বিশ্বে নানা ধরনের ভাষা রয়েছে। ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বা সমাজের মাঝে ভাষার পার্থক্য দূর করাই দোভাষী বা ইন্টারপ্রেটারদের কাজ। বাংলাদেশে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী
কোনো নির্দিষ্ট ভাষার মূল বক্তব্য নতুন কোনো ভাষায় প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করাকেই ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী বলা হয়। একজন ইন্টারপ্রেটারের মূল দায়িত্ব হলো দুজন ভিন্ন ভাষী মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।
ভাষা নির্ধারণ :
কোনো ব্যক্তি ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী হতে হলে অবশ্যই তাকে কোন ভাষা শিখবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যে ভাষার চাহিদা বেশি সে ভাষা নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ইংরেজির পাশাপাশি জার্মান, ফরাসি, চীনা, আরবি, সুইডিশ, ইতালীয় ও গ্রিক ভাষা প্রভৃতি ভাষা নির্মারণ করা যায়।
কারিগরি জ্ঞান :
ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী হিসেবে কাজ করতে কারিগরি জ্ঞান থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে হলে অফিস প্রোগ্রামে শব্দকোষ এবং পরিভাষা ডাটাবেজে অনুবাদ করতে হলে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং টেকনিক্যাল টার্মস জানা থাকতে হয়।
কোথায় শিখবেন
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য তিন মাসের শর্ট কোর্স, জুনিয়র, সিনিয়র, ডিপ্লোমাসহ মানা মরনের কোর্স রয়েছে। এখানে পৃথিবীর অনেক ভাষা শিখানো হয়।
ব্রিটিশ কাউন্সিল :
ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জানা রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিল রিসোর্স সেন্টার।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ফরাসি ভাষা শিখতে পারেন। যা সম্পূর্ণ ফ্রান্সের এনভায়রনমেন্টে তৈরি করা হয়।
গ্যোটে ইনস্টিটিউট
অলাভজনক জার্মান সাংস্কৃতিক সংগঠন। এখানে আধুনিক জার্মান ভাষা শেখানো হয়।
ক্যারিয়ার
দূতাবাসসমূহ :
বিদেশি মিশন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পে অভিজ্ঞ দোভাষীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি কোনো ভাষায় দক্ষ হন তাহলে অনুবাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ও অনুবাদকেন্দ্রে ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষীর চাহিদা প্রচুর।
জাতিসংঘ ও বিশ্ব সংস্থা :
জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ এবং স্প্যানিশ। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ৫২টি সদস্য দেশের সরকারি ভাষা। তাই জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে ক্যারিয়ার গড়তে এ ভাষাগুলো শিখতে পারেন।
সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী :
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কন্টিনজেন্টের সাথে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ভাষায় দোভাষী নিয়োগ দেওয়া হয়।
ভ্রমণ নির্দেশক :
যে ভাষা শিখবেন সে দেশের ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে কোর্স করে নিতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন দোভাষী হিসেবে কাজ করতে পারবেন, তেমনি সেই দেশের ভ্রমণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন : মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ (MR) বা মেডিকেল প্রমোশন অফিসার (MPO)
সংবাদপত্র :
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে দোভাষী বা ইন্টারপ্রেটারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিদেশি পত্রিকা বা টিভির নিউজ প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার, রিসোর্ট, মোটেল, পাঁচতারা হোটেল, বিমান ও পরিবহন কোম্পানিতে রয়েছে ইন্টারপ্রেটার ও দোভাষীর চাহিদা ব্যাপক।
সফলতার কৌশল
স্মার্ট ও স্পষ্টভাষী :
ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী হিসেবে কাজ উভয় ভাষায় অনর্গল কথা বলা, প্রখর স্মৃতিশক্তি এবং বক্তব্যের অর্থ স্পষ্ট ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করার গুণাবলি থাকতে হবে। কথা বলার ক্ষেত্রে স্মার্ট ও বিনয়ী হতে হবে। যাতে সহজেই শ্রোতার হৃদয়গ্রাহী হয়।
ভাষা ও সংস্কৃতি :
উৎস ভাষার ধারণাকে লক্ষ্যভাষায় সমতুল্য ধারণায় রূপান্তর করা । আক্ষরিক অনুবাদ না করে ভাবগত ও প্রাসঙ্গিক অনুবাদ করা। অনুবাদের ক্ষেত্রে মূল ভাষাশৈলী এবং ভঙ্গিমা রক্ষা করা । অনুবাদ করার পূর্বে উভয় ভাষাভাষীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করা।
স্বরভঙ্গির ব্যবহার :
যেকোনো ভাষায় কথা বলতে হলে সহজভাবে বলার চেষ্টা করা। ভাষার জটিলতা পরিহার করে হাসিমুখে কথা বলা।
আই কন্ট্যাক্ট :
ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা। এতে বক্তার সাথে শ্রোতার সেতুবন্ধন তৈরি হয় । কাজের প্রয়োজনে মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়। তাই প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিদেশি ভাষা জানা লোকের চাহিদা ।
Mentors’ Speech
The Art of Public Speaking গ্রন্থে ডেল কার্নেগী কথা বলার সময় শ্রোতার মনযোগ আকর্ষণের কিছু কৌশল উল্লেখ করেন-
- কথা বলার সময় অঙ্গভঙ্গির সুন্দর ব্যবহার করা।
- একটি ভালো কণ্ঠস্বর সুস্বাস্থ্য থেকে আসে তাই সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া।
- কথা বলার সময় কল্পনা শক্তির ব্যবহার করা।
- বক্তব্যের ভিত্তি বক্তার যুক্তি শক্তির ওপর নির্ভর করে তাই যুক্তি নির্ভর কথা বলা।