দেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল, ২০২৩’ পাস হয়। এ বছর ৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ প্রজ্ঞাপন দ্বারা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয় । কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থাপিত হবে এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে দেশের যেকোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। কর্তৃপক্ষ ১ জন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। নির্বাহী চেয়ারম্যান কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন।
দায়িত্ব ও কার্যাবলি
- সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।
- সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায় চাঁদাদাতাগণের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ।
- সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ, স্কিমে প্রবেশ যোগ্যতা ও শর্তসমূহ নির্ধারণ, অনুমোদন, স্কিম পরিচালনা, তত্ত্বাবধান এবং পেনশন তহবিলের পুঞ্জীভূত জমার বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা
আরো পড়ুন
- সাধারণের জন্য খুলছে বঙ্গভবন
- নরসিংদীর ইমরান নাসার গবেষক
- প্রয়াত সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন
- জাতীয় গ্রিডে বাঁশখালীর বিদ্যুৎ
- একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন
- হাওরে উড়ালসড়ক
- নতুন জাত সুবর্ণ মুরগি
- জাতিসংঘের ৩ সংস্থার সহ-সভাপতি
- চাঁদাদাতাগণের অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রতিকার প্রদান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রবিধান প্ৰণয়ন
- কৰ্তৃপক্ষ স্বয়ং অথবা অপর কোনো কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন বা এ বিষয়ে কোনো গবেষণার নিমিত্ত তথ্য সংগ্রহ বা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা
- সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীগণের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ
- সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ফি বা অন্যান্য চার্জ নির্ধারণ।
- নির্ধারিত স্থান ও সময়ে, হিসাব সংরক্ষণ বহি ও অন্যান্য দালিলিক কাগজপত্র প্রকাশ
- পেনশন তহবিলের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা বিরোধ নিষ্পত্তি বা অনিয়ম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ।
তহবিল
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিল নামে কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে এবং তাতে যে সকল অর্থ জামা হবে তা হলো—
- সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান
- এ আইনের অধীন আদায়যোগ ফি ও চার্জ
- কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সেবা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ
- সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহীত ঋণ
- অন্য কোনো উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ।
ব্যবস্থাপনা
সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে সকল বৈশিষ্ট্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করবে তা হলো—
- জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স হতে ৫০ বছর বয়সি সকল বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছর ঊর্ধ্ব বয়সের নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং অংশগ্রহণের তারিখ হতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স হতে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।
- একজন চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান-সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাবার যোগ্যতা অর্জন করবেন এবং চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন প্রদান করা হবে।
- বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণ এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
- প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে, যা বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।
- কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত হবে।
- মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতে জমা প্রদানের সুযোগ থাকবে ।
- মাসিক চাঁদা প্রদানে বিলম্ব হলে, বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে পেনশন হিসাব সচল রাখা যাবে এবং উক্ত বিলম্ব ফি চাঁদাদাতার নিজ হিসাবে জমা হবে।
- পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
- চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
- চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০% ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে, যা ধার্যকৃত ফিসহ পরিশোধ করতে হবে এবং ফিসহ পরিশোধিত অর্থ চাঁদাদাতার নিজ হিসাবে জমা হবে ।
- নিম্ন আয়সীমার নিচের চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করতে পারবে।
- সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত, সরকারি ও আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতা-বহির্ভূত থাকবে ।