১৭ মার্চ ২০২৩ ICC রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ইউক্রেনে ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধাপরাধে জড়িত রাশিয়া জাতিসংঘের তদন্ত দলের এমন অভিযোগের ঠিক একদিন পরেই এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
যুদ্ধাপরাধ
যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে কোথাও যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত চলাকালে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বেসরকারি জনগণকে খুন, লুণ্ঠন ধর্ষণ; কারাগারে অন্তরিন ব্যক্তিকে হত্যা, নগর, বন্দর, হাসপাতাল কোনো ধরনের সামরিক উস্কানি ছাড়াই ধ্বংস, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করা ইত্যাদি। গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, আগ্রাসন চালানোর অপরাধ প্রভৃতি বিষয়ে সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
রোম চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) সৃষ্টি করা হয় । যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অপরাধের বিচারের জন্য ১৭ জুলাই ১৯৯৮ জাতিসংঘের সম্মেলনে রোম সনদ গৃহীত হয় এবং তা প্রয়োজনীয়সংখ্যক দেশের অনুসমর্থনের পর ১ জুলাই ২০০২ থেকে কার্যকর হয়। ICC স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকে। ICC’র বর্তমান সদস্য দেশ ১২৩। সনদের বিধান অনুসারে সদস্য দেশগুলো আদালতের অনুরোধ ও আদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য দায়বদ্ধ।
আরো পড়ুন
- ২০২৩ সালের মার্চে আমরা যাদের হারিয়েছি
- স্বল্পোন্নত দেশবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন ২০২৩
- ভুটান-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি
- সাম্প্রতিক ৫০টি এমসিকিউ সাধারণ জ্ঞান এপ্রিল ২০২৩
- কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এপ্রিল ২০২৩ || Current Affairs April 2023
ICC’র রোম সনদে শুধু রাশিয়া নয়; যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ ও উদীয়মান শক্তি অনুসমর্থন দেয়নি। সদস্য নয় যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনও। ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব। তবে ICC’র আদেশের পরিণতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাশ্চাত্যের কোনো দেশে ভ্রমণ হয়তো অসম্ভব হবে।
কোন ধরনের ব্যক্তির বিচার হয়
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও বিচারে অভিযুক্ত যেকোনো অপরাধীর বিচার করতে পারে ICC, যার মধ্যে ICC’র সদস্য দেশ এবং সদস্য বহির্ভূত দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। এ আদালত বিশেষ করে ব্যক্তির বিচার করে থাকে, দেশ নয়। অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করে না ICC অর্থাৎ, অভিযুক্ত পুতিনের বিচার নিশ্চিত করতে চাইলে তাকে আগে যেকোনোভাবে গ্রেপ্তার করতে হবে। এদিক থেকে দেখলে পুতিন যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন ICC’র বিচারকাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব।
অপরাধের বিচার
ICC ১৮ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত, যাদের কাজের মেয়াদ ৯ বছর। বিচারকেরা চার ধরনের অপরাধের বিচার করে থাকেন। এগুলো হলো— গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, অযাচিত আগ্রাসন চালানোর অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ।
তদন্ত-বিচারে সময়
সাধারণত ICC’র তদন্ত বেশ ধীরগতির। ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কথা মাথায় রেখে বিচার কার্যক্রম চলে ধীরে ধীরে। যেমন-ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রথম আগ্রাসন চালানোর প্রাথমিক তদন্ত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল (এপ্রিল ২০১৪-ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত)। কিন্তু পরবর্তীকালে কোভিড-১৯ মহামারি কারণে তা ঝিমিয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, যুদ্ধাপরাধের প্রশ্নে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহল অনেকটা একাট্টা। ফলে এক্ষেত্রে আদালত ভিন্ন ধারায় কাজ করার ক্ষমতা লাভ করতে পারে।
ICC’র বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়েই ICC গঠনের রোম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। তবে দেশ দুটির কেউই ICC’র সদস্য নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিষয়ে ICC’র একটি রায়কে ‘জঘন্য’ হিসেবে অভিহিত করে ICC থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ২০০০ সালে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্টদের কেউ এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে সামনের দিকে আগায়নি।