খেতেন না। কোরবানির গোশত দিয়ে দিবসের প্রথম আহার করতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন।
তিনি ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব- দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন । অতঃপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে খুতবা দিতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন।
সাহাবায়ে কেরামের ঈদ
সাহাবায়ে কেরাম সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-কে অনুসরণ করতেন। তারা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন। সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমযানে গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।
তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কীভাবে ইমামতি করতে পারি। ঈদের দিন অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তার পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য। মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাকে কাছে পাওয়া, তার নির্দেশ পালন করাই ছিল তাদের প্রকৃত আনন্দ।
ঈদের গান
মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ‘ঈদুল ফিতর’ নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত কালজয়ী গান ‘ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদের অনুরোধে ১৯৩১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন।
গানটি লেখার চারদিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে গানটি প্রকাশ করা হয়। গ্রামোফোন কোম্পানি এর রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ডের অপর গান ছিল ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর, বদনসীব আয়, আয় গুনাহগার, নতুন করে সওদা কর।